তিন শতাধিক আমানতকারীর প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার একটি এনজিওর চেয়ারম্যানকে রশি দিয়ে বেঁধে রাখার ঘটনা ঘটেছে। ৮ জুলাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ হলরুমের সামনে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে।
অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন জগন্নাথ চন্দ্র দাস (৪৫)—“গ্রামের উন্নয়ন মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি” নামের একটি এনজিওর চেয়ারম্যান। এনজিওটির বিরুদ্ধে তিন শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে বিভিন্ন মেয়াদে আমানত সংগ্রহ করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগীদের দাবি, এক যুগ আগে উপজেলার টেপরা এলাকায় ‘গ্রামের আলো’ ও ‘গ্রামের উন্নয়ন’ নামের দুটি এনজিও গড়ে তোলেন জগন্নাথ দাস, আলম হোসেন, রজ্জব আলী এবং স্থানীয় ফলসাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী মাস্টার। তারা ঋণ, সঞ্চয় ও জামানতের নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করেন।নির্ধারিত মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত না দিয়ে দীর্ঘদিন গা-ঢাকা দেন এনজিও মালিকরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ভুক্তভোগীরা একাধিকবার মামলা করলেও তারা জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় ঘোরাফেরা করতে থাকেন।অবশেষে, ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন এবং চেয়ারম্যান জগন্নাথ দাসকে ধরে এনে রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন। এ সময় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় উলাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনিসুর রহমান আনিস বলেন,“আমার ইউনিয়নের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে দুইটি এনজিও—‘গ্রামের আলো’ ও ‘গ্রামের উন্নয়ন’—প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছে। এখন মেয়াদ শেষ হলেও তারা টাকা ফেরত দিচ্ছে না। প্রতিদিনই মানুষ আমার কাছে কান্নাকাটি করছে।”
ভুক্তভোগী একজন নারী বলেন,“আমরা মূল টাকা তো দূরের কথা, লভ্যাংশও পাইনি। কষ্ট করে জমানো টাকাগুলো হারিয়ে এখন সবাই পথে বসেছি। তাই বাধ্য হয়ে চেয়ারম্যানকে বেঁধে রেখেছি।”শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন,“বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। যাতে গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরত পান, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”সন্ধ্যার পর মানিকগঞ্জ সেনা ক্যাম্পের এক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ইউএনওর কক্ষে এনজিও চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রশাসন ও ভুক্তভোগীদের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।