তাজুল ইসলাম
গত ২৯ জুলাই, ২০২৩ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অনুমতি না নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি থেকে দলটির নেতাকর্মীরা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা, বাসে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়। বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলায় অন্তত ২০জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
গত সোমবার (৩১ জুলাই) ঢাকার সাভারে আশুলিয়া এলাকায় তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও জামাতের আমির ডা. মফিকুর রহমানসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও গাড়ি ভাংচুর করে জামাতের আশুলিয়া থানা কমিটি। সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটার খবর পেয়ে সেখানে হাজির হয় পুলিশ। পুলিশ উপস্থিত হলেই একাধিক ককটেল বিস্ফোরণ করে পালিয়ে যায় বিক্ষোভকারীরা। বিস্ফোরণ হামলায় পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর চলমান সরকার পতনের আন্দোলনে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর এমন হামলার ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। আন্দোলনের নামে বিএনপির উশৃঙ্খল নেতা-কর্মীরা রাস্তা বন্ধ করে যানবাহন চলাচল ব্যাহত করছে, গাড়ী ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করছে। সহিংস আন্দোলনে জননিরাপত্তা ব্যাহত হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা পুলিশ নিশ্চয় বসে বসে মার খাবে না। জানমালের নিরাপত্তায় আন্দোলনকারী উশৃঙ্খল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এটা খুবই স্বাভাবিক।
বিএনপি ও সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সরকারী বাহিনী তথা পুলিশ বিনা উস্কানিতে তাদের নেতা কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করছে। জনসমাবেশ ও আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করছে। কিন্তু বিএনপির ২০০৯, ২০১৩, ২০১৪ সালের ঘৃন্যতম অগ্নিসন্ত্রাসের ইতিহাস কেউ ভুলে যায়নি। যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে মানুষ হত্যার রেকর্ড একমাত্র তাদেরই রয়েছে।
বর্তমান সময়ে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, সরকার পতনের একদফা আন্দোলনেও বিএনপি-জামাত একই কায়দায় অগ্নিসন্ত্রাস, পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশ ও সরকারী অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জননিরাপত্তার স্বার্থে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। অথচ এই বিষয়টাকেই সরকারবিরোধী মুষ্ঠিমেয় কিছুলোক সরকারের বিরোধীতা করতে গিয়ে পুলিশের ওপরেই দোষারোপ করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এদের সাথে যোগ হয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের কয়েকটি গণমাধ্যম ও হাতেগোনা কয়েকজন কুটনৈতিক।
এর আগে ঢাকা-১৭ আসনের উপ নির্বাচনে এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সহ ১৩টি দেশের কুটনীতিকরা যৌথবিবৃতি প্রদান করে। কিন্তু সম্প্রতিকালে বিএনপি’র মহাসবাবেশ হতে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান করে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো, বাসে আগুন দেয়াসহ পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় কোন কুটনীতিক একটা শব্দও উচ্চারণ করেনি।
গতকাল ফ্রান্সে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির প্রস্তাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারন মানুষের অংশগ্রহনে চলমান আন্দোলনে তারা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। আন্দোলনকারীরা গাড়ী ভাংচুর ও গাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করেতে টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে এবং বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। ফ্রান্সে এখন কি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়নি? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবিষয়ে তো কোন বিবৃতি দেয়নি। অথচ একই ঘটনা বাংলাদেশে ঘটলে তারা বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিতো। পশ্চিমাবিশ্ব বরাবরই বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর বিষয়ে তারা একটু বেশিই আগ্রহী। যার উদাহরণ আমরা অতীতে আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ অনেক দেশেই দেখেছি।
২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দফতর হতে গুরুতর মানবাধিকার লংঘন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের দায়ে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (RAB) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়-‘বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে যে র্যায়ব এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০ টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, ৬০০-র বেশি লোকের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া এবং নির্যাতনের জন্য দায়ী।’
আরো বলা হয়,‘বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় র্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের ব্যাপক অভিযোগ- আইনের শাসন, মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের জনগনের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে হেয় করার মাধ্যমে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলেছে।’
RAB ওপর চলমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রতিত্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বাহিনীর মুখপাত্র মিডিয়া সেলের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান-‘র্যাব মানবাধিকার লুন্ঠন করেনি, বরং রক্ষা করে চলছে। মানবাধিকার রক্ষায় র্যাবের ৯ হাজার সদস্যের যে ফোর্স, সেই ফোর্সের লেফটেন্যান্ট কর্নেল আজাদ সহ ২৮ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন। মানবাধিকার রক্ষায়, আইন শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে এক হাজারের বেশি সদস্যের অঙ্গহানি হয়েছেন। আমাদের দুই হাজারের বেশি সদস্য বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন। র্যাবের সাফল্যের কারনে দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস এখন শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। RAB’র চলমান বিভিন্ন অপারেশনের কারনে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে।’
RAB-কে এলিট ফোর্স হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এই বাহিনীর নিজস্ব আইন শৃঙ্খলা রয়েছে, তা অত্যন্ত কঠোরভাবে পালন করা হয়। এখানে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’
উল্লেখ্য ২০১৪ সালে নারায়নগঞ্জের আলোচিত কাউন্সিলর নুর হোসেন খুনের মামলায় অভিযুক্ত RAB কর্মকর্তাসহ সবাইকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়। ওই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত RAB কর্মকর্তা তারেক সাঈদ বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী একজন সাবেক মন্ত্রীর জামাতা । সেনা কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রীর জামাতা হওয়া সত্বেও RAB সদস্য তারেক সাঈদের মৃত্যুদন্ড বহাল থাকায় এটা প্রমানিত যে র্যা ব কর্মকর্তা বাংলাদেশে আইনের ঊধ্বে নয়।
Leave a Reply