আমরা যারা আল কোরআন ভিত্তিকসহ আল কোরআনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ধর্মীয় রাজনীতি করি তাঁরা কি নিজ নিজ ধর্মীয় গ্রন্থের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করি এবং যে কথা সভা—সমাবেশে বলি ও ওয়াদা করি তার সাথে মিল রেখে কাজ করি কিনা সেই বিষয়গুলি অবশ্যই চিন্তার খোরাক হতে হবে। আমরা যারা মানব রচিত রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সংগঠনের সংবিধানের আলোকে কথা বলি তাঁরা কি সেই সংবিধানের আলোকে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মাঝে কাজ করি কিনা এবং দিক নির্দেশনা মোতাবেক চলি কিনা সেই বিষয়গুলিও চিন্তার খোরাক হওয়া উচিত। আমরা যে ওয়াদাগুলো এবং ইবাদত করি সে ওয়াদাগুলো বাস্তবায়ন করি কিনা এবং ইবাদতের সাথে মিল আছে কিনা সেগুলো গবেষণার খোড়াক হওয়া অতিব জরুরী। যেই লক্ষ্যে মহান স্বাধীনতা অর্জন করা হয়েছে, স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কি সেই লক্ষ্যের বাস্তবায়ন হয়েছে, সেই বিষয়গুলো সামনে রেখে কাজ করা দরকার আছে। আওয়ামী লীগ সরকারকে সে হিসেব করে মহান মুক্তিযুদ্ধের যথাযথ চেতনার আলোকে কাজ করে, মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব ও জাতির কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণ করে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির প্রমাণ যথাযথভাবেই রাখতে হবে। আজকের বাংলাদেশ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয়েছে এবং আমার পিতা মৃত— মোঃ সেকান্দার আলী সরদার, ১৯৭১ সালে গঠিত ১নং রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়ন কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা বরিশাল সদর, জেলা বরিশাল ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এরও মতামত অনুযায়ী বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে গড়ে তোলার এবং জাতিকে যুদ্ধমুখী করার মহান নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব। ১৯৭১ সালের রক্তাক্ত ইতিহাস কেন সৃষ্টি করার প্রয়োজন ছিল। কারণ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসনামলে, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ছিল নানামুখী বৈষম্যতার শিকার। যার মধ্যে অন্যতম বৈষম্যতা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রতি অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, নির্যাতন ও অবিচার করা। শিক্ষায় অবনতি ঘটানোর জন্য, পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদিত কাগজসহ শিক্ষার বিভিন্ন উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি করা এবং পশ্চিম পাকিস্তানীদের কাছে সস্তা দামে বিক্রি করে, তাদের সুবিধা আদায় করে নেওয়া। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের উন্নয়ন কেড়ে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানীদের উন্নয়ন সাধন করা। পাশাপাশি পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রতি চাকুরীর ক্ষেত্রে বৈষম্যতা এবং যারা চাকুরী করতেন তাদেরকে নানামুখী চাপে রাখা। যাহাতে বাঙালি জাতির পক্ষে শক্তভাবে দাঁড়াতে না পারে। মুসলমান হয়ে মুসলমানদের প্রতি বৈষম্যতা মেনে নেওয়া কষ্টকর ও অপমানজনক বিষয়, যা সহজে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তবে একটি বিষয় হলো পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক—শোষক কিছু কিছু বিষয় বড় কঠিন অবস্থানে থাকতো। বিষয়টি হলো সাধারণ মানুষের খাদ্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি করা হলে এবং সেই সংবাদ প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে শহর থেকে গ্রামে পুলিশ গিয়ে মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতো এবং আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতো যদিও তারা সব সময় সুবিধাভোগী বেশী হতো, কিন্তু সরকারি আইন মানাতে অসৎ ব্যবসায়ীদেরকে বাধ্য করতো এবং দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী ছিল না। অন্যদিকে বৈষম্যতা ছিল মায়ের ভাষা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা ও উদুর্ ভাষায় কথা বলানোর ক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমানদেরকে