দখল পাল্টা দখলে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি। অনুমোদিত ট্রাস্টি না হয়েও নিজেকে বোর্ডের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ” মব” তৈরি করে উপাচার্য অধ্যাপক শেখ এনায়েতুল বাবরকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। “মব” তৈরি করে রেজিস্ট্রারকে অপসারন করতে না পেরে পদটিতে বসানো হয়েছে নতুন লোক। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় দখল ঠেকাতে বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার সহ আইন শৃংখলা বাহিনীকে চিঠি দিয়েছেন ট্রাস্টি বোর্ডের পদচ্যুত চেয়ারম্যান সিরাজুল হক চৌধুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা অযাচিতভাবে যেন তুলে নিতে না পারেন এজন্য ব্যাংক গুলোতে চিঠি দিয়েছেন তিনি। খোজ নিয়ে জানাযায়, ২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর অনুমোদনের পরের বছর শুরু হয় শিক্ষা কার্যক্রম। শুরুতে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন ১৮ জন। চেয়ারম্যান খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হন সিরাজুল হক চৌধুরী। তিনি শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ” মব” তেরি করে ট্রাস্টি বোর্ডের উদ্যোক্তা সদস্যকে কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার অফিস আদেশ দেন। এরপর গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বোর্ড সভায় মিজানুর রহমানকে ট্রাস্টি সদস্য করেন সিরাজুল। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে আজিজুল হক ও সৈয়দ হাফিজুর রহমানকে ট্রাস্টি বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করেন। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হতে যৌথমুলধনী কোম্পানী থেকে নিবন্ধন প্রয়োজন। নতুন তিনজনের ক্ষেত্রে এর কিছুই করা হয়নি। এ ব্যাপারে সিরাজুল হক বলেন, ট্রাস্টি বোর্ডে আমি ছাড়া সবাই ছিলেন আওয়ামীলীগের, বোর্ডে বিএনপির লোক বাড়ানোর জন্য বিএনপি নেতার পরামর্শে নতুন তিনকে যুক্ত করা হয়। গত ২১ মে ট্রাস্টি বোর্ডের সভা থেকে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন মিজানুর রহমান ও হাফিজুর রহমানকে করা হয় সদস্য সচিব। এরপর থেকে সিরাজুল হককে সরিয়ে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রন নিচ্ছেন মিজানুর। এদিকে গত ১৯ জুন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে রাত ১১ টা পর্যন্ত দপ্তরে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। পরে সেনা সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে। গত ২৫ জুন সোনাডাঙ্গা থানায় জিডি করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সাহিদা খানম। এতে তিনি উল্লেখ করেন, মিজানুর রহমান ও হাফিজুর রহমান নিজেদের চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় দখলে রেখেছেন। চাপ দিয়ে বিজ্ঞাপন, ভর্তি সংক্রান্ত মার্কেটিং এর কাগজ সহ বিভিন্ন সভার নামে লাখ লাখ টাকা তছরুপ করছেন। হেয় করতেই প্রক্টর শাকিল আহমেদ ও পরিচালক লিয়াজো শেখ মারুফুর রহমানের উস্কানিতে কতিপয় শিক্ষার্থী আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এ ঘটনার দুদিন পর উপাচার্য অধ্যাপক শেখ মো: এনায়েতুল বাবর পদত্যাগে বাধ্য হন। অভিযোগ রয়েছে, খুলনা মহানগর বিএনপির এক শীর্ষ নেতার ইন্ধনে অন্য ট্রাস্টিদের পক্ষ টানতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন মিজানুর রহমান। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি ট্রাস্টি সদস্য তৌহিদুল আজাদ, সৈয়দ মোহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহ এবং পবিত্র কুমার সরকারকে আসামি করা হয়েছে বিএনপির সমাবেশে হামলার মামলায়। অথচ এ মামলায় ১৫৬ আসামির বেশিরভাগই আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ কর্মকর্তা। মিজানুরের সাথে বিরোধের বিষয়ে সিরাজুল হক বলেন, ” এক কোটি টাকা বাড়তি বিল প্রদান নিয়ে তাদের দ্ধন্ধের শুরু। আমার সই জাল করে ২১ মে সভা ডাকা হলেও বেশিরভাগ সদস্য উপস্থিত হননি। মিজানুর রহমান ট্রাস্টি বোর্ডের বৈধ সদস্য নন,তিনি কিভাবে চেয়ারম্যান হন? রাজনৈতিক মদদে বিশ্ববিদ্যালয়টি দখল হচ্ছে। বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেও প্রতিকার পাচ্ছি না। বিশ্ববিদ্যালয় দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে মিজানুর রহমান বলেন,ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সহ বেশিরবাগ সদস্য ফ্যাসিস্টদের দোসর। তাদের অনুরোধে আমি চেয়ারম্যান হয়েছি। শিঘ্রই দোসরদের দুর্নীতি প্রকাশ করা হবে। তিনি দাবি করেন, ইউজিসি আমাদের ট্রাস্টি হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। ফলে যৌথমুলধনী কোম্পানীর নিবন্ধন জরুরি নয়।