প্রতিবেদক: মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা ব্যুরো :
খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে বৈধভাবে তেল উত্তোলন করা জালানী তেল রাস্তায় আসার পরই পরিনত হচ্ছে চোরাই পন্যে। খুলনা থেকে ফুলতলা পর্যন্ত বিস্তৃত একটি সংঘবদ্ধ চোর সিন্ডিকেট নিয়মিতভাবে এই তেল উত্তোলন করে বিভিন্ন স্থানে টং ঘরের আড়ালে অবৈধভাবে বিক্রি করে আসছে। বিশস্ত সুত্রে জানাগেছে, ডিপো থেকে বিভিন্ন পাম্প ও প্রতিষ্ঠানে সরবরাহের উদ্দেশ্যে পাঠানো তেল মাঝপথেই চুরি হয়ে যাচ্ছে। নির্দিস্ট কিছু স্থানে তেলবাহী লরি থামিয়ে সেখানে তেল নামিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এসব স্থানেই গড়ে উঠেছে টং দোকানের আদলে চোরাই তেলের ব্যবসা। খুলনার কয়েকটি স্থানে এমন চোরাই তেলের স্পট নিয়মিতভাবে সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো খুলনা আউটার বাইপাস সড়কের রুপসা ব্রিজের পশ্চিম পাশ থেকে শুরু করে শিরোমনি পর্যন্ত বিস্তৃত একাধিক পয়েন্ট। খুলনা- যশোর মহাসড়কের ইস্টার্ন গেট এলাকা এবং ফুলতলা বাজার সংলগ্ন ও বেজেরডাঙা অঞ্চলের বেশ কয়েকটি সক্রিয় পয়েন্ট রয়েছে। অবৈধ এসব চোরাই তেলের সাথে মেশানো হয় বিভিন্ন ভেজাল উপাদান, যা যানবাহনের ইঞ্জিন নষ্ট করছে এবং জনজীবনে বাড়িয়ে দিচ্ছে দুর্ঘটনার ঝুকি। এভাবে চলতে থাকলে জনসাস্থ্য ও পরিবহন ব্যবস্থায় ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশংকা করছেন সচেতন নাগরিকরা। অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমান রাজস্ব। আর সাধারণ মানুষ ভেজাল তেল ব্যবহার করে তাদের যানবাহন ও অর্থ উভয় দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এদিকে প্রশাসনের চোখের সামনে বছরের পর বছর এই অবৈধ ব্যবসা চললেও আজানা কারনে কেউ কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রশাসনের এই নিরাবতা তাদের ভুমিকা কতটা নিরপেক্ষ এই প্রশ্ন জনমনে সৃষ্টি করেছে ধুম্রজালের। একটি পট্রোল পাম্পের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে আরেকটি পেট্রোল পাম্প না করার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও সেসব তোয়াক্কা না করে খুলনার ইস্টার্ন গেট এলাকায় একটি পেট্রোল পাম্পের মাত্র আধা কিলোমিটার দুরেই তেল চোর সিন্ডিকেটের একটি টং দোকান রয়েছে। সেখান থেকে অবৈধ তেল ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এদেকে অবৈধ চোর সিন্ডিকেটের নিউজ করতে ইস্টার্ন গেট এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায় – ঢাকা মেট্রো – চ- ৪৪-০০২৩ নাম্বারের একটি ট্যাংকলরী গাড়ি থেকে চোরাই তেল বিক্রি করছেন কয়েকজন ব্যক্তি। এসময় নির্দিস্ট গন্তব্যস্থানে না গিয়ে এখানে তেল নামানোর বিষয় জানতে চাইলে তেল চোর সিন্ডিকেটের ঔই সদস্যরা সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এবিষয়ে কথা হয় ইস্টার্ন গেট এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেনের সাথে তিনি জানান, ইস্টার্ন গেট এলাকায় প্রতিদিনই কমবেশি গাড়ি থেকে তেল নামায়। এসব দাহ্য পদার্থ খোলা জায়গায় এমনভাবে নামানোর ফলে অসাবধনতাবশত যেকোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। খুলনা জিরো পয়েন্ট থেকে মোস্তর মোড় এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ভ্যান চালক শরিফুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গাড়ির মধ্যে সরকারি বেসরকারি গাড়ি এবং জালানী তেল পরিবহন করা ট্যাংকলরী থেকেও সবসময় কম বেশি তেল নামিয়ে অবৈধ ভাবে বিক্রি করে এসব চক্র। এদের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। এবিষয়ে প্রশসনের দৃষ্টি আর্কষন করে সচেতন মহল বলছে ” চোরাই তেল ব্যবসা ও ভেজাল মিশ্রন বন্ধে এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে, খুলনার এই তেল সিন্ডিকেট আরো ভয়াবহ আকার ধারন করবে। প্রশাসনের নিরাবতাই যেন সম্মতির লক্ষন। সচেতন মহল বলছে প্রশাসনের সক্রিয় হস্তক্ষেপই পারে এই অবৈধ চক্রের লাগাম টেনে ধরতে।
Leave a Reply