খুলনা নগরীর প্রবেশদ্ধার গল্লামারী মোড়ে ময়ুর নদের ওপর দুটি স্টিল সেতু নির্মানের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর। চলতি বছর ৩০ মার্চ সেতু দুটির কাজ শেষ হওয়ায় কথা ছিল নির্ধারিত সময়ে কাজ হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ। গত ৮ মাস ধরে সেতুর কাজে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এতে প্রতদিনই গল্লামারী মোড়ে তীব্র যানজট তৈরী হচ্ছে। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দুটি স্টিল সেতু এবং সংযোগ সড়ক নির্মানের জন্য সড়ক বিভাগের সাথে ঠিকাদারের চুক্তি মুল্য ছিল ৬৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। গত বছর ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানের আগে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নির্মান ব্যয় ২০ শতাংশ অথ্যাৎ প্রায় ১৪ কোটি টাকা বৃদ্ধির চেষ্টা করেছিলেন ঠিকাদার। ঔই সময় তাদের বাড়তি টাকার বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন সাবেক এমপি সেখ সালাউদ্দিন জুয়েল সহ আওয়ামীলীগ নেতারা। কিন্তু গনঅভ্যুত্থানের পর নেতারা পালিয়ে যান, সড়ক বিভাগেও ব্যাপক রদবদল হয়। সড়ক বিভাগের নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীরা সব ধরনের বাড়তি ব্যয়ের প্রস্তাব মৌখিকভাবে নাকচ করে দিয়েছেন। এরপর ১৫ শতাংশ হারে ১০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। মুলত বাড়তি টাকার বিষয়ে আশ্বাস না পেয়েই ৮ মাস ধরে প্রকল্প এলাকায় কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদার তাদের নিজস্ব ইয়ার্ডে সেতুর স্টিলের কাঠামোর কাজ চললেও তাতে গতি নেই। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিগত বছর গুলোতে নানা অজুহাতে প্রকপ্লের ব্যায় বৃদ্ধি ছিল সাভাবিক ঘটনা। খুলনা শেরে বাংলা সড়ক ৪ লেন প্রকপ্লেও ৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়েছিলেন ঠিকাদার। আওয়ামীলীগ সরকারের এমপি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশে এই ব্যয় বাড়ানো হতো। একই পদ্ধতিতে গল্লামারী সেতুর ব্যয় বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। সড়ক বিভাগ থেকে জানাগেছে, নগরীর গল্লামারী মোড়ে ময়ুর নদের ওপর পাশাপাশি দুটি সেতু হবে। ৬৮ দশমিক ৭ মিটার লম্বা ও ২৩ মিটার প্রশস্ত সেতু দুটির মুল অবকাঠামো হবে স্টিলের। দেখতে অনেকটা রাজধানীর হাতির ঝিলের আদলে নির্মানাধীন সেতু দুটি নদী থেকে ৪ মিটার উচু হবে। সেতু নির্মানের জন্য ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিংকে ( এনডিই) কার্যাদেশ দেয় সড়ক বিভাগ। চক্তির আওতায় স্টিলের দুটি সেতু সেতুতে যানবাহন ও পথচারীদের ওঠানামার জন্য দুই পাশে প্রায় ৭৫০ মিটার সংযোগ সড়ক করতে হবে। ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর পুরাতন সেতুটি ভাঙার কাজ শুরু করে ঠিকাদার। ঔই বছরই নতুন সেতুর কাজ শুরু হয়। কিন্তু গত বছর আগষ্টের পর থেকে দৃশ্যমান সব কাজ থমকে গেছে। নদীর পাড়ে পাইলিং এর জন্য সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে রিং। মরিচা ধরেছে রডে। সেতুটি দাড় করাতে দুটি অ্যাবটমেন্টের ( কনক্রিটের স্তর) মধ্যে দেখা মেলে একটির। সংযোগ সড়ক নির্মানের কোন তৎপরতায় নেই। বর্তমানে ২১ ফুট প্রশস্ত একটি সেতু দিয়ে প্রতিদিন ১৫/২০ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। এতে সেতুর দুই পাশেই তীব্র যানজট তৈরী হচ্ছে। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প প্রকৌশলী সেলিম রেজা দাবি করেন, সেতুর কাজ বন্ধ নেই। মোট ৬৪ টি পাইলের মধ্যে ৩২ টি আর চারটি পাইল ক্যাপের মধ্যে দুইটির কাজ শেষ হয়েছে। গত বছর থেকে প্রকল্প ইয়ার্ডে স্টিলের অবকাঠামোর কাজ চলছে। নকশা পেতে দেরি হওয়ায় কাজে কিছুটা ধীরগতি ছিল। কাজ শেষ হলে সেটি কনক্রিটের কাঠামোর ওপর স্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, প্রকল্পের নকশার সাথে বাস্তবতার মিল ছিল না। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের বেশি কাজ করতে হয়েছে। তখন বলা হয়েছিল, পরে বিল সমন্বয় করা হবে। বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় জটিলতা দেখা দেয়। এখন সব কেটে গেছে। সড়ক বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক বলেন, চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারকে কাজ করতে হবে। কাজ শেষে সব পরিমাপ করে এরপর অন্য বিষয়। এর ব্যতয় হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অবশ্য তারা প্রস্তাবে রাজি হয়ে দ্রুত কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, সেতুর নকশা সহ সবকিছু অনুমোদন হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় কাজ বন্ধ থাকলেও ঠিকাদারের ইয়ার্ডে সেতুর স্টিল কাঠামোর কাজ চলছে। খুব দ্রুত কাজ শেষ হবে।