নাহিদা আক্তার পপি: দেশ ও সমাজকে বিপদ মুক্ত করার জন্য কখনো হাতে তুলেছে অস্ত্র। মাতঙ্গিনী হাজরা, লক্ষ্মীবাই প্রমুখ নারীরা তাদের দেশপ্রেম ও অদম্য সাহসের মাধ্যমে আমাদেরকে গর্বিত করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বিভিন্ন আন্দোলনে নারীরা অগ্রভূমিকা পালন করেছিলেন। তাদের দেশপ্রেমের গভীরতা ছিল অপরিসীম।সরোজিনী নাইডু, কস্তুরবা গান্ধী, সুভাষিনী চট্টোপাধ্যায়, বিদ্যুৎভারতী প্রমুখ নারীনেত্রীরা স্বাধীনতা সংগ্রামের কিংবদন্তি হয়ে আছেন। অসহযোগ আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণআন্দোলনে নারীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
মাদার টেরেসার মতো নারীরা তাদের নিঃস্বার্থ সেবার মাধ্যমে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে নীলিমা রাজ, কল্পনা চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, কল্পনা চাওলা-এর মতো নারীরা তাদের অবদানের মাধ্যমে আমাদের অনুপ্রেরণা জাগিয়েছেন, দেশকে গর্বিত করেছেন।
এছাড়াও পৃথিবীতে অসংখ্য নারীর গর্বিত কাহিনী রয়েছে যারা তাদের জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলেছেন। তাদের শক্তি, সাহস ও করুণা আমাদের অনুপ্রাণিত করে। নারীরা তাদের অসীম শক্তি ও অপার করুণা দিয়ে এই সমাজ ও জাতিকে সভ্য করার জন্য অবিরাম পরিশ্রম করে চলেছে। নারীর কাজের মাধ্যমেই আমরা সমাজে সকল ক্ষেত্রে নারী শক্তির পরিচয় পাই।
নারী মানবসমাজের অন্যতম মূল স্তম্ভ। তারাই প্রতিটি মানুষকে গড়ে তোলেন এবং সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যান। একজন নারীর ভূমিকা শুধুমাত্র মা হয়েই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সে পুরো সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। মাতৃশক্তিই হল জাতির শক্তি। বাল্যকাল থেকে শুরু করে যৌবন পর্যন্ত সমাজের প্রতিটি পর্যায়েই নারীদের অনন্য ভূমিকা বিদ্যমান।
তাদের অবদান ছাড়া কোনো সমাজ বা জাতির পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন সম্ভব নয়। সুতরাং নারীদের সকল অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
নারীরাই সন্তানদের মানবিক গুণাবলী গড়ে তোলেন। শিশুরা মায়ের কাছ থেকেই প্রথম ভালোবাসা, দয়া, সহানুভূতি শেখে। সন্তানদের চরিত্র গঠনে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। সুতরাং সমাজের মূল উপাদান হিসেবে নারীরাই সমাজের ভবিষ্যতকে গড়ে তোলেন।
নারীরা বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন। তারা আর শুধু গৃহিণী নন, বরং রাজনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিজ্ঞান প্রভৃতি সব ক্ষেত্রেই তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করছেন। সমাজের সকল স্তরে নারীর অবদান এখন আরো স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ।
এক সময় নারীরা অনেক সমস্যা ও বৈষম্যের সম্মুখীন হতেন। কিন্তু আজকের নারীরা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য প্রবলভাবে এগিয়ে এসেছেন, কখনো বৃহত্তর আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন, প্রতিবাদ করেছেন তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া নিয়ম-নিষেধাজ্ঞা গুলোকে। ফেমিনিস্ট আন্দোলনগুলি নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করছে। নারীর মুক্তি সংগ্রামই বাস্তবিক মানবমুক্তির সংগ্রাম।
নারী অধিকার আন্দোলনগুলি ধীরে ধীরে সফল হচ্ছে। বিভিন্ন দেশে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী নারীরা উচ্চ শিক্ষা লাভ করছেন এবং সমাজের নির্ণায়ক ও নেতৃত্বদানকারী ভূমিকায় আসছেন। একদিন নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণে উন্নত সমাজ গড়ে উঠবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রতিবছর ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে পালিত হয়। এই দিনটি নারীর অধিকার আন্দোলন এবং নারী মুক্তির প্রতীক স্বরূপ। নারীর ক্ষমতায়ন ও সমাজে তাদের অবস্থান উন্নয়ন করাই এই দিনের মূল উদ্দেশ্য। এই দিনে বিশ্বজুড়ে নারীদের বিভিন্ন সমস্যা এবং অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রধান গুরুত্ব হল নারী অধিকার ও নারী ক্ষমতায়নের প্রতি বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই দিনটি নারীদের অর্জন এবং অবদানকে স্মরণ করা হয়। বিভিন্ন সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি নারীদের জন্য নতুন পদক্ষেপকে তুলে ধরে।
নারী শিক্ষা, নারীর কর্মক্ষেত্র, নারী নিরাপত্তা ও নারীর অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির বিভিন্ন কর্মসূচি হয়ে থাকে। সামাজিক আন্দোলনকারীরা নারীদের অধিকার অর্জনের জন্য কর্মসূচি পালন করেন। এভাবে এই দিনটি নারী মুক্তি ও নারী অধিকার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।নারী ক্ষমতায়ন মানে হল নারীদের জন্য রাজনৈতিক, সামাজিক, আর্থিক এবং শিক্ষাগত ক্ষেত্রে সমান সুযোগ প্রদান করা। ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নারীরা তাদের অধিকার আদায় করতে পারবে এবং সমাজে সম্মানজনক অবস্থান লাভ করবে। বর্তমানে বিভিন্ন নারী আন্দোলন নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
নারী নির্যাতন রোধ ও নারীর সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য নারী ক্ষমতায়ন অতীব জরুরী। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আজও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে। হয় যৌন হয়রানি, প্রতিনিয়ত শিকার হয়।গৃহকোলাহল,গৃহকলহের এছাড়াও তাদের সমাজের কলঙ্ক যৌথ প্রথার মত কারণে জীবনসঙ্গীন হয়ে ওঠে।
শিক্ষা, আর্থিক স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরতা নারী ক্ষমতায়নের মূল চাবিকাঠি।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়নের কাজে গতি আনতে হবে।
Leave a Reply