মহেশখালী প্রতিনিধি: বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) দেওয়া কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপের ভূমির বন্দোবস্ত বাতিল করেছে সরকার। অপরদিকে মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের যৌথ অভিযানে ৩ টি অবৈধ চিংড়ি ঘেরের স্থাপনা গুঁড়িয়ে সুইচগেট ধ্বংস করা হয়েছে। এতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধার হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। অপর দিকে আট বছর পর ৯ হাজার ৪৬৭ একর ভূমি পুনরায় ফিরে পাচ্ছে বন বিভাগ।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাসজমি-২ শাখার উপসচিব মাসুদ কামাল গত ৫ মে এ নিয়ে এক স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
স্মারকে বলা হয়েছে –
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য বন্দোবস্ত কেস নম্বর ৫/২০১৬ মূলে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের সোনাদিয়া মৌজার ২ হাজার ৭১২ একর, প্রস্তাবিত সমুদ্র বিলাস মৌজার ৪ হাজার ৮৩৯ একর এবং প্রস্তাবিত চর মকবুল মৌজার ১ হাজার ৯১৮ একরসহ মোট ৯ হাজার ৪৬৭ একর খাসজমি বন্দোবস্ত বাতিল করা হলো।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়-
ইকোপার্কের জন্য জমি দেওয়ার পর সোনাদিয়া দ্বীপে গাছ কাটা, চিংড়ির ঘের নির্মাণসহ বিভিন্ন পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে, যার ফলে দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুনরুদ্ধারের জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেবে।
এ সময় উপসচিব মাসুদ কামাল সোনাদিয়া দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের কথা জানান।
এর মধ্যে রয়েছে- অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে জমি দখলমুক্ত করা। খালের মুখ ও শাখা-প্রশাখার বাঁধ অপসারণ করে জোয়ারের পানি প্রবাহ সুগম করা। এছাড়াও বালিয়াড়ি পুনরুদ্ধার এবং সৈকত সংরক্ষণ করা।
ম্যানগ্রোভ ও নন-ম্যানগ্রোভ গাছের চারা রোপণ করা, যেমন—কেওড়া, কেয়া, নিশিন্দা, নারকেল ও তালগাছ। এ ছাড়াও, দ্বীপের পরিবেশ পুনরুদ্ধারে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, যা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সহায়তা করবে।
এর আগে, ২০১৭ সালে ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তোলার শর্তে বেজাকে মাত্র ১ হাজার ১ টাকা সেলামিতে এ ভূমি বরাদ্দ দিয়েছিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
তখন দেশের বৃহত্তম ইকো-ট্যুরিজম পার্ক গড়ার জন্য পরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যান হাতে নেয় বেজা। মাহিন্দ্র ইঞ্জিনিয়ারিং নামে ভারতের একটি প্রতিষ্ঠানকে এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ দেয় বেজা।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ অনুযায়ী, ইকো-টুরিজম পার্ক করা হলে দ্বীপের পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এমন কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রিট দায়ের করে। এর ফলে জমির বরাদ্দ স্থগিত করে দেয় হাইকোর্ট।
এদিকে, দ্বীপটিকে সংরক্ষণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গত ১৭ মার্চ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, সোনাদিয়া দ্বীপের ৯ হাজার ৪৬৭ একর বনভূমি রক্ষিত এলাকা ঘোষণা করার ফলে সেখানে অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হবে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যাচ্ছে।
বেজার পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন ও মনিটরিং) শাহীন আক্তার সুমি বলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
সোনাদিয়া দ্বীপ ও আশেপাশের এলাকায় ১৭ মে শনিবার বিকালে অবৈধ চিংড়ি ঘেরে মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ হেদায়ত উল্যাহ এর উপস্থিতিতে উক্ত অভিযানে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী, মহেশখালী থানা, কোস্টগার্ড মহেশখালী কন্টিনজেন্ট, বন বিভাগ বিভাগের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
অভিযানে ঘটিভাঙ্গা এলাকায় ৩ টি অবৈধ চিংড়ি ঘেরের স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয় ও সুইচগেট ধ্বংস করা হয়।
অভিযানের উপস্থিতি টের পেয়ে চিংড়ি ঘেরে কর্মরত অবৈধ দখলদার ও শ্রমিকগণ পালিয়ে যায়।
এসময় তাদের ব্যবহৃত দা, সোলার প্যানেল, একটি মোটরসাইকেল ও একটি গামবোট জব্দ করা হয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায় –
বিজ্ঞ আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের নিমিত্ত বন বিভাগকে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
সোনা দিয়া দ্বীপ মহেশখালীর মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। জোয়ারের সময় ব্যতীত উক্ত স্থানে গমন ও প্রস্থান বেশ কষ্টসাধ্য। এজন্য সবসময় উক্ত স্থানে অভিযান পরিচালনা করা যায় না।
সোনাদিয়া ও আশেপাশের এলাকার ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল জবরদখল থেকে রক্ষায় সোনাদিয়া দ্বীপে স্থায়ী বিট অফিস স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি।
Leave a Reply