মাদকের কড়াল গ্রাসে শুধু যুবসমাজ নয়, শিশু-কিশোর সহ নানা বয়সের মানুষ পর্যন্ত আজ জর্জড়িত। অসংখ্য কারণে একজন মানুষ মাদকের প্রতি আসক্ত হতে পারে, ডিপ্রেশন, মানষিক চাপ, বিষণ্নতা, মাদকের বড় অংশ মানষিক চাপে পড়ে শুরু করে মাদক গ্রহণ। স্কুল কলেজের বাচ্চারা কৌতুহল বসত শুরু করে এরপর ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ে। অনেক সময় মাদকাসক্ত বন্ধুদের কুপ্রভাবে ভালো ব্যক্তি মাদকের প্রতি আসক্ত হয়, ভালো ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা অসৎ সঙ্গে পড়ে মাদক সেবনের প্রতি উদ্ধুদ্ধ হয়।
মাদকের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ার কারণ হলো এর সহজলভ্যতা, আমাদের দেশে প্রায় সকল প্রকার মাদকগুলো আমাদের চারপাশেই পাওয়া যায়। মূল্য অনেকটা হাতের নাগালে। মাদকের কুফল বয়ে আনে শারীরিক ও মানষিক ক্ষতি, পারিবারিক ক্ষতি, আর্থিক ক্ষতি, সামাজিক ক্ষতি, জাতীয় ক্ষতি, আত্মিক ক্ষতি সর্বোপরি ধর্মীয় ক্ষতি।
মাদক সেবন মস্কিষ্ক ও শ্বাষতন্ত্রের ক্ষমতা ও শরীরের সূক্ষ্ম অনুভূতি কমিয়ে দেয় এবং স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয়, স্বাভাবিক খাদ্যাভাস নষ্ট করে।
যৌন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। হৃদরোগ সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
মাদক অর্থনৈতিক ভাবে বিরাট ক্ষতি করে, সম্পদহীনও করে দেয়। মাদক ক্রয়ের অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণ করতে বাধ্য হয়। ঋণের বোঝা কমাতে গিয়ে চুরি, ছিনতাই সহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পরে। পরিবারে শান্তি সম্মান নষ্ট হয়। পরিবারে অন্য সদস্যের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়। অন্য সদস্যদের মানষিক শান্তি নষ্ট হয়। বিশেষ করে মা-বাবা, মা-ই বেশীর ভাগ সময় অশান্তিতে ভোগে। সন্তান খারাপ বা অসৎ হলে মাকেই নানা কটুক্তি ও শাস্তি পেতে হয়। কোন মা-বাবা চায় না সন্তান খারাপ বা ভুল পথে চলুক। প্রত্যেকটা মা-ই চায় তার গর্ভ হোক গর্ব। কোন কলঙ্কিত গর্ভ না। প্রত্যেকটা মা অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করে এক একেকটা সন্তানকে জন্ম দেয়। পৃথিবীর আলো দেখায়, কোলে নিয়ে ভুলে যায় সব যন্ত্রনা, এক অপার্থিক আনন্দ তখন চোখে মুখে, অনেক কষ্টে বড় করে তোলে। বাবা হাস্যোজ্জ্বল মুখে অক্লান্ত পরিশ্রম করে শুধুমাত্র সন্তান ভালো থাকবে। আগামীতে সন্তান একজন সুসন্তান ও নেক মানুষ হবে এই আশায়। কিন্তু মাদকের এই মরণ থাবায় সব কষ্ট আশা ধূলিস্যাৎ করে দেয়। মাদক সেবন জাতীয় নানাবিধ শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করে, পারস্পারিক শত্রুতা ও ক্রোধের জন্ম দেয়। জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে, দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত করে তার কর্মক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।
মাদক ব্যবহার এখনই না কমালে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভয়াবহ হুমকির মধ্যে পড়বে।
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদক চোরাচালানকারীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মাদক প্রতিরোধে সরকার, সংগঠন এনজিও, শিক্ষক, ইমাম পরিবার জনপ্রতিনিধি সহ সমাজের সকল মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। বেকারদের কর্মসংস্থান করতে হবে। মাদক মুক্ত সমাজ গড়তে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে।
Leave a Reply