আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভের আশায় নির্ধারিত দিনে ব্যক্তির পশু জবাই করা হলো- কোরবানি। শুধু আত্মত্যাগই নয় বরং আল্লাহর সঙ্গে বান্দার ভালোবাসার অনন্য এক নিদর্শন হলো এ কোরবানি। ধন-সম্পদের মোহ ও মনের পাশবিকতা দূরীকরণের মহান শিক্ষা নিয়ে প্রতি বছর ফিরে আসে পবিত্র কুরবানি। ইসলাম ধর্মে কুরবানির দিনকে ঈদুল আজহাও বলা হয়। শরিয়তের পরিভাষায়-নির্দিষ্ট জন্তুকে একমাত্র আল্লাহ পাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে মহান আল্লাহ পাকের নামে জবেহ করাই হলো কুরবানি। আর মাত্র কয়েকদিন পরই আসছে কোরবানি। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলায় কুরবানীর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৪৫ হাজার ১৬২টি পশু। তার মধ্যে ১০৫৯০ টি যাঁড়, ৮২৪৯টি বলদ গরু, ৭০৪৪ টি গাভী, ৫২টি মহিষ, ১৪২০৬ টি ছাগল, ৫০২১ টি ভেড়া । সব মিলিয়ে ৪৫১৬২ টি পশু। গোমস্তাপুর উপজেলায় চাহিদার তুলনায় গবাদি পশুর সংখ্যা বেশি হওয়ায় অবশিষ্ট পশুগুলোকে ব্যবসায়ীরা ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রয়ের জন্য নিয়ে যাচ্ছে উচ্চ দাম পাবার আশায়।
গোমস্তাপুর উপজেলার আটটি ইউনিয়নে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ টি ফার্ম রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব ফার্মে পশুগুলো লালন পালন করে বিক্রয়ের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার খামারিরা। গোমস্তাপুর উপজেলায় এসব ফার্মে দেশি গরুর পাশাপাশি বিদেশি জাতের গরুও লালন পালন করা হয়। উল্লেখযোগ্য ফার্মগুলোর মধ্যে আশীর্বাদ ডেইরি ফার্ম, সরকার ডেইরি ফার্ম, মাসুদ ডেইরি ফার্ম, মমতাজ ডেইরি ফার্ম, চাঁপাই এগ্রো ডেইরি ফার্ম ও মোটা তাজাকরণ, মুসাব্বির ডেইরি ফার্ম ও নুহু ডেইরি ফার্ম উল্লেখযোগ্য। এসব ফার্মে দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত যত্ন সহকারে গরুসহ বিভিন্ন পশুকে লালন পালন করা হয়। প্রয়োজনে স্থানীয় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতা নেওয়া হয়। এক একটি ফার্মে কম করে ২০টি থেকে প্রায় ৬০টি গরু থাকে।
এ প্রসঙ্গে কথা হলে হান্নান ডেইরি ফার্ম বহনপুরের মালিক জিয়াউর রহমান জানান, আমার ফার্মে ২৮টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি ষাঁড় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ ষাঁড়গুলির এক একটি ওজন ৩ থেকে ৫ মন হতে পারে। দাম আশা করছি ১ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা পেতে পারি। গত বছরের তুলনায় এবার গো-খাদ্যের দাম তুলনামূলকভাবে যথেষ্ট বেড়েছে। যেমন ভুসি, গুঁড়া, খুদ, চাল ও ভুট্টার দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি। যার কারণে গবাদিপশু পালনে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। গরুগুলো আমি ঘাস ও দানাদার খাবার খাইয়ে প্রস্তুত করেছি। মোটা তাজাকরনের ক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি গ্রহণ করিনি। আমি নিজেই আমার খামারের গরুগুলোকে দেখাশোনা করে থাকি। আশা করছি উপযুক্ত মূল্যে পশুগুলোকে বিক্রি করতে পারবো।
রহনপুর ইউনিয়নের বিশিষ্ট গরু ব্যবসায়ী নূহু আলম জানান, আমার খামারে যতগুলো গরু রয়েছে তন্মধ্যে ২৬টি ষাঁড় জাতীয় গরু কুরবানীর ঈদে বিক্রয়ের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। আমি খুব শীঘ্রই ষাঁড়গুলোকে নিয়ে বাজারজাত করণের জন্য ঢাকা-চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিব। আশা করছি মহান আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে পশুগুলির ন্যায্য দাম পাবো। কুরবানীর পশু মোটাতাজাকরণ করার বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার পরামর্শ মোতাবেক পশুগুলোকে প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে।
খামারিরা বলছেন, ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে উপজেলার খামারগুলোতে কোরবানির জন্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে গো-খাদ্যের বাড়তি দামের কারণে তারা এসব পশুর প্রত্যাশিত মূল্য পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। তারা বলছেন, প্রতি বছর গো-খাদ্য ভুষি, ধানের কুড়া, খৈল, খড়, ঘাসসহ গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পশু পালনে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হচ্ছে। খামারিরা আশঙ্কা করছেন প্রতিবছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চোরাই পথ দিয়ে ভারতীয় গরু প্রবেশ করে। যার ফলে দেশীয় খামারিরা যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তবে খামারিরা আশা করছেন এবার তেমনটা হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কম।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ওয়াসিম আকরাম জানান, গোমস্তাপুর উপজেলায় গরুর খামারের সংখ্যা অনেক। তন্মধ্যে প্রায় ত্রিশটি খামারে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশুগুলোকে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এজন্য আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে মাঝে মাঝে খামারীদেরকে নিয়ে উঠান বৈঠক করি অথবা ডেকে এনে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পশুগুলোকে মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করি। এবার এ উপজেলায় ৪৫ হাজার ১৬২টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত, তার মধ্যে এ অঞ্চলের জনসাধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পশু কুরবানীর জন্য বরাদ্দ রেখে বাকি পশুগুলোকে খামারিরা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে উচ্চ দাম পাবার আশায় দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত গ্রহণ করছেন। আমরা তাদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তিনি আরো বলেন, উপজেলাবাসীর চাহিদা পূরণ ও দেশের বিভিন্ন স্থানে কুরবানীর পশুগুলোকে বিক্রয়ের উদ্দেশে প্রেরণ করার পরেও অতিরিক্ত পশু মজুদ থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির মুন্সী জানান, ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে নানা কৌশলে ভারত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে পশু ঢুকতে না পারে সেজন্য বিজিবির সাথে বৈঠকের পাশাপাশি সীমান্ত এলাকাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। খামারিরা যাতে পশুর ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব-ধরনের প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়েছে ৷
Leave a Reply