প্রতিবেদক: মোঃ মাহবুবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা
দারুল মাজিদ মাহমুদিয়া মাদ্রাসা ইস্ট টাউন, মদনপুর, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ—একটি স্বনামধন্য, নিবেদিতপ্রাণ প্রাইভেট কওমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে শিক্ষার্থীদের শুধু পড়ানো হয় না, প্রতিটি শিশুকে স্বর্ণের অলংকারের মতো গড়ে তোলার নিরন্তর চেষ্টা চলে। এই মাদ্রাসার আদর্শ নূরানী বিভাগ, মানসম্পন্ন আধুনিক নাজেরা বিভাগ, হিফজুল কোরআন রিভিশন বিভাগ এবং মাদানী নিসাবের মতো বিভাগগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিন্যস্ত, পূর্ণতা-মুখী এক দ্বীনি পথচলা নিশ্চিত করে।
শাহজালাল, এই মাদ্রাসারই একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে তার পিতা ও জ্যাঠা—পরিবারের দুই অভিভাবক পরপর দুনিয়া থেকে চলে যান। বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে মৃত্যুবরণ করেন। সেই চিকিৎসায় পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। জমিজমা, একটি অটো গাড়ি—সবই বিক্রি করে শেষপর্যন্ত মায়ের কাঁধে পড়ে সন্তানের হেফজ জীবনের ভার।
মা লিমা আক্তার, রূপগঞ্জের একটি কারখানায় মাত্র দশ হাজার টাকা বেতনে কাজ করেন। এই অল্প আয়ে বাসা ভাড়া, খাওয়া, চিকিৎসা, সন্তানকে মাদ্রাসায় রেখে পড়ানো—সবকিছুই যেন এক অসহ্য চাপ।
তবু শাহজালালের মন থেমে থাকেনি। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে, ভাঙা হৃদয়ের ওপর দাঁড়িয়েই সে ৩০ পারা হেফজ সম্পন্ন করেছে। এই পথচলায় তার সবচেয়ে বড় ভরসা ছিল তার মাদ্রাসা।
সেখানে কেউ জিজ্ঞেস করেনি—”তুমি কেন এতো কষ্টে?”, কেউ মুখ ফিরিয়ে নেয়নি তার ছেঁড়া জুতা বা ক্লান্ত চোখ দেখে। বরং মাদ্রাসার ড্রাইভার পর্যন্ত তাকে নিয়মিত পৌঁছে দিয়েছে, কখনও অভিযোগ করেনি।
এই সফলতা একক নয়—এটি দারুল মাজিদ মাহমুদিয়া মাদ্রাসার প্রথম সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ অর্জন। প্রতিষ্ঠানের হাফেজ মাহমুদুল হাসান সাহেব দীর্ঘদিন ধরে সীমিত সামর্থ্য নিয়েও দরিদ্র, এতিম, অসহায় ছাত্রদের মুখে আলোর প্রদীপ জ্বালাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রায় ৫০ জন ছাত্রের এই প্রতিষ্ঠানে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আছেন, যাদের পরিবার মাসে দেড়-তিন হাজার টাকার বেশি দিতে পারেন না। ফলে পরিচালনার ভার দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষ অনেক সময় মনে করেন প্রাইভেট মাদ্রাসায় হয়তো দানের প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
একজন হাফেজে কোরআন তৈরির এই রক্তমিশ্রিত শ্রমের পেছনে আমাদের সকলের অংশীদার হওয়া উচিত। আমাদের সামান্য দান, মাসিক একটি সহযোগিতা, হয়তো একটি ত্যাগ—এটাই শাহজালালের মতো আরও অনেক শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়ে দিতে পারে।
আপনি কি সেই একজন হতে চান, যার হৃদয় কেঁপে ওঠে একটি শিশু কুরআনের আলো নিয়ে এগিয়ে চললে?
আপনার সহযোগিতা, আপনার দান—একজন নতুন ‘নায়েবে রাসুল’-এর হাত ধরেই হতে পারে আপনার নাজাতের কারণ।
Leave a Reply