বাংলাদেশের কৌশলগত অঞ্চল চিকেন নেক ভারতের দখলে যাওয়ার সম্ভাবনা যা চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য অশনিসংকেত এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ভারতীয় ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় দেশের সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে “চট্টগ্রাম অঞ্চল নিয়ে ভূ-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও ইকোনোমিক্যাল জোনে ভারতের জন্য বরাদ্দকৃত ভূমি বাতিলের দাবিতে” চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে বুধবার সকাল ১০ ঘটিকায় সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ এর উদ্যোগে নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নাগরিক সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরী। মূখ্য আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কাজী মজিবুর রহমান মজিব, চেয়ারম্যান, পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ড.কাজী মোঃ বরকত আলী, অধ্যাপক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন এরশাদ উল্লাহ, আহ্বায়ক চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি। জাহিদুল করিম কচি সদস্য সচিব চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, এড. গোলাম ফারুক, ভাইস চেয়ারম্যান এবি পার্টি, মোঃ মোস্তফা আল ইহযায প্রধান সমন্বয়ক সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ, মাওলানা মোহাম্মদ সোহায়েল, অ্যাডভোকেট ফাহিম শরিফ খান, সংগঠক জনসংহতি আন্দোলন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন আলহাজ্ব জান্নাতুল ইসলাম সভাপতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম মহানগরশাখা। সভায় সভাপতিত্ব করেন এডভোকেট পারভেজ তালুকদার- উপদেষ্টা সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ, সঞ্চালনায় ছিলেন প্রভাষক এম.শাজাহান সাজু, সমন্বয়ক সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ। নাগরিক সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজনীতিবিদ, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক, আইনজীবী, ছাত্র প্রতিনিধি সহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আমরা ইতিহাস ভুলে যাওয়া জাতি। পলাশী যুদ্ধের ইতিহাস, ফকির বিদ্রোহ, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লার ইতিহাস, ফরায়েজী আন্দোলনের ইতিহাস আমরা ভুলে গেছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি সংকট অবস্থা বিরাজ করছে। পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা মানুষ কে জিম্মি করে টাকা আদায় করছে, মুক্তিপণ আদায় করছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকট সমাধানে লড়াই অব্যাহত রাখতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের কল্যাণে নাগরিক সভার এই আলোচনা রাজপথে নিয়ে যেতে হবে। সুশীল সমাজের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তরুণদের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
মূখ্য আলোচক পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ এর চেয়ারম্যান কাজী মজিবুর রহমান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের ভূখন্ড থেকে আলাদা করার জন্য উপজাতি সন্ত্রাসী জেএসএস ও ইউপিডিএফ এর মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে ভারত, নতুন করে ষড়যন্ত্র কারিগণ পার্বত্য চট্টগ্রামে পক্সি যুদ্ধ করানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে সংগঠন দুটি আবারও তাদের পুরনো রূপে ফিরে গিয়ে নতুনভাবে সশস্ত্র প্রস্তুতি শুরু করেছে। পাহাড়ে নিরীহ বাঙালি ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার চেষ্টা করছে। গোপন বৈঠক, চাঁদাবাজি, অপহরণ এবং সশস্ত্র মহড়ার মাধ্যমে এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করছে তারা। নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও এই বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। সংগঠন দুটি পাহাড়ে আরাকান আর্মির অবাধ বিচরণের সহযোগিতা করছেন এবং আরাকান আর্মির প্রত্যাক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে আদিবাসী আধিপত্য প্রতিষ্ঠার নামে স্বশাসিত অঞ্চল কিংবা স্বাধীনতার দাবিকে সামনে এনে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা চালাচ্ছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি সহায়তা এবং এনজিওর আড়ালে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা পাচ্ছে তারা। এতে করে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি তৈরি হচ্ছে। দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষায় জেএসএস ও ইউপিডিএফে ষড়যন্ত্র কঠোর হাতে দমন করার দাবি জানান এবং সময় থাকতে এই চক্রান্ত রুখে না দিলে পার্বত্য অঞ্চল আবারও রক্তাক্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন।
সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ এর প্রধান সমন্বয়ক মোঃ মোস্তফা আল ইহযায বলেন, চট্টগ্রামের মিরসরাই এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতকে প্রায় ৯৯০ একর জমি বরাদ্দ দেয় আওয়ামী সরকার, যা বাংলাদেশের জন্য এক গভীর উদ্বেগের কারণ। ভারতের দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনার অংশই ছিলো বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক স্থান গুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। বিশেষত, ফেনী থেকে মিরসরাই পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকার প্রতি ভারতের গভীর নজর রয়েছে যা বাংলাদেশের জন্য ‘চিকেন নেক’ (ঈযরপশবহ ঘবপশ) হিসেবে পরিচিত। এই এলাকা বাংলাদেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চট্টগ্রামসহ পুরো দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রবেশদ্বার। মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি নেওয়ার মাধ্যমে ভারত শুধু বিনিয়োগ নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর উপর দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে। যদি তারা এই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়, তবে এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে শিল্প, বাণিজ্য, এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্র ভারতের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে।বাংলাদেশের লাইফলাইন চট্টগ্রাম অঞ্চল কে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটির জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হয়, ২০২২ সালের এপ্রিলে বেজা ও আদানি পোর্টস এবং এসইজেড লিমিটেডের মধ্যে ডেভেলমেন্ট এগ্রিমেন্ট বিষয়ক একটি চুক্তি ভারতের মুম্বাইয়ে স্বাক্ষরিত হয়। সম্প্রতি ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করেছে সরকার। অথচ ভারতকে দেয়া মিরসরাইয়ের ৯০০ একর ভূমির এই জোনটি বাতিল করা হয়নি। ভারতকে দেয়া এই ৯০০ একর জমি বরাদ্দ বাতিল করে সেখানে দেশ রক্ষায় ক্যান্টনমেন্ট প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দাবি জানান।
এসময় বাগেরহাটের মোংলা উপজেলায় অর্থনৈতিক অঞ্চলে ভারতের জন্য বরাদ্দকৃত ১১০ একর জায়গা বাতিল সহ বাংলাদেশে অবস্থানরত ৩৫০টিরও বেশি ভারতীয় কোম্পানি নিবন্ধিত বাতিলের দাবি জানানো হয়।
বিশেষ অতিথি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড কাজী মো: বরকত আলী বলেন,সন্তু লারমার মেয়ে আমেরিকায় বসে ষড়যন্ত্র করছে।বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তে ইউএনডিপি, ইউনিসেফের সহায়তায় কিছু পাহাড়ি জনগোষ্ঠী কে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীতে পরিণত করেছে।তাদের উদ্দেশ্য পার্বত্য চট্টগ্রামে “জুম্মল্যান্ড নামে খ্রিষ্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম অর্থনীতির প্রাণভোমরা। তাই এটা নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। সবাই মিলে এটা কে রক্ষা করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার বলেন , ভারত কখনোই আমাদের বন্ধু নয়। ৭১ সালে ভারত ১৯৪৭ সালে দেশভাগের প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশীদের সহযোগিতা দিয়েছিল। ইসরাইলের যেভাবে মোসাদ দিয়ে আরব রাস্ট্রগুলোকে তার পদানত করতে চায় ভারত সেভাবে বাংলাদেশকে র দিয়ে নানা সমস্যায় ফেলে বাংলাদেশ নামক রাস্ট্রটি অকার্যকর করতে চায়। ভারত ইতোমধ্যে বাংলাদেশের চতুর্দিকে নানা সমস্যা সৃষ্টি করছে। সীমান্তে দখল হত্যা চালাচ্ছে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক সেটা ভারত চায়না তাই তারা পার্বত্য চট্টগ্রামেও সস্ত্রাস মদদ দিচ্ছে। সন্ত্রাসীদের অস্ত্র বার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে । জেএসএস ইউপিডিএফ কেএনএফ দিয়ে ভারত বাংলাদেশে প্রক্সি যুদ্ধ শুরু করেছে। তাই ভারত এর সাথে আমাদের সতর্কতার সাথে আগাতে হবে । বন্ধুত্ব একতরফা নয় দোতরফা হতে হবে। পাকিস্তানসহ মুসলিম বিশ্বের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে র ও মোসাদের কবল হতে রক্ষা করতে দেশবাসীকে আগামীর নির্বাচনে দেশপ্রেমিক ঈমানদার নেতৃত্বকে নির্বাচিত করতে হবে ।