সড়কে কার্পেটিং করার পরদিনই হাত দিয়ে কার্পেটিং তুলে ফেলছেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।
এমন চিত্র ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের ভেন্নাতলা থেকে বেড়িরহাট পর্যন্ত সড়কের।
তবে উপজেলা প্রকৌশলী বলছেন, সাধারণত কার্পেটিংয়ের পর ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে সময় লাগে স্থায়ী হতে। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বিক্ষুব্ধ স্থানীয়দের অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ বিটুমিনসহ নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়কের কার্পেটিং করায় এমন বেহাল দশা।
উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের ভেন্নাতলা থেকে বেড়িরহাট পর্যন্ত সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। ৩ হাজার ৭শ মিটার দীর্ঘ এ সড়ক উন্নয়নকাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
গত ১৪ জুন ভেন্নাতলা অংশে ১শ ৫০ মিটার সড়কের কার্পেটিং করা হয়। পরদিন রোববার দুপুরে ওই সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় এক মোটরসাইকেল আরোহী পড়ে যায়। পরে এলাকার লোকজন সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে টান দিলে কার্পেটিং উঠে আসে। এসময় সেখানে উপস্থিত থাকা সহকারী প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারের লোকজনের কাছে বিষয়টি জানতে চায় স্থানীয়রা।
এরপর একে একে শতাধিক মানুষ এসে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে সহকারী প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারের লোকজন সেখান থেকে কোন জবাব না দিয়ে সরে যায়। এখন পর্যন্ত সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শুরু থেকে নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। প্রথম থেকেই ঠিকাদার নিম্নমানের কাজ করছেন। তারা সঠিকভাবে কাজ করার জন্য বললেও ঠিকাদার শোনেননি। এ সময় তারা সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে টেনে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার দৃশ্য দেখান। তাদের দাবি পুনরায় সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা হোক সড়কটি।
সরেজমিনে সোমবার দুপুরে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের ভেন্নাতলা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে।
স্থানীয় এলাকাবাসী হাত দিয়ে চাপড়া চাপড়া কার্পেটিং তুলছেন। এসময় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী নিম্নমানের কাজ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় তারা সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে টেনে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার দৃশ্য দেখান।
স্থানীয় ভেন্নাতলা বাজারের মুদি দোকানি জুয়েল রানা বলেন, শুরু থেকে নিম্নমানের কাজ করা হচ্ছিল। বিভিন্ন সময় ঠিকাদারকে বিষয়টি বললেও তিনি শোনেননি। শনিবার বিকেলে কার্পেটিং এর কাজ করে। রোববার দুপুরের দিকে সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক, ভ্যান চলাচল করলে বিভিন্ন জায়গায় দেবে যায়। পরে আমরা সড়কটির বিভিন্ন স্থানে হাত দিয়ে দেখি কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদি হাসান কাছেদ বলেন, কার্পেটিংয়ের একদিন পর রোববার দুপুরে বাজারে গিয়ে দেখি সড়কের কার্পেটিং হাত দিয়ে তুলছে কয়েকজন। হাত দিয়ে টান দিলেই চাপড়া ধরে উঠে আসছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কার্পেটিং করায় এ অবস্থা।
তিনি আরও বলেন, ওই সময় সহকারী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের লোক ছিল, বিষয়টি তাদের কাছে জানতে গেলে তাদের সঙ্গে স্থানীয়দের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দুই তিন’শ স্থানীয় এলাকাবাসী কাজ বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সহকারী প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারের লোকজন দ্রুত ওই স্থান থেকে সটকে পরে। এখন পর্যন্ত কাজ বন্ধ রয়েছে। আমাদের দাবী সড়কটি পুনরায় সঠিকভাবে নির্মাণ করা হোক।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, সড়কের কার্পেটিংয়ের অধিকাংশ কাজ বাকি রয়েছে। শুরুতেই এমন নিম্নমানের কাজ করায় ক্ষুব্ধ হয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী। প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার ঘটনাও ঘটেছে। প্রত্যাশা করছি বাকি কাজটুকু ভালোভাবে সম্পন্ন করবে কর্তৃপক্ষ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাহমুদ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মাহমুদ জানান, সিডিউল অনুযায়ী সড়কের নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ সত্য নয়। এলাকাবাসী বিষয়টি বুঝতে পারেনি। তাই তাদের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। মূলত রাস্তার কার্পেটিং করার ৭২ ঘণ্টা অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তা স্থায়ী হয় না। ২৪ ঘণ্টা পরেই তারা কার্পেটিং টেনে তুলেছে।
এলজিইডির আলফাডাঙ্গা উপজেলা প্রকৌশলী রাহাত ইসলাম জানান, গুণগতমান বজায় রেখেই কাজটি করা হচ্ছে। তবে স্থানীয় কিছু লোকজন গতকাল বিষয়টি বুঝতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। সাধারণত কার্পেটিংয়ের পর ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে স্থায়ী হতে। তবে ঠিকাদারের গাফিলতি আছে কি না বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় এলাকাবাসীর বাধার মুখে সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে দুই এক দিনের মধ্যে পুনরায় কাজ শুরু করা।