বাধ্য করা। ইত্যাদি ইত্যাদি বৈষম্যতার হাত থেকে জাতি প্রয়োজনের তাগিতে মুক্তি চায়, স্বাধীনতা চায়, গণতন্ত্র চায়, বৈষম্যহীন উন্নয়ন চায়। এ জন্য প্রকাশ্যে, নেপথ্যে বাংলাদেশের অনেক নেতৃবৃন্দও সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মাঠে, ময়দানে এবং গোপনে কাজ করতেন। এই পর্যায়ে প্রয়োজন সরাসরিভাবে একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠের দুঃসাহসিক ও দেশপ্রেমিক নেতাকে সামনে পাওয়া। যিনি জাতির চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে জেল—জুলুম—অত্যাচার, হামলা—মামলা ও নির্যাতনের ভয় উপেক্ষা করে মহান স্বাধীনতা অর্জনের ও গণতন্ত্র উদ্ধারের প্রশ্নে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিবেন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করবেন, যুদ্ধের আহ্বান জানাবেন। সে প্রয়োজন মহান আল্লাহ পাক মিটিয়ে দিলেন মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে প্রকাশ্যে নামিয়ে দিয়ে এবং অগ্রভাগে রেখে নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে। অগ্রভাগের নেতাসহ বিভিন্ন পেশা ও শ্রেণির নেতৃত্বে ও মহান মুক্তিযোদ্ধাদের ৯ মাসের যুদ্ধে, ৩০ লাখ শহীদের প্রাণের ও ২ লাখের কম—বেশি মা—বোনের ইজ্জতের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে আজকের বাংলাদেশের জন্ম। দেশপ্রেমিকদের অপূরণীয় ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি ভূখন্ড, মানচিত্র ও লাল সবুজে ঘেরা জাতীয় পতাকা। প্রশ্ন হলো স্বাধীন দেশের সরকার ও প্রশাসনের কাছে জাতির যে প্রত্যাশা ছিল এবং থাকে সে প্রত্যাশার মধ্য থেকে কি এ যাবৎকাল নির্দিষ্ট একটি প্রত্যাশাও পরিপূর্ণরূপে স্বাধীন দেশের কোন সরকার ও প্রশাসন বাস্তবায়ন করে জাতিকে মহান স্বাধীনতার ফসল দিতে সফল হয়েছেন? মহান স্বাধীনতা আজ অর্ধশত বছরের উপরে পা রেখেছে। যারা ক্ষমতায় আছে, যারা ক্ষমতায় ছিল তাদেরকে হিসেব করতে হবে বাংলাদেশের জন্ম থেকে এ যাবৎকাল বাস্তবতার আলোকে জাতিকে কোন সরকার ও প্রশাসন কি উন্নয়ন উপহার দিয়ে জাতির প্রত্যাশা পূরণ করার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ অবদান রেখেছে? স্বাধীন জাতি কি বৈষম্যহীন, নাকি বৈষম্যের শিকার, ভবিষ্যৎ কি আলো না আধাঁর? রাজনৈতিক পতাকা ব্যবহার ও নেতার সহায়তায় কতজন খুনি, সন্ত্রাসী, ধর্ষণকারী, বখাটে, ডাকাত, চোর, মাদক ব্যবসায়ী, ছিনতাইকারী, পকেটমার, চাঁদাবাজ, দখলদার, অজাত জাতে উঠে শহর ও গ্রামে বিচারক হয়েছে এবং জাতের মান ক্ষুন্ন করেছে সে খবর কি কোন রাজনৈতিক দল বা সরকার রেখেছে? দেখতে হবে কারা রাজনীতি ও সমাজের সামাজিকতা ক্ষুন্নকারী এবং নানামুখী অপরাধ সৃষ্টির হোতা। প্রাণ বাচাঁতে ও অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে গড়ে তুলতে সহায়ক হচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের ঔষধ ও মানুষের খাদ্য সামগ্রী। এর ভিতরে যারা ভেজাল করে তারা অবশ্যই মানবতাবিরোধী। সুতরাং তাদের তালিকা তৈরী করে সঠিক মানের বিচার করে নজির সৃষ্টি করতে হবে। আর স্বাধীন দেশে কিশোর গ্যাংদের হাতে প্রতিনিয়ত মানুষের প্রাণ যাচ্ছে, মানুষ নানাভাবে নাজেহাল হচ্ছে, অন্যদিকে পাহাড়ী অঞ্চলে বিভিন্ন গ্রুপের অবৈধ অস্ত্রধারীরা আমাদের সেনা বাহিনীর উপরে আক্রমন করছে এবং দেশের ভিতরে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে, যা স্বাধীনতার জন্য হুমকিমুখী। সুতরাং এদের অপকর্ম চিরদিনের জন্য ঘুরিয়ে দিয়ে স্বাধীন দেশের শান্তি ফিরিয়ে এনে জাতিকে স্বাধীনতার ফসল ভোগ করার পরিপূর্ণ সুযোগ দিতে হবে।এ দায়িত্ব সরকার, প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলের, যা এড়িয়ে যাওয়া উচিত হবে না। এ ছাড়াও হিসাব করতে হবে স্বাধীনের পর থেকে কি পরিমাণ দুর্নীতি ও টাকা পাচার করে স্বাধীনতার অঙ্গীকার ও চেতনা ভঙ্গ করে ব্যক্তি ও পরিবার কেন্দ্রিক উন্নয়ন সাধন করেছে। হিসেব করে দেখতে হবে স্বাধীনের আগে ও পরে কার অবস্থা এবং অবস্থান ও সামাজিক মর্যাদা কোন পর্যায় ছিল এবং আছে। স্বচ্ছ হিসেবের উপর নির্ভর করে মহান স্বাধীনতার ফসল পাওয়া ও না পাওয়ার বিষয়টি। ক্ষমতা যারাই ভোগ করেছে তারা গভীরভাবে বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে নাই এবং যে