টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম নগরজুড়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ৯ জুলাই সকাল সাড়ে নয়টার পর থেকে শুরু হওয়া একটানা বৃষ্টিতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র জলাবদ্ধতা। এতে করে দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। বড়পোল, আগ্রাবাদ, চকবাজার, মেহেদীবাগ, কাপাসগোলা—এসব এলাকায় হাঁটুপানি জমে সৃষ্টি হয়েছে চরম ভোগান্তি। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে তৈরি হয়েছে দীর্ঘ যানজট, ট্রাফিকের গতি হয়েছে ধীর। এতে অফিসগামীদের যেমন সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্যেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব।
বিশেষ করে মেহেদীবাগ রোড ও আশপাশের গলিগুলোতে হাঁটুপানি জমে গেছে। এতে ওই এলাকার স্কুলগামী শিক্ষার্থী, অফিসযাত্রী ও দোকানদাররা পড়েছেন চরম দুরবস্থায়। তবে কিছুটা স্বস্তির খবর হলো—নগরের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার পরিচিত এলাকা মুরাদপুর, শোলকবহর ও বহদ্দার হাটে এবার তুলনামূলকভাবে পানি জমতে দেখা যায়নি।
মেহেদীবাগ মোড়ে আটকে পড়া পথচারী মেহজাবিন আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে অফিসে যাই। এক হাঁটু পানির মধ্যে স্কুলে নিয়ে যেতে হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে রাস্তায় কোনো রিকশাও ছিল না।’
আরেক বাসিন্দা মাকসুদ বলেন, ‘নগরে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। তাই সবাই সিটি কর্পোরেশনের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর সিটি কর্পোরেশনও একদিকে কাজ বেশি দেখাতে গিয়ে, অন্যদিকে কাজই বন্ধ করে দিয়েছে। এজন্যই হয়তো মেহেদীবাগে পানি উঠেছে। নয়তো আমি কখনো এ এলাকায় পানি উঠতে দেখিনি।’
যানজটে আটকে পড়া আগ্রাবাদ এলাকার যাত্রী সত্য বড়ুয়া বলেন, ‘দুপুর ১২টায় ইম্পোর্টের স্যাম্পল নিয়ে বালুছড়ায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে কোনো গাড়িই পাচ্ছিলাম না। আধা ঘণ্টার বেশি দাঁড়িয়ে থেকে একটা গাড়িতে উঠতে পেরেছি। কিন্তু শেখ মুজিব রোডজুড়ে হাঁটু পানি জমে আছে, সেই কারণে এখন চৌমুহনীতে যানজটে আটকে আছি।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নগরে ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, বুধবার সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃহস্পতিবার থেকে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘নগরের কিছু জায়গায় রাস্তা উঁচু কিন্তু লিংক রোডগুলো নিচু। এসব জায়গায় ড্রেনগুলো বারবার পরিষ্কার করেও লাভ হচ্ছে না। মেয়র স্যারও এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে এসব রাস্তাগুলো একই লেভেলে আনতে হবে—এটা নিয়ে কথাবার্তা চলছে। আপাতত যেখানে পানি জমার শঙ্কা বা সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেসব এলাকার ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে।’