৪ জুন ফ্যাসিবাদের পতন পরবর্তী সময়ে নতুন বন্দোবস্তের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তার প্রতিফলন আমরা দেশের বাজেটে দেখতে চাই। আরেকটা মৌলিক সমস্যা হলো বাজেট প্রনয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কোন আলাপ করা হয়না যেটা আমরা অন্যায্য মনে করি, কারন আগামী রাজনৈতিক সরকারকেও এই বাজেট বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিতে হবে, সেটা আংশিক হলেও। তবে এবি পার্টি একই সাথে জাতিকে স্মরন করিয়ে দিতে চায় যে ২০২৪ এর গনঅভ্যুত্থান পরবর্তী কোন বাস্তবতায় সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল।
আমরা মনে করি বাজেটের আকার, প্রনয়ন পদ্ধতি, আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য, দশকের পর দশক ধরে চলা ঋণ-ঘাটতি নির্ভর বাজেট, বাজেট বর্ষ – সব মিলিয়ে বাজেটের নিজস্ব ব্যাকরন ও দর্শনকে পুনঃমূল্যায়ন জরুরী। অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর দিক নির্দেশনামূলক বাজেট দিতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেছেন এবি পার্টি’র সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষিত বাজেট মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা নিয়ে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন। এসময় সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, এবিএম খালিদ হাসান ও আমিনুল ইসলাম এফসিএ সহ কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ আরো বলেন, গত ১৬ বছরে রাষ্ট্রকে যেভাবে লুটেপুটে খাওয়া হয়েছে, আমলারা যেভাবে কৃত্রিম খরচের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে, ডিজিটাল হবার বদলে যেখানে তিন/চার গুন অদক্ষ ও অযোগ্য লোকবল নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠাকে অকেজো করে দেয়া হয়েছে, তার সংশোধন দরকার। জাতিকে দুনিয়ার বড় বড় কর্পোরেট মহাজনদের কাছে বর্গা দেবার বাজেটের বদলে আমরা আমাদের জাতীয় সামর্থের মধ্যে বাৎসরিক খরচকে নিয়ে আসবার চেষ্টা করা দরকার। সেজন্য প্রয়োজনীয় সকল সংস্কারকে বাস্তবায়ন করতে হবে শত বাধা স্বত্ত্বেও। তা না হলে বছর ঘুরে বারবার বাজেট আসবে, লুটপাট অব্যাহত থাকবে, ঋণ করে মেঘা প্রকল্প করা হবে কিন্তু জাতির প্রকৃত উন্নয়ন ও ভাগ্য বদল হবে না।
এবি পার্টি মনে করে আমলা নিয়ন্ত্রিত এবারের বাজেট বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের বাজেটেরই ধারাবাহিকতা। বিগত সরকারের গড়া মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। যার ফলে আইএমএফের নির্দেশে জনগণের উপর করের চাপ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি নড়বড়ে, ভিতহীন, ভাঙ্গা বাড়ীর সঠিক মেরামত (সংস্কার) ছাড়াই তার উপর অর্থ উপদেষ্টার বহুতল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ সফল হবে না বলে আমরা মনে করি।
সংস্কারবাদী সরকারের এই অবহেলিত বাজেট দেখেই বোঝা যায়, রাজনীতি নিয়ে তাদের আগ্রহ যতোটা, তার কিছুই নেই অর্থনীতিতে। অথচ এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, পরিকল্পনা উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টারা সবাই পাকা অর্থনীতিবিদ। বিগত ফ্যাসিবাদী স্বৈর সরকারের ১৬ বছরের ফুলানো-ফাঁপানো মিথ্যা জিডিপি ও তার বানোয়াট প্রবৃদ্ধির তথ্য-উপাত্ত সংশোধন না করে আর কখনোই বাস্তব সম্মত জনবান্ধব ভালো বাজেট করা সম্ভব নয়।
প্রবৃদ্ধি-কেন্দ্রিক ধারণা থেকে সরে এসে অর্থ উপদেষ্টা চেষ্টা করেছে সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দিতে, আমরা ওনার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তাই প্রথাগত ভৌত অবকাঠামো তৈরির খতিয়ান তুলে ধরার পরিবর্তে আমরা এবারের বাজেটে প্রাধান্য দিয়েছি মানুষকে। স্বল্প মেয়াদী অন্তরবর্তী সরকারের দীর্ঘ মেয়াদি বাজেট পরিকল্পনা প্রস্তাব। এর অংশ হিসেবে আগামী তিন অর্থবছরের জন্য করনীতি, সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা।
