খুলনার দৌলতপুর মহেশ্বরপাশা খাদ্য গুদামের অভ্যন্তরে ভৈরব নদীর তীরে আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক খাদ্য সংরক্ষনাগার ( গমের স্টীল সাইলো) র নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটির কাজ শেষ করতে ব্যয় হয়েছে ৩৫৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশি কোম্পানী ম্যাক্স গ্রুপ এবং তুর্কির খ্যাতনামা কোম্পানী আল- তুনতাস যৌথভাবে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে খাদ্যশস্যের গুনগত মান বজায় রেখে তিন বছর পর্যন্ত গম সংরক্ষন করা যাবে এবং খাদ্য শস্যে নষ্ট হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা্যায়, আধুনিক খাদ্য সংরক্ষনাগার প্রকল্পের আওতায় খুলনায় আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক গমের স্টিল সাইলেটির নির্মান কাজ শুরু হয় ২০২২ সালের ১২ জানুয়ারি। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংক যৌথভাবে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। স্টিল সাইলোটিতে ৭৬ হাজার ২০০ মেট্রিকটন গম সংরক্ষণ করা যাবে এবং ৩ বছর পর্যন্ত গমের গুনগতমান বজায় থাকবে। কোন হাতের স্পর্শ ছাড়া সম্পুর্ন প্রযুক্তি নির্ভর ম্যাশিন দ্ধারা স্টিল সাইলোর ৬ টি ঢোল, চুল্লি বা বিনে গম সংরক্ষণ করা যাবে। প্রতিটি ঢোল, চুল্লি বা বিনের ধারণ ক্ষমতা ১২ হাজার ৭০০ টন। প্রকল্প পরিচালক ও প্রকৌশলী ওমর ফারুক জানান, স্টিল সাইলোর নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন কেবল বিদ্যুৎ সংযোগের অপেক্ষা। ওজোপাডিকো থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার পরই মেশিনারিজ টেস্টিং ও কমিশনিংয়ের কাজ শুরু হবে। তিনি জানান ১ লা জুলাই থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে প্রকল্প হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই সাইলো নির্মিত হওয়ার ফলে খুলনাঞ্চলে খাদ্য সংরক্ষণে বড় সুবিধা তৈরি হবে। বিশেষ করে দুর্যোগকালীন সময়ে নদী পথে দ্রুত খাদ্য সরবরাহ করা সহজ হবে। জানাযায়, প্রকল্পটি দুই ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অপারেশনাল এরিয়া এবং আবাসিক ব্যবস্থা ও অফিস এরিয়া। যেখানে প্রশাসনিক কার্যক্রম ছাড়াও প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের আবাসনের সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তুস্কের খ্যাতনামা কোম্পানী আল – তুনতাস সাইলোর জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহ করেছে এবং কিছু কাজও করেছে। বাকী প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ দেশিয় প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপ সম্পন্ন করেছে নিজস্ব জনবল, অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে। প্রকল্পের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ভৈরব নদীর পাড়ে জেটি নির্মান। এটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, বিশ্বমানের এই জেটির কাজটি ছিল সবচেয়ে জটিল। স্টিল পাইপ ক্যাচিং পদ্ধতিতে একেকটি ৪২ ফুট দীর্ঘ পাইপ বসিয়ে এবং কংক্রিট দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। এর পর স্নাপদিয়ে ফিনিশিং করা হয়েছে। জেটির ৯০ শতাংশ মালামাল এসেছে জার্মানি,তরস্ক, থাইল্যান্ড এবং যুক্তরাস্ট্র সহ বিভিন্ন দেশ থেকে। ব্যবহার করা প্রতিটি উপকরনের মান যাচাই করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়( বুয়েট) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্রি বিশ্ববিদ্যালয় ( কুয়েট) । নদী পথে কার্গো থেকে গম আনলোডের জন্য জেটিতে বসানো হয়েছে দুটি আধুনিক মেশিন, এর একটি বাল্কশিপ আনলোডার ও একটি ব্যাগ আনলোডার, যেগুলো জার্মানী থেকে আমদানি করা। জার্মানির টেকনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্টদের মাধ্যমে এগুলোর ইনস্টলেশন সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এধরনের প্রকল্পের কাজ সময়মতো শেষ করে হস্তান্তর করতে পারা একটি বড় অর্জন। ইতিমধ্যে প্রকল্পের গুনগত মান রেখে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, খুলনার জেলা প্রশাসক, প্রকল্প পরিচালক ও বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। খুলনা অঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, ” আমদানিকৃত গমের ৬০ শতাংশ চট্রগ্রাম বন্দরে, বাকি ৪০ শতাংশ মোংলা পোর্টে খালাস হয়। মোংলা পোর্টে স্লো খালাসের কারনে কস্টিং বেশি পড়ে। এটি চালু থাকলে লাইটার জাহাজ, এসডি, সিএসডি কস্টিং কম হবে। স্টিল সাইলোতে সংরক্ষণ করা গম তিন বছর পর্যন্ত গুনগত মান বজায় থাকবে। এ অঞ্চলের গম প্রাপ্তিতে সহজলভ্যতা হবে। খাদ্য সংরক্ষণ সুসংগত হবে। খুলনা বিভাগের ১০ টি জেলা সহ উওরবঙ্গে এবং নদী পথে বরিশাল বিভাগেও গম সরবরাহ করতে সক্ষম হবো।