মোঃগোলাম মোওলা, জয়পুরহাট প্রতিনিধি: বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির একাউন্ট থেকে কৌশলে টাকা তুলে জমি ক্রয় জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা-র বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। রোববার (২৩ মার্চ) বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। তিনি উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে টাকা আত্মসাৎ করে জমি কিনেছেন, যা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।
আক্কেলপুর দারুল কোরআন মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল মান্নান হিসাব-নিকাশ করতে গিয়ে দেখতে পান, মাদ্রাসার লেনদেনের তথ্য ইসলামী ব্যাংকের দেওয়া হিসাব বিবরণীর (স্টেটমেন্ট) সঙ্গে মিলছে না। পরে জয়পুরহাট ইসলামী ব্যাংকের মূল শাখা থেকে নতুন স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করলে প্রতারণার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
মাদ্রাসার মুহতামিম ফিরোজ আহম্মেদ এজেন্ট ব্যাংকে গিয়ে ব্যালেন্স চেক করলে দেখেন, একাউন্টে ৪০ লাখ থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ২৯ হাজার টাকা! তাছাড়া আগে পাওয়া স্টেটমেন্টটিও ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়।
জানা গেছে, রহমানিয়া ভ্যারাইটি স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. জাহিদুল ইসলাম ২০১৮ সালে ইসলামী ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার অধীনে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেন। তিনি মাসুদ রানাকে ক্যাশিয়ার পদে নিয়োগ দেন।
গত ছয় মাস ধরে মাসুদ রানা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট থেকে কৌশলে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তিনি নেটওয়ার্ক সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে বারবার গ্রাহকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে তার ইচ্ছামতো টাকা তুলে নিতেন।
গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে কোনো লেনদেনের ক্ষুদে বার্তা (SMS) না পাঠানোর ব্যবস্থা করেন, যাতে কেউ টের না পায়। পরে ভুয়া স্টেটমেন্ট তৈরি করে গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করতেন।
আক্কেলপুর দারুল কোরআন মাদ্রাসার একাউন্ট থেকে ৩৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
মাদ্রাসার সেক্রেটারি ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মোমিন জানিয়েছেন, তার ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে ৪ লাখ ৭০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।
হাইটেক পৌর কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, তার একাউন্টে থাকা ৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত মাসুদ রানা স্বীকার করেছেন যে, তিনি গত ছয় মাস ধরে বিভিন্ন একাউন্ট থেকে কৌশলে টাকা সরিয়ে নিজের একাউন্টে নেন এবং তা দিয়ে বাড়ির কাছে জমি ক্রয় করেছেন।
তিনি বলেন, “মনে করেছিলাম কাউকে না জানিয়ে ধীরে ধীরে টাকা পরিশোধ করে দেব।”
এজেন্ট ব্যাংকের মালিক মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, গ্রাহকদের আত্মসাৎ হওয়া টাকা ফেরত দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইসলামী ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে, এবং অভিযুক্ত ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, “ক্যাশিয়ার অকপটে টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেছেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এই ঘটনা আক্কেলপুরের সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি বড় আর্থিক ধাক্কা। তদন্ত শেষ হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেনl
Leave a Reply