নগরীর খালিশপুরে নগর মাতৃসদন ( আরবান ক্লিনিকে) সিজার করার সময় প্রসুতির মায়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় খুলনা সিটি করপোরেশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ভুল চিকিৎসার কারনে পুজা অধিকারী (১৯) নামের প্রসুতির মৃত্যু হয়েছে বলে ভিকটিম পরিবারের দাবি। গত ১৬ জুন রাত ৮ টার দিকে খালিশপুর ফায়তুল ফালাহ মোড় আরবান ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই স্বজনদের মাঝে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে যৌথ বাহিনী এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। কেসিসি পরিচালিত এ ক্লিনিকটি পরিচালনা করে এডামস নামক একটি এনজিও। ভিকটিমের শশুর বিবেক অধিকারী জানান, ঘটনার দিন দুপুর পৌনে দুইটার দিকে বেদনা ওঠে পুজার বাসায় নিয়মিত বাসায় আসা আয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আরবান ক্লিনিকে নিয়ে চেকআপ করে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সে মতে পুজা ও তার স্বজনরা ক্লিনিকে যান। ক্লিনিকে কোন চেকআপ ও প্রস্তুতি ছাড়াই তাকে সিজার করার কথা বলা হয়। সে মতে তারা সাদা কাগজে সাক্ষর নেয়। অপারেশন রুমের ভেতর থেকে সদ্য ভুমিষ্ঠ মেয়ে শিশু বের করা হয় বিকাল ৪ টায়। পুজাকে বের করে বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে। তাকে বের করে অপারেশন রুমের পাশের রুমে রাখা হয়। তখন তাকে গায়ে স্যালাইন পুশসহ নানা ধরনের চিকিৎসা শুরু করে নার্সরা। রোগীকে নিয়ে তারা খুবই ব্যাস্ততা দেখায়। কারন জিজ্ঞাসা করলে তারা রোগীর স্বজনদের সাথে খারাপ আচরন করে। এতে স্বজনরা নিরব হয়ে যায়। কিন্তু বিকাল সোয়া ৫ টার দিকে ক্লিনিকের লোকজন জানায়, রোগীর অবস্থা খারাপ তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। এ কথা শুনে রোগীর স্বজনরা দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্বব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তারা বলেন, পুজা মারা যাওয়ার পর ক্লিনিকের লোকজন খুমেক হাসপাতালে পাঠাতে বলে। হাসপাতালে অপারেশনের দায়িত্ব পালন করেন ডা: আফসারুন্নেসা মুক্তা। এই ডা: মুক্তার বিরুদ্ধে মানিকতলা সুর্যের হাসি ক্লিনিকে গর্ভবতী মাকে সিজার করার সময় মেরে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। ঔই চিকিৎসকের অপারেশন করার কোন অনুমতি নেই। তারপরও তিনি কিভাবে সিজার করলেন সেই প্রশ্ন ভিকটিমের স্বজনদের। ভুক্তভোগীর পরিবার এই অপচিকিৎসার বিচার দাবি করেন। তবে সদ্য ভুমিষ্ঠ শিশুটি ভালো আছে বলে তারা জানায়। ভিকটিমের আরেক আত্মীয় পিন্টু অধিকারী বলেন, তারা খালিশপুর হাউজিং এস্টেট নিউ কলোনী এন এফ- ৯৮ এর বাসিন্দা। ছোটভাই জয় অধিকারী ঢাকায় কাজ করেন।তারই স্ত্রী পুজা চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মারা গেলো। এদিকে এলাকাবাসী সুত্রে জানা্যায়, সিজারের আগে এনেস্থিসিয়া দেওয়াতে ভুল হওয়ায় রোগীর জ্ঞান ফেরেনি। বিষয়টি মিমাংসার জন্য ঔই অভিযুক্ত চিকিৎসকের পক্ষে অনেকেই আসছে। কিন্তু তারা পুজার মৃত্যুর বিচার চান। মৃত্যুর পর পুজার লাশ খুমেক হাসপাতাল থেকে ঔই ক্লিনিকের সামনে আনা হয়। তারপর যৌথ বাহিনীর আশ্বাসে তার লাশ বাড়িতে আনা হয়। পরের দিন তার লাশ রুপসা শ্মশানে শেষ সমাধি করা হয়। কেসিসির প্রধান সাস্থ্য কর্মকর্তা শরীফ শাম্মীউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার তিন সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিতে তিনি সহ খুমেক ও সদর হাসপাতালের গাইনী বিভাগের দুজন চিকিৎসক রয়েছেন। এদিকে এ আরবান ক্লিনিকে মাসে ৩০/৩৫ জন গর্ভবতী মায়ের সিজার হয়ে থাকে। ক্লিনিক ম্যানেজার মাহাবুব আলম বলেন, এঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর জানা যাবে। এদিকে স্বরজমিনে আরবান ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার পুজা আচার্য সাথে কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ঘটনার পর থেকে ডা: আফসারুন্নেসা মুক্তা ক্লিনিকে আসছেন না। এখন চিকিৎসা সেবা সাভাবিক ভাবে চলছে।