২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে স্বল্পন্নোত দেশ বা এলডিসি তালিকা থেকে চুড়ান্ত ভাবে বেরিয়ে আসবে। তার প্রস্ততি নিয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে যে সমালোচনা আসছে, তা হলো সক্ষমতা অর্জন না করেই বিগত সরকারের মত অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথে হাঁটছে। কিন্তু সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সুশাসন প্রতিষ্ঠায়। সেদিকে নজর দেয়ার কথা জানানো হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। তবে বাজেট নিয়ে অর্থনীতিবিদদের সমালোচনা হলো, আগের সরকারের রেখে যাওয়া জিডিপির হিসেবেই নতুন বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। গত সরকারের দেয়া তথ্য উপাত্ত, বিশেষ করে জিডিপিকে অলিক সংখ্যা বলেছেন। তাহলে এই তথ্য উপাত্তের উপর ভর করে কেন বাংলাদেশকে এলডিসি উত্তরণ করতে হবে, সেই প্রশ্নও জনগণের মাঝে চলে আসে। তবে এলডিসি পরবর্তী সক্ষমতা বাড়াতে কাস্টমস এর পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাইজেশন এর কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা যেটাকে আমরা স্বাগত জানাই।
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রিয়েল এস্টেট সেক্টরে রাখা হয়েছে যা চরম অনৈতিক। খেলাপি ঋণ আদায় ও অর্থপাচার কিভাবে রোধ হবে সে বিষয়ে বাজেটে কোন পথ নকশা নেই। বাজেটে আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে কথা আছে কিন্তু সুস্পষ্টভাবে কী হচ্ছে সেটা নাই। মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কিভাবে হবে তার কোন রোডম্যাপ দেখতে পাচ্ছি না। বাজেটে তিন শূন্য বাস্তবায়নের কথা বলা আছে কিন্তু সেটা কিভাবে হবে তার কোন নীতি কৌশল বলা হয়নি।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, অর্থ উপদেষ্টা যখন বলেন গতানুগতিক বাজেট দেয়া ছাড়া আমাদের কোন উপায় ছিলনা, তখন আমরা আর কী বলবো! রাতারাতি বিপ্লবী বাজেট দেয়া সম্ভব নয় এটা যেমন সত্য, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর মত জনতুষ্টির ফাঁকা বুলি সম্পন্ন বাজেটও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে কাম্য নয়। কাউকে না কাউকে এই রুগ্ন অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর দিক নির্দেশনা দেয়া দরকার ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বাজেটের আকার কমানোর সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করে বলেন, বাজেটের আকার, প্রনয়ন পদ্ধতি, আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য, যুগ যুগ ধরে চলা ঋণ-ঘাটতি নির্ভর বাজেট, বাজেট বর্ষ; সব মিলিয়ে বাজেটের নিজস্ব ব্যাকরন ও দর্শনকে পুনঃমূল্যায়নটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; অর্থ উপদেষ্টা সেদিকে কিছুটা নজর দিয়েছেন বলে মনেহয়। গত ১৬ বছরে রাষ্ট্রকে যেভাবে লুটেপুটে খাওয়া হয়েছে, আমলাতান্ত্রিক নিয়মে যেভাবে কৃত্রিম খরচের বোঝা চাপিয়ে, ডিজিটাল হবার বদলে যেখানে তিন-চার গুন অদক্ষ ও অযোগ্য লোকবল নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকেজো করে দেয়া হয়েছে, তার সংশোধন দরকার ছিল বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী নাসির, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল হালিম খোকন, যুগ্ম সদস্য সচিব আহমেদ বারকাজ নাসির, সফিউল বাসার, কেন্দ্রীয় নেতা আবু রাইয়ান আশয়ারি রছি, শ্যাডো কমিটির সদস্য হাজরা মাহজাবিন, নারী বিষয়ক সহ সম্পাদক শাহীনুর আক্তার শীলা, নারী নেত্রী রাশিদা আক্তার মিতু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তোফাজ্জল হোসেন রমিজ সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।