বরগুনার তালতলীতে এক মাদ্রাসা শিক্ষক জাতীয় শোক পালন না করায় আওয়ামী নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে তদন্তের নামে দীর্ঘ পাঁচ মাস বেতন বন্ধ রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসুর বিরুদ্ধে। এছাড়াও একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে কিছু অসাধু শিক্ষকদের সাথে নিয়ে ভোটার জালিয়াতির মাধ্যমে আওয়ামী নেতাকর্মী নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়নের নামে অর্থলোপাটে সহযোগিতা করে তিনি। যার কারণে গনঅভ্যুত্থানের পর থেকে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসু।
জানা জায়, উপজেলায় সর্বপ্রথম আওয়ামী হাজিরা খাতা তৈরি করেন গৌতম চন্দ্র বসু। যারা ওই দিবসগুলোতে উপস্থিত না থাকে তাদের বিরুদ্ধে শুরু হয় নানা ধরনের হয়রানি। দীর্ঘ বছর ধরে অবহেলিত ওই উপজেলায় শিক্ষা অফিসার পদ শূন্য থাকায় রাজত্ব কায়েম করতে বসে। নিয়োগ বাণিজ্য সহ আওয়ামী নেতাদের সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠানিক বিভিন্ন অর্থ গায়েব করেন তিনি। আওয়ামী শাসনামলে প্রতিষ্ঠানিক প্রতিটি বরাদ্দেই তার হস্তক্ষেপের ঘটনা ছিলো বিরল। দীর্ঘ বছর ধরে তালতলী উপজেলায় আওয়ামী নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকায় গৌতম চন্দ্র বসু শিক্ষকদের জন্য এক আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠে। আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে কয়েক মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও বর্তমানে ফের আপন মনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। উপজেলা শিক্ষা অফিস তার নিয়ন্ত্রিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
দক্ষিণ ঝাড়াখালী দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মাও. ইউসুফ আলী জাতীয় শোক দিবসে প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে শোক পালন করেনি। যার ফলে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং ওলামা লীগের ইউনিয়ন সভাপতিকে সাথে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ভুয়া হয়রানিমূলক অভিযোগ দায়ের করিয়ে ৫ কর্মদিবসে চাহিত তদন্ত প্রতিবেদন দিতে ৫ মাস সময়ক্ষেপণ করে। যার ফলে ইউএনও ৫ মাস বেতন বন্ধ রেখেছিল। কড়ইবাড়িয়া দাঃ দাখিল মাদ্রাসার কমিটিতে ১২৯ ভোটের ৯৯ ভোট জাল হওয়া সত্ত্বেও সেখানে গৌতম চন্দ্র বসুর পরামর্শে আওয়ামী নেতাদের দ্বারা কমিটি গঠন করা হয়। বেগম নূর জাহান নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে জাল সনদে চাকুরী দেওয়া এবং ১৬ সালে চাকুরীতে যোগদান করা শিক্ষক শাহ্ নূর হাজানকে ২০০৪ সালে অবৈধ নিয়োগ দেখানোর কার্যক্রমের মাস্টারমাইন্ড আওয়ামী একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসু। যার কারনে ২০২৩ সালে প্রথমবার তিনি এমপিও না হলেও ২০২৪ সালে ২য় বার এমপিও হন।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা অফিসার পদ শূন্য থাকার ফলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার হাতে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিমুক্ত করতে হলে অতিদ্রুত শিক্ষা অফিসার পদায়নের পাশাপাশি একাডেমিক সুপারকে বদলি করা হোক।
তালতলী উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার গৌতম চন্দ্র বসু এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাকে অফিসে পাওয়া যায় না এটা সত্য। আমি ভিজিটে থাকি। সব সময় গলাচিপা থাকা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন আমার স্ত্রী গলাচিপা থাকার সুবাদে আমি গলাচিপা থাকি এবং সেখান থেকে এসে ভিজিট করি।
শিক্ষা অফিসার (অঃদাঃ) অলি আহাদ বলেন, যার চাকুরির নিশ্চয়তা নেই সে কিভাবে কর্মস্থলে থাকবে? তিনি তো যে প্রকল্পে চাকুরী করে ৫ ই আগস্টের পরে তার প্রকল্পের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। আর ইউসুফ আলীর বিষয়ে আমি শুনেছি তবে আমার কাছে মনে হয়েছে এটা সত্য নয়। তদন্ত পূর্বক কোনো ব্যাবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে বিষয়টি এরিয়ে যায়।