গত ৫-৬ দিনের টানা বৃষ্টি ও মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের উপকূলের চরাঞ্চলসহ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৪-৫ ফুটের বেশি জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মেঘনা নদীর ভাঙ্গনসহ অন্যান্য ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার চরকালকিনি, চরমার্টিন, চরলরেন্স, চরফলকন, পাটারিরহাট, চরজাঙ্গালিয়া, চরকাদিরা ও তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের নিচু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জোয়ার ও বৃষ্টির পানি
বৃদ্ধি হওয়ার কারণে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, ফসলি জমি, কাঁচা-পাকা ও নিচু ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়ে ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দারা। অতিরিক্ত পানিতে আউস ধান, আমনের বীজতলা ও পানের বরজ নষ্টসহ ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। হাঁস-মুরগিসহ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়ছেন গৃহস্থ ও চাষিরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মেঘনা নদীর মতিরহাট থেকে রামগতি পর্যন্ত প্রায় ৩১ কিলোমিটার তীর রক্ষা বাঁধের কাজের কোন অগ্রগতি না হওয়ায় প্রতি বছর জোয়ারের পানি ঢুকে কমলনগর সব-কয় টি ইউনিয়ন তলিয়ে যায়। এর জন্য লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন অনেকে। তাদের দাবি কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনার কারণে কাজের ধীরগতির হওয়ায় বর্তমানে এই অবস্থা রামগতি- কমলনগরে।
২০২৪ সালের আগস্টের মাঝামাঝি ফেনি,লক্ষীপুর, নোয়াখালী অঞ্চলের সাথে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কমলনগরের বিস্তৃর্ণ জনপদ। তখনকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় কমলনগরের প্রায় ৬০℅ মানুষ। সেই ক্ষত মুচতে না মুচতে আবার বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে । গত বছরের বন্যা মোকাবেলায় সরকারের নেয়া উদ্যোগের অংশ হিসেবে খাল খনন শুরু হলে সেখানে কোন অগ্রগতি হয়নি। অবৈধ দখলের কারণে সকল খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে ভুলুয়া নদীর খনন সহ সব কয়েটি খাল আজও জয়লব্ধ হয়ে আছে।
চরকালকিনি ইউনিয়নের এক নাম্বার ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য আবুল বাশার বলেন, জোয়ারের পানি ও অতিবৃষ্টির কারনে তার ইউনিয়নের সব এলাকা পানির নিচে। বর্তমান সাধারণ মানুষ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে মানুষেরও খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে।
কমলনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইউছুফ আলী মিঠু বলেন, বেড়িবাঁধের কাজ ধীরগতির কারণে বর্ষা মৌসুমে লোকালয়ে অতিদ্রুত পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এবং কমলনগরের সব-কয় টি খাল অবৈধ দখলে। দীর্ঘদিন থেকে দখল ও খাল খনন না হওয়ায় এখন খালগুলো মৃতপ্রায়। যার কারণে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এ ছাড়াও অপরিকল্পিত বসতবাড়ি নির্মানের ফলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ সব বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অশনি সংকেত দেখা দিতে পারে বলে তিনি দাবি করছেন।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাহাত উজ জামান বলেন, অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে চরকাদিরা ইউনিয়নের কিছু এলাকার ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। বন্যার আশঙ্কায় আমরা আশ্রায়ন কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করছি। এ বিষয়ে আমাদের আজ বিকেলে জরুরি মিটিং হচ্ছে।