প্রতিবেদক: মো. জাহিদুর রহমান
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর হচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বতীকালিন সরকার কর্তৃক আরাকান আর্মিকে মানবিক করিডোর প্রদানের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত। ব্যাপারটি সামনে আসে গত মার্চে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ সফরের সময় রাখাইনে মানবিক করিডোর প্রসঙ্গের অবতারণা করেন। যার মূল উদ্দেশ্য সংঘাত