নিজস্ব প্রতিবেদক: ২১ মে ২০২৫ আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) পৃথিবীর শতাধিক দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সার্বিক সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে তা সমাধানের লক্ষ্যে পররাষ্ট্র বিভাগের উপদেষ্টা জনাব তৌহিদ হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ করে একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করে। দূতাবাসের পরিষেবা, শ্রম অধিকার, আইনি সহায়তা এবং প্রবাসীদের সামগ্রিক কল্যাণমূলক ব্যবস্থা উন্নত করতে জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে এবি পার্টি। ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, সহকারী আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. বেলাল হোসাইন ও সহকারী অর্থ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক। এসময় এবি পার্টি তাদের মূল উদ্বেগ এবং নিম্ন লিখিত প্রস্তাব সমুহ তুলে ধরেনঃ
১. পাসপোর্ট নবায়ন এবং হোম ডেলিভারি
বাংলাদেশী কর্মীরা পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা ও নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে। পাসপোর্ট নবায়ন সাত (৭) দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে এবং দ্রুত বিতরণের ক্ষেত্রে কুরিয়ার পরিষেবা গ্রহণ করতে হবে। মালেয়শিয়াতে ইএসকেএল (ESKL)’র দুর্নীতি এবং ব্যবসার নামে যে সিন্ডিকেট চলমান আছে, সেটা বন্ধ করে সেবাকে হাইকমিশনের উদ্যোগে এবং নিয়ন্ত্রনে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে;
২. পেমেন্ট সিস্টেমের সংস্কার
পুরনো ব্যাংক ড্রাফট সিস্টেম অপ্রয়োজনীয়, বিলম্ব এবং কষ্টের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
আধুনিক আর্থিক ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে QR কোড পেমেন্ট, অনলাইন ট্রান্সফার, ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের মতো ডিজিটাল সিস্টেম কার্যকর করতে হবে;
৩. সুবিন্যস্ত অ্যাপয়েন্টমেন্ট সিস্টেম
দূতাবাসের পরিষেবাগুলিতে সঠিক সময়সূচী না থাকায় অতিরিক্ত ভিড় এবং অযথা সময় নষ্ট হচ্ছে। দক্ষ পরিষেবা ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অন্যান্য অফিসের মতো অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট সফটওয়্যার চালু করতে হবে, যেন প্রবাসীরা আগে থেকেই প্রয়োজনীয় সমস্যা নিয়ে অ্যাপয়ন্টমেন্ট করে দূতাবাসের পরিষেবাসমুহ গ্রহণ করতে পারে।অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে কারসাজি এবং জালিয়াতি বন্ধ করতে হবে;
৪. কারাবন্দী বাংলাদেশীদের প্রত্যাবাসন
অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী নানাবিধ সমস্যায় কারাগারে আটক থাকে, সে-সম্পর্কে তার পরিবার সঠিক তথ্য জানতে পারেনা বা সরকার তাদের প্রত্যাবাসন নিয়েও ভালো সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না। এবি পার্টি মনে করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য কারাগারে বন্দী বাংলাদেশীদের সঠিক তালিকা, সংখ্যা ও তাদের হালনাগাদ অবস্থা ওয়েব সাইটে প্রদান করতে হবে, যেন সকলের পরিবার তার সঠিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পারে। সেই সাথে দ্রুততম সময়ে তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা করতে হবে;
৫. একটি ওয়ান-স্টপ আইনি পরিষেবা এবং কল সেন্টার প্রতিষ্ঠা
শ্রম বিরোধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আইনি সহায়তা পেতে প্রবাসীরা গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হন। বিনামূল্যে সহায়তা প্রদানের জন্য তিন (৩) মাসের মধ্যে (আগস্ট ২০২৫ সালের মধ্যে) একটি আইনি সহায়তা কেন্দ্র চালু করতে হবে অথবা চলমান সেবাকে ঢেলে সাজাতে হবে। জরুরি আইনি সহায়তা চাওয়া কর্মীদের জন্য একটি ২৪/৭ কল সেন্টার এবং সহজ অনলাইন ফর্ম বাস্তবায়ন করতে হবে;
৬. শ্রম বিরোধ ও মজুরি সংক্রান্ত সমস্যা
