মোঃ জান্নাতুল নাঈম বগুড়া শিবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ শিবগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, বগুড়ার শিবগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও জমি পেয়ে হাসি ফুটেছে ৪৪০টি দরিদ্র পরিবারের মুখে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ২টি বেডরুম, ১টি টয়লেট ও ১টি রান্না ঘর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর গৃহহীন প্রান্তিক ও অতি-দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ অনুধাবন করে তাদের পুনর্বাসনে ‘আশ্রয়ণ’ নামের যে প্রকল্পের স্বপ্ন দেখেছিলেন, আজ তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
আশ্রয়ণের জন্য গৃহীত প্রকল্প এলাকায় আশ্রয়হীন মানুষের কর্মসংস্থানে তথা হাঁস-মুরগি পালন, মৎস্য চাষ, গবাদিপশু পালন, তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য স্কুল, মক্তব, মাদ্রাসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ, পানি, রাস্তাঘাটসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। গৃহহীন, আশ্রয়হীন মানুষের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে মূলত দরিদ্র পরিবারের নারী, শিশুদের বঞ্চনার অনেকাংশেই অবসান হয়েছে।
শিবগঞ্জ বিভিন্ন ইউনিয়নের আশ্রায়ন প্রকল্পে সরেজমিনে গেলে কথা হয় প্রকল্পের বাসিন্দা মনিকা বেগম, জেসমিন বেগম(২৬) ও নুরনাহার বেগমের (২৭) সাথে। দেখা যায় তারা তিনজন মিলে আশ্রায়ন প্রকল্পের একটি ঘরের বারান্দায় নকশিকাঁথা সেলাইয়ের কাজ করছে। তারা জানায়, রকম ভেদে প্রতিটি নকশিকাঁথা এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এক মাসে ১/২টি নকশিকাঁথা বুনতে পারি।
মনিকা বেগম জানায়, আমার স্বামী অটো চালক। আমি নকশিকাঁথা সেলাই করে ও ছোট্ট মুদির দোকান করে বেশ ভালোই আছি। পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় চাষ করছি বিভিন্ন জাতের শাক-সবজি। এ আশ্রয়ন প্রকল্পে ৪০টি ঘর আছে। যার মধ্যে ১১টি হিন্দু পরিবার ও ২৯টি মুসলিম পরিবার। এ আশ্রায়ন প্রকল্পের বাসিন্দা শেফালী বালা বলেন, আমার ঘরের বেশ কয়েকটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ঝড় ও বৃষ্টিবাদল আসলে দুই সন্তান নিয়ে ঘরে থাকতে খুব ভয় লাগে। সরকার আমার ঘরটি সংস্কার করে দিলে সন্তানদের নিয়ে নির্ভয়ে বসবাস করতে পারতাম।
সরেজমিনে বিহার ইউনিয়নের পারলক্ষ্মীপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে পরিলক্ষিত হয় ৩০টি পরিবার নিয়ে এ আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে উঠেছে। দিনমজুর, রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, টিউবওয়েল মিস্ত্রি, অটোচালক ও তাঁতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে এ আশ্রায়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা।
এখানকার বাসিন্দারা জানায়, ঘর পাওয়ার আগে বর্ষা ও শীতকালে আমাদের সীমাহীন দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে হতো, কারণ আমরা তখন কার্যত খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতাম। প্রধানমন্ত্রীর থেকে পাওয়া বিনামূল্যে ‘উপহার’ হিসেবে এক টুকরা জমি ও বাড়ি আমাদের মতো আশ্রয়হীন মানুষকে খুশি করেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প আমাদের পরিবারের জীবনধারাকে বদলে দিয়েছে, কারণ বাড়িটি আমাদের জীবিকার উৎস এবং সেইসাথে পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটেশনের মতো অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তৈরি করেছে। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ওলিমন বেগম জানান, আগে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। আমি ও আমার স্বামী তাঁতের কাজ করে জীবিকা র্নিবাহ করি। প্রতিমাসে ৬০ থান গামছা তৈরী হয় আমাদের তাঁতে। তৈরীকৃত গামছা উপজেলার বিভিন্ন হাটে পাইকারী বিক্রি করে যা পাই তা দিয়ে বেশ ভালোই চলছে আমাদের সংসার। কাঠমিস্ত্র আতিকুর রহমান বলেন, আমাদের ছোট সংসার। কাঠমিস্ত্রির কাজ করে দিনে যা রোজগার করি তা দিয়ে সংসার বেশ ভালোই চলছে। এখানকার বাসিন্দারা আরও জানায়, যাতায়াতের জন্য রাস্তার ব্যাপক সমস্যা রয়েছে।
মাঝিহট্ট ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সাথে। তারা জানায়, এ আশ্রায়ন প্রকল্পে ২১টি ঘর আছে। যার মধ্যে মুসলিম পরিবার ১৭টি ও হিন্দু পরিবার রয়েছে ৪টি। আমাদের সন্তানেরা এখন স্কুলে যায়, আমাদের আবাসনে ডিস লাইনের সংযোগও আছে। এই আশ্রায়ন প্রকল্পের বাসিন্দা শিরিন বেগম জানান, আমি ছাগল পালন করে সংসার চালাই। পাশাপশি আমার স্বামী একজন অটো চালক। বসবাসকারি বাসিন্দারা জানান তাদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ভাবে চললেও যাতায়াতের জন্য রাস্তা ও পানির সমস্যা।
সার্বিক বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, শিবগঞ্জ শতভাগ গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত উপজেলা। প্রতিটি বাড়ি যেন জীবিকা নির্বাহের উৎস। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তা-চেতনার সুফল ভোগ করছে গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষ। চলাচলের সমস্যার বিষয়টি অতি দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। দু’একটি ঘরের যে সমস্যা আছে তা দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মানবিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দরিদ্র, গৃহহীন পরিবারের নারী ও শিশুরা নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা পেল। মূলত ঠিকানাবিহীন, আশ্রয়হীন এবং গৃহহীন মানুষের জন্য আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করায় শতশত নারী ও শিশু এখন অনেকটাই নিরাপদে জীবনযাপনের সুযোগ পেল। মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলো এখন অনেক খুশি।
Leave a Reply