বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধার ও আন্তর্জাতিক মামলার অর্থায়নে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সদ্যসমাপ্ত লন্ডন সফর। ১০ থেকে ১৩ জুন অনুষ্ঠিত এই সফরে গভর্নর একাধিক বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে দুর্নীতি ও অর্থপাচারবিরোধী প্রচেষ্টায় একটি সুসংগঠিত রোডম্যাপ উপস্থাপন করেন।
লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইন সংস্থা DLA Piper আয়োজিত “অ্যাসেট রিকভারি রাউন্ড টেবিল”-এ প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন গভর্নর। অনুষ্ঠানে ওমনি ব্রিজওয়ে, বেঞ্চওয়াক ক্যাপিটাল, ইউনিটাস গ্লোবালসহ আন্তর্জাতিক লিটিগেশন ফান্ডার ও তদন্ত সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এই গোলটেবিল আলোচনায়:
অন্তত ৩০টি আন্তর্জাতিক মামলা পরিচালনার জন্য ১০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ সংগ্রহে কৌশল নির্ধারণ,
NDAs (গোপনীয়তা চুক্তি) দ্রুত সম্পাদনের উদ্যোগ,
বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদের অবস্থান চিহ্নিতকরণ ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ,
বিশেষ SPV (Special Purpose Vehicle) গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
১১ জুন গভর্নর ও দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মো. আবদুল মোমেন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) ও IACCC-এর সঙ্গে বৈঠক করেন।
গভর্নর সম্প্রতি:
সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর £১৭ কোটি,
বেক্সিমকোর শায়ান ও শাহরিয়ার রহমানের £৯ কোটি মূল্যের সম্পদ জব্দের জন্য ধন্যবাদ জানান।
এ সময় JIT (Joint Investigation Team) গঠনের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতার প্রশংসা করেন তিনি।
সফরের অংশ হিসেবে গভর্নর:
ব্ল্যাকরক,
লন্ডনের লর্ড মেয়র,
এবং বিভিন্ন ফিনটেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করেন। আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা, পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ এবং লন্ডনের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও ক্যাপিটাল মার্কেটে অংশগ্রহণ।
এছাড়া, লন্ডনের মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর সঙ্গে রেমিট্যান্স প্রবাহ সহজ ও দ্রুততর করার বিষয়ে কার্যকর আলোচনা হয়।
এই সফরকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পদ পুনরুদ্ধার, দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগ এবং আর্থিক কূটনীতির একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি শক্তিশালী করতে গভর্নরের এই কূটনৈতিক ও নীতিনির্ধারণমূলক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।