যেভাবে পেরেছে তার লোকজনের উন্নয়নসাধন করেছে ও সহায়তা করেছে। সাধারণ মানুষকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের উন্নয়নে তেমন অবদান রাখা কারো পক্ষেই সম্ভব হয় নাই এবং সম্ভব হয় নাই দুর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা ও জাতির টাকা উদ্ধার করা। অনেক দুর্নীতিবাজের একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট ও ব্যাংক ভর্তি টাকা রয়েছে। সেগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সাধারণ মানুষদের মাঝে বিতরণ করে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অবদান রাখার পক্ষে কোন সরকার দুঃসাহসিকভাবে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে জাতিকে যথাযথ স্বাধীনতার ফসল দিতে পারে নাই। আওয়ামী লীগ গঠিত সরকার অবশ্যই মহান স্বাধীনতার প্রথম সারির দাবিদার সরকার ও রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের স্থপতি মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত। সুতরাং মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে এদেশে এ যাবৎকাল কতজন ব্যক্তি দুর্নীতি ও টাকা পাচারসহ ইত্যাদি অপরাধ করে উন্নয়নের শীর্ষে পৌছে গেছে তাদের তালিকা তৈরী করা ও অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ ও উপকারভোগী করে, মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে অবদান রাখা হবে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুঃসাহসিক ও মঙ্গলময় উন্নয়ন কামনাকারী সরকার প্রধানের দায়িত্বের অংশ। মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের অপূরণীয় স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা বজায় রেখে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হবে। আমরা যারা আল কোরআন ভিত্তিকসহ আল কোরআনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ধর্মীয় রাজনীতি করি তাঁরা কি নিজ নিজ ধর্মীয় গ্রন্থের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করি এবং যে কথা সভা, সমাবেশে বলি ও ওয়াদা করি তার সাথে মিল রেখে কাজ করি কিনা সেই বিষয়গুলি অবশ্যই চিন্তার খোরাক হতে হবে। আমরা যারা মানব রচিত রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সংগঠন সংবিধানের আলোকে কথা বলি তাঁরা কি সেই সংবিধানের আলোকে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মাঝে কাজ করি কিনা এবং দিক নির্দেশনা মোতাবেক চলি কিনা সেই বিষয়গুলিও চিন্তার খোরাক হওয়া উচিত। আমরা যে ওয়াদাগুলো এবং ইবাদত করি সে ওয়াদাগুলো বাস্তবায়ন করি কিনা এবং ইবাদতের সাথে মিল আছে কিনা সেগুলো গবেষণার খোড়াক হওয়া অতিব জরুরী। যেই লক্ষ্যে মহান স্বাধীনতা অর্জন করা হয়েছে, স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও কি সেই লক্ষ্যের বাস্তবায়ন হয়েছে, সেই বিষয়গুলো সামনে রেখে কাজ করা দরকার আছে। বিএনপি, জাতীয় পার্টি, অতীত প্রশাসনের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আওয়ামী লীগ সরকারকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে কাজ করে জাতির হৃদয়ে স্থান নিতে হবে। সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক চাহিদার প্রতি বেশি করে গুরুত্ব দিতে হবে। সাধারণ মানুষের জন্য মঙ্গলময় বিষয়গুলোর প্রতি অতীতে কোন সরকার ও প্রশাসন তেমন একটা গুরুত্ব দিতে পারে নাই। এই বিষয়গুলোর প্রতি বেশি করে গুরুত্ব যেই সরকার দিবে তার প্রতি জাতির ভক্তি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পরিমান বৃদ্ধি পাবে। ভালো কর্মফলে পাওয়া যাবে মহান আল্লাহ পাকের দয়া, করুনা ও ভালোবাসা, নেতৃত্ব দান করেন মহান সৃষ্টিকর্তা। দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা নেতৃত্ব প্রাপ্ত আলোকিত প্রতিনিধিদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের বিষয়। যে ফসল যে অর্জন করতে চায়। বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও অতীত প্রশাসনের কার্যক্রম পর্যালোচনা এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের মূল্যায়ন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে কাজ করে জাতির হৃদয়ে স্থান নিতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক
Leave a Reply