মুহাঃ মোশাররফ হোসেন,
কবি, লেখক ও সভাপতি প্রাণের মেলা জাতীয় কবি পরিষদ।
মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে একটা সুন্দর স্বনির্ভরশীল দেশ গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলশ্রুতিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে আজ স্মার্ট বাংলাদেশে রুপান্তিত হচ্ছে। পরিতাপের বিষয় দেশ যত উন্নত হচ্ছে তত বাড়ছে দুর্নীতিবাজদের সংখ্যা। বন্ধ হচ্ছে না বা বন্ধ করা যাচ্ছে না দুর্নীতি। লক্ষণীয় বিষয় ব্যাংক কেলেঙ্কারি, ঋণ জালিয়াতি, ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারের মতো দুর্নীতির ঘটনা দেশের অর্থনীতিতে কালো ছায়া ফেলেছে। অতি কষ্টের সহিত লিখতে হচ্ছে, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি গরিব-দুখী মানুষের প্রিয় নেতা শেখ মুজিব বলেছিলেন, ‘অন্যেরা পেয়েছে ‘সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি’ আমরা তো সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রেখে যাওয়া উক্তির দেশে বসবাস করছি! আমাদের ভিতরে লোভ-লালসা হিংসা-বিদ্বেষ, অহমিকায় জর্জরিত.? যেখানে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এদেশকে একটি স্বয়ংসম্পন্ন দেশে রূপান্তিত করবার লক্ষে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। অথচ এই দেশের উন্নয়নে চাকা থামিয়ে দিতে একদল লোক রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে ক্ষমতায় থেকে দেশের অর্থ লোপাট করছে। এদের কারণে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ধস নেমেছে আজ। গৃহীতা ব্যাংকে টাকা পাচ্ছে না, ব্যাংকে টাকা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক ঢোকাতে বাঁধা! যাদের হাতে রাষ্ট্র নিরাপদ থাকে, মানুষের জানমাল নিরাপদ থাকে আজ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দুর্নীতির। কথায় আছে না রক্ষক যখন ভক্ষক। দেশটা ভালো নেই। ভালো নেই দেশের খেটে খাওয়া মানুষ। ভালো আছে যারা দুর্নীতি করছে, তারা বিলাসিতা জীবন যাপন করছে। সাবেক সেনাপ্রধান এবং পুলিশপ্রধান এই দুজনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে, তা খুবই দুঃখজনক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তাঁরা যেসব কাজকর্ম করেছেন, বিশেষ করে সাবেক আইজিপি, তাঁর বিরুদ্ধে তথ্যগুলো যেভাবে এসেছে, তাতে মনে হয়, এগুলো মিথ্যা নয়।
জেনারেল আজিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবমূল্যায়ন হয়েছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপর জনগণের আস্থা কমেছে। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গিয়ে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে বেনজির। তিনি ক্ষমতায় থাকতে রাজনৈতিক নেতার মতো বক্তব্য রেখেছেন যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘাটলে এখনো পাওয়া যাবে। সরকারের পক্ষে কাজ করে এভাবে দুর্নীতি করার অবারিত সুযোগ পেয়েছে। এখন প্রকাশ পাওয়াতে সরকারের পক্ষে বা দুদকের তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে তদন্ত হচ্ছে। এ ধরনের আরও অনেক সরকারি আমলা, রাজনৈতিক নেতা আছেন, যাঁরা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। বেনজির চাকরিতে থাকাকালে পুলিশের বেশ কিছু মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারও পেয়েছেন। পাঁচবার পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) লাভ করেন তিনি। চাকরিতে থাকাবস্থায় সর্বোচ্চ করদাতার সম্মান পেয়েছিলেন তিনি। তখন যদি তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা যেতো তাহলে চাকরি অবস্থায় তার দুর্নীতির উৎস কোথায় তা বেড়িয়ে আসতো। তখন সরকার তাকে একের পর এক পদক দিয়েছে। সরকার কি তখন যাচাই-বাছাই করেননি। এই খবরগুলো পড়ে আমি বেশ লজ্জিত হচ্ছি। এরা এত নিকৃষ্ট বিবেকহীন হয় কি করে .? এটা সাধারণ জনগণের প্রশ্ন? এদের মতো আইনের রক্ষকদের ক্ষমতার মসনদে আমরাই বসিয়েছি। তেমনি চোরাচালানের টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বে কলকাতায় খুন হওয়া এমপি আনোয়ারুল আজীমকে সংসদে যাওয়ার পথ করে দেওয়ার দায় আমাদের। একজন চোরাকারবারি কীভাবে এমপি হয়ে যান! তাকে যারা বাছাই করে এমপি বানিয়েছিলেন, এই দায় তাদেরও। এমপি আনার একাই নয় চোরাচালান মাদক পাচারের, এখানে রাজনৈতিক দলের সাবেক ও বর্তমান বেশকিছু এমপিও জড়িত। ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার থেকে এমপি পর্যন্ত একশ্রেণির জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা জড়িত। যে সরকার ক্ষমতায় সেই সরকারের রাজনৈতিক দলের নেতারা স্বর্ণ চোরাচালান, হুন্ডি ব্যবসা ও মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ করে। এমপির খুব কাছের লোক যারা তাকে তার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ফায়দা নিয়েছেন তাদের হাতেই মৃত্যু ঘটেছে। তার মৃত্যু খুব নির্মম এবং মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যু দেহটাকে ছিন্ন ভিন্ন করে কেটেছে খুনিরা। এমন মৃত্যু কারো জন্য কাম্য নয়। তার মেয়ের আর্তনাদ দেখে খারাপ লাগছে। মানুষ এত নিষ্ঠুর বিবেকহীন কি করে হয়? মানব জাতিকে সর্বোচ্চ জ্ঞান বুদ্ধি বিবেচনা দিয়ে এই সুন্দর ধরিত্রীতে পাঠিয়েছেন ক্ষণিকের জন্য।আমরা এই ক্ষণস্থায়ী জীবনটাকে পৃথিবীতে স্থায়ী মনে করে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। ফলে দিন দিন দুর্নীতি হত্যা ধর্ষণ বিভিন্ন অপকর্ম বেড়েই চলছে। এত অর্থ সম্পদ অবৈধভাবে উপার্জন করে কি হবে.? এমপি আনার মৃত্যুর পরে এক টুকরো মাটি ও পাননি। খুনিরা মৃত্যু দেহকে ৮০ টুকরো করে গায়েব করেছে। কত ভয়ংকর; কতটা অমানবিক।
দেশবাসীর জীবনমানের উন্নয়নের সঙ্গেও দুর্নীতি প্রতিরোধের একটা বড় সম্পর্ক রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের ভাবমূর্তি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে দ্রুত। তা-না হলে দেশে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। আমরা বাঙ্গালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শ এবং ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন করেছি। সেই দেশে এমন অত্যাচার, খুন, গুম, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, আমলাতন্ত্র দেশ আমরা চাই না। আমরা চাই নিজের দেশে স্বাধীনভাবে চলতে, স্বাধীনভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে। সুদ, ঘুষ, খুন, গুম বন্ধ করে একটি সুন্দর, স্বয়ংসম্পন্ন ডিজিটাল বাংলাদেশকে দেখতে চাই।
Leave a Reply