দূতাবাসকে শ্রম অভিযোগের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিক সমাধান প্রদান করতে হবে। দক্ষতার সাথে মামলা পরিচালনা এবং আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য শ্রম অধিকার বিষয়ক কার্যক্রমকে দক্ষতার সাথে ঢেলে সাজাতে হবে;
৭. কল্যাণ তহবিলের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা
কল্যাণ তহবিল বরাদ্দের উপর প্রতিবছর একটি বিস্তারিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। বিশেষভাবে প্রত্যাবাসন, আইনি সহায়তা এবং জরুরি সুবিধাপ্রাপ্ত প্রবাসীদের সহায়তায় ব্যবহৃত অর্থের বিস্তারিত প্রতিবেদন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে;
৮. বৈদেশিক কর্মসংস্থান এজেন্সিগুলোর জবাবদিহিতা
প্রতারণামূলক শ্রমিক আমদানিকারক এজেন্টদের নিয়ন্ত্রন করার লক্ষ্যে নিয়োগকর্তার অনুমোদনের কাগজপত্র সঠিক যাচাই বাছাইয়ের অনলাইন পদ্ধতি তৈরি করতে হবে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রতারণামূলক কোম্পানিগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে এবং অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় রোধে বিদেশী সরকারের সাথে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়াকে সরকারী উদ্যোগে ডিজিটাল করতে হবে যাতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সকল পক্ষের স্বার্থ রক্ষা সম্ভব হয়;
৯. মৃতদেহ প্রত্যাবাসন বিলম্ব
পরিবারের কাছে মৃতদেহ ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব কমাতে ডকুমেন্টেশন সহজতর করতে হবে। পাসপোর্ট বা এনআইডি থাকবার পরেও কেন দেশ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সত্যায়িত চিঠি দরকার – এগুলো পুনঃবিবেচনা করতে হবে;
১০. কর্মী শোষণ এবং জোরপূর্বক শ্রম
দূতাবাসকে শ্রম শোষণের প্রকাশিত ঘটনায় সক্রিয়ভাবে হস্তক্ষেপ করতে হবে এবং কর্মীদের জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে;
১১. কূটনৈতিক পরিষেবা সম্প্রসারণ
যেসব অঞ্চলে প্রবাসী জনসংখ্যা বেশি সেখানে সঠিক পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে দূতাবাসের শাখা অফিস বৃদ্ধি করতে হবে। যেমন- মালেয়শিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের বাহিরে পেনাঙ এবং জহুরবারু প্রদেশে প্রচুর প্রবাসী কর্মীরা কাজ করেন। সেবাকে সহজতর করবার জন্য সেখানে প্রযুক্তি বান্ধব এবং বিকেন্দ্রীভূক্ত হাইকমিশনের দপ্তর খোলা জরুরী;
১২. ফ্যাসিবাদ ও দালালমুক্ত হাইকমিশন
ফ্যাসিবাদের আমলে কর্মরত অতিউৎসাহী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ নেবার আহ্বান জানাচ্ছে এবি পার্টি। প্রবাসীদের জান ও মালের ব্যাপারে দরদী ও পেশাদার কর্মকর্তা/কর্মচারী দিয়ে ঢেলে সাজাতে হবে হাইকমিশনগুলোকে।
১৩.আন্ত-মন্ত্রনালয় সমন্বয়
প্রবাসীদের নানামুখী সমস্যার সমাধান ও সেবা নিশ্চিতে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের মধ্যকার সমন্বয় সাধন অতীব জরুরী। হাইকমিশনের মাধ্যমে দেয়া সকল সেবা পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের না হলেও দিনশেষে ভিনদেশে সেটাই এক টুকরো বাংলাদেশ সরকার।
যাদের শ্রম ও ঘামের বিনিময়ে দেশের অর্থনীতি টিকে রয়েছে সেই সকল বাংলাদেশী নাগরিকদের সুরক্ষা, অধিকার নিশ্চিত করা ও তাদের প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদান দূতাবাসকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। অধিকার ভিত্তিক রাজনৈতিক দল আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) মনে করে সেবা ও জনগণের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করাই একটি রাজনৈতিক দলের মৌলিক কাজ। সেজন্য মালয়েশিয়া সহ শতাধিক দেশে অবস্থানরত সকল প্রবাসীদের পক্ষ থেকে আমাদের চিহ্নিত মৌলিক, গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাসমুহ সমাধানের জন্য লিখিত সুপারিশ সমুহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করছি।
Leave a Reply