1. [email protected] : Ghoshana Desk :
  2. [email protected] : Mahir Al Mahbub : Mahir Al Mahbub
  3. [email protected] : Masud Khan : Masud Khan
তামাবিল স্থলবন্দরে ‘তিনজনের সিন্ডিকেট: প্রতি ট্রাকে ৪৫০ টাকা চাঁদা, রাজস্ব ফাঁকি মাসে ৩ কোটি টাকা - দৈনিক ঘোষণা
ব্রেকিং নিউজ :
আলফাডাঙ্গায় জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের কর্মি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেড় ঘন্টা পর রুপসা সেতুতে যান চলাচল শুরু। জৈন্তাপুরে বিজিবির ধাওয়ায় চোরাই চা পাতা বোঝাই পিকআপ জব্দ, আহত এক সৈনিক বিতর্কিত ব্যক্তির উপস্থিতি অনিচ্ছাকৃত: বিষয়টি জানা ছিল না—৪৮ বিজিবি রাঙামাটিতে কসমস হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট মালিকের বিরুদ্ধে চাকুরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ! গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকা ডুবে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু, দুই জন নিখোঁজ নলছিটিতে চাঁদাবাজ ও হকার মাইনউদ্দিনকে বিতাড়িত করার দাবিতে মানববন্ধন শেরপুরে কালের কন্ঠ মাল্টিমিডিয়ার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত শেরপুরে নালিতাবাড়ীতে ৮৩ বোতল ভারতীয় মদসহ আটক (১) নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন।

তামাবিল স্থলবন্দরে ‘তিনজনের সিন্ডিকেট: প্রতি ট্রাকে ৪৫০ টাকা চাঁদা, রাজস্ব ফাঁকি মাসে ৩ কোটি টাকা

reporter নিয়াজ খান, সিলেট :
calendar প্রকাশিত: ১ জুলাই, ২০২৫, ৩:০৮ অপরাহ্ণ

সিলেট অঞ্চলের অন্যতম প্রধান আমদানি-রপ্তানি কেন্দ্র তামাবিল স্থলবন্দরে ভয়াবহ দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির চিত্র উঠে এসেছে। এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক পাথর ও কয়লা আমদানি করলেও বন্দরের নিয়ন্ত্রণ এখন ‘তিনজনের সিন্ডিকেট’-এর হাতে চলে গেছে। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন কথিত ব্যবসায়ী নেতা ওমর ফারুক, সিএনএফ এজেন্ট নেতা আব্দুল করিম রাশেল এবং বিএনপি-ঘনিষ্ঠ ইলিয়াস উদ্দিন লিপু। এই তিনজনের নির্দেশে প্রতিটি ট্রাক থেকে ৪৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে, যার পেছনে রয়েছে একটি সুসংগঠিত দুর্নীতির জাল।

চাঁদা আদায়ের এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছেন কিছু সিএনএফ প্রতিনিধি, কাস্টমস ও পোর্ট কর্মকর্তারা। অভিযোগ রয়েছে, দিনের বেলায় ট্রাকগুলো কম ওজন দেখিয়ে রাতে অতিরিক্ত মালসহ প্রবেশ করানো হয়। শুল্ক প্রদানের বাইরে ঘোষণার বাইরের এসব মাল প্রবেশ করিয়ে প্রতি ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে, যার বড় অংশটাই যায় সিন্ডিকেটের পকেটে।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ট্রাকপ্রতি আদায়কৃত ৪৫০ টাকার মধ্যে ৩০০ টাকা কাস্টমস কর্মকর্তাদের, ৫০ টাকা পোর্ট কর্তৃপক্ষের, ২০ টাকা সিএনএফ প্রতিনিধিদের এবং বাকি ৮০ টাকা যায় স্থানীয় নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠীর হাতে। চমকপ্রদ বিষয় হলো, কাস্টমসের কোনো অফিসিয়াল পদ না থাকা সত্ত্বেও ওমর ফারুক ও লিপু এই প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, কাস্টমস অংশের মধ্য থেকেও এই দুইজন ট্রাকপ্রতি ১০০ টাকা করে আত্মসাৎ করেন।

গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে বন্দরে যান সাংবাদিক ‘রেজওয়ান করিম সাব্বির, সাইফুল ইসলাম বাবু ও নাজমুল ইসলাম। অনুসন্ধান শেষে ফেরার সময় আব্দুল করিম রাশেলের নেতৃত্বে একটি দল তাদের অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে এবং হুমকি দেয় যে, তার অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকরা বন্দর এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন না। এমনকি সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম বাবুর ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করা হয়।

এমন চাঁদাবাজি ও রাজস্ব ফাঁকির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি অভিযান চালিয়েছে তামাবিল বন্দরে। ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি, দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত দুদক সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদারের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল এই অভিযান চালায়। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বন্দরে প্রতি মাসে সরকারকে প্রায় ৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে। কারণ ৫ টনের ট্রাকে ১০ থেকে ১২ টন পর্যন্ত পণ্য আনলোড করা হয়।প্রায় দ্বিগুণ! প্রতিদিন গড়ে ৪০০-৫০০ ট্রাক প্রবেশ করে, যার ফলে দৈনিক ১৫ লাখ টাকার মতো রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়।

এছাড়াও অনুসন্ধানে ধরা পড়ে, হুসনে আরা এন্টারপ্রাইজ নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লোড-আনলোডের কোনো কাজ না করেই প্রায় ১০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে, যার প্রমাণ পায় দুদকের টিম। যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা আমদানিকারকদের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পায়নি, পেলে ব্যবস্থা নিত।

বন্দরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রতিটি ট্রাক নির্ধারিত ওজন স্কেলে মেপে বন্দরে প্রবেশ করে এবং পণ্য খালাসের পর পুনরায় ওজন করা হয়। তবে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান। কাস্টম কর্মকর্তা ইয়াকুব জাহিদ বলেন, কারগো আসার পর সঠিক নিয়মে ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়, এর বাইরে তাদের করার কিছু নেই। অভিযুক্ত ৩ জনের মধ্যে ওমর ফারুক ও আব্দুল করিম রাসেলের মোবাইল নম্বর বন্ধ, ইলিয়াস উদ্দিন লিপু ফোন রিসিভ করে বলেন তিনি ঢাকায় রয়েছেন ব্যস্ত আছেন।

এই চাঁদাবাজি শুধু বন্দরের পরিবেশকেই কলুষিত করছে না, বরং রাষ্ট্রীয় রাজস্ব ব্যবস্থার ওপর ভয়াবহ আঘাত হানছে। সাংবাদিক নির্যাতন, রাজস্ব ফাঁকি ও ক্ষমতার অপব্যবহার মিলিয়ে এই ‘তিনজনের সিন্ডিকেট’ বর্তমানে তামাবিল বন্দরকে একপ্রকার জিম্মি করে রেখেছে।

সচেতন মহল মনে করছে, তামাবিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে এভাবে দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট চালু থাকা শুধু স্থানীয় নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ে গভীর সংকেত। প্রশাসন, রাজস্ব বিভাগ ও দুর্নীতি দমন সংস্থার উচিত অবিলম্বে এই চক্রকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

Please Share This Post in Your Social Media

একই রকম সংবাদ
© সকল স্বত্ব দৈনিক ঘোষণা অনলাইন ভার্শন কর্তৃক সংরক্ষিত
Site Customized By NewsTech.Com