হাফিজুর রহমান: ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট সাবেক ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যে যার মত দেশ ছাড়েন । অনেকে জীবন বাঁচাতে আত্মগোপনে চলে যান । আওয়ামীলীগ বিহীন ফাঁকা মাঠ পেয়ে হালে পানি পায় বিএনপি নেতাকর্মীরা। একে একে বিএনপি তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্ষমতায় না এসেও স্বাদ পেতে শুরু করে। রাতারাতি নেতাকর্মীরা ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। অভিযোগ ওঠে দখল বাণিজ্য, চাঁদাবাজি আর থানার দালালি নিয়ে টানাটানি শুরু হয়। সারা দেশের ন্যায় সাতক্ষীরা জেলা তথা কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির মধ্যে দলীয় কোন্দল যাহা এখন প্রতিনিয়ত রূপ নিচ্ছে সংঘর্ষ ,মারামারি, হানাহানি, মামলা পাল্টা মামলায়। বিএনপি’র এমন কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ হচ্ছে কালিগঞ্জ উপজেলার সাধারণ জনগণ । বিষয়টা নিয়ে অনেক সুধী, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এ প্রতিনিধিকে জানান বিএনপি, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাপক জন প্রিয়তা লাভ করে তবে দলের কোন্দল কর্মকাণ্ডে জনসমর্থন এখন তলানিতে চলে গেছে। যার কারণে দলের বদনাম হচ্ছে । ঠিক এই সুযোগ নিচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের কঠোর বার্তার পরও থামছে না। বরং বেসামাল বিএনপি’র নেতাকর্মী সমর্থকরা উপজেলা জুড়ে আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি, দখলবাজি ,এমনকি মাদক কারবারির মত জঘন্যতম অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। গত ৫ আগস্টের পর পুলিন বাবুর হাটখোলায় অবস্থিত কুশুলিয়া গ্রামের তন্ময়ের একটি দোকান উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি রোকনুজ্জামানের নেতৃত্বে লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল লুটপাট হয়। বিষয়টি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ফলাও ভাবে প্রকাশ পেলে তাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। উক্ত বহিষ্কারাদেশ উপেক্ষা করে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব কাজী আলাউদ্দিনের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য দলের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে চলেছে। আর এই বিভেদকে কেন্দ্র করে দু, গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ঝাঁটা মিছিল করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে চলেছে। ঈদের পর হতে সাতক্ষীরা -৩ আসন অর্থাৎ কালীগঞ্জ (আংশিক), দেবহাটা, আশাশুনি নির্বাচনী এলাকার সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় ও সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সদস্য গরিবের ডাক্তার খ্যাত জনপ্রিয়তার শীর্ষে ডাঃ শহিদুল আলম বিভিন্ন সভা সমাবেশ গণসংযোগ চালিয়ে আসছে। অন্যদিকে সাতক্ষীরা-৪ অর্থাৎ কালিগঞ্জ (আংশিক) শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনে নিজের পুরানো আসন ধরে রাখার জন্য সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব কাজী আলাউদ্দিন তার নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ ও বিভিন্ন মিছিল সমাবেশ চালিয়ে আসছে। এই দুই ব্যক্তির পিছনে কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহবায়ক শেখ ইবাদুল ইসলাম সাবেক সদস্য সচিব ডাক্তার শফিকুল ইসলাম বাবু এবং সাময়িক বহিষ্কৃত থানা কৃষকদলের সভাপতি রোকনুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ আলহাজ্ব কাজী আলাউদ্দিনের সভা ও সমাবেশে থেকে অপর গ্রুপের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখলবাজি সহ বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে বিষধাগার করে চলেছে। অন্যদিকে সাতক্ষীরা- ৪ আসনের সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী না হয়েও ডাক্তার শহিদুল আলম ও গণসংযোগ মিছিল মিটিং চালিয়ে যাচ্ছে। এ গ্রুপে উপজেলা বিএনপি’র সাবেক আহ্বায়ক শেখ নুরুজ্জামান , সাবেক সদস্য সচিব বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সহ বিএনপি’র অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ যুবদলের নেতৃবৃন্দ ডাক্তার শহিদুল আলমের পক্ষে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে । এখানেও এক পক্ষ আর পক্ষের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্যে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্তিতে ফেলছে। ১১ এপ্রিল বিকেল ৫ টার সময় বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মুকুন্দ মধুসূদনপুর চৌমুহনী এলাকায় কাজী আলাউদ্দিন গ্রুপের এক ঈদ পুনর্মিলনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমাবেশে এবাদুল ইসলাম এবং ডাক্তার শফিকুল ইসলাম বাবু ও রোকনুজ্জামান গ্রুপের সভা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। পরের দিন ডাক্তার শহিদুল ইসলামের অপর গ্রুপের নুরুজ্জামান ,জাহাঙ্গীর আলম গ্রুপের নেতৃত্বে ঈদ পুনর্মিলনী ও কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । ঐদিন অনুষ্ঠান শেষে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে বহিষ্কৃত নেতা কৃষকদলের রোকনুজ্জামানের নির্দেশে তার ক্যাডার বাহিনী সাতক্ষীরা জেলা তাঁতি দলের যুগ্ন আহবায়ক মাহমুদ মোস্তফা, উপজেলা মৎস্যজীবী দলের সাধারণ সম্পাদক সফির উদ্দীন সপু, উপজেলা তরুণ দলের সম্পাদক আলমগীর হোসেন, সহ-সভাপতি আশরাফুল ইসলাম এবং উপজেলা কৃষক দলের যুগ্ন আহবায়ক নুর ইসলামকে বেধড়ক পিটিয়ে কুপিয়ে জখম করে। এর প্রতিশোধ নিতে ঐদিন রাতে প্রতিপক্ষ জাসাস শাহাজান গ্রুপকে পিটিয়ে আহত করে । ঘটনায় উভয় পক্ষের ৬/৭ জন কালিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি হয়। ঘটনায় বিএনপি’র দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি দু,টি মামলা দায়ের হয়েছে। দলের বিভেদকে কেন্দ্র করে উপজেলায় সর্বত্রে উত্তেজনা বিরাজ করছে । যে কোন মুহূর্তে বিএনপির দু, গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটতে পারে। এরমধ্যে সাময়িক বহিষ্কৃত রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবসায়ী এবং ব্যক্তির নিকট থেকে চাঁদাবাজির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এবং অনেক এলাকায় তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে অতি জরুরী জেলা বিএনপির আহবায়কসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে উপজেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ।
Leave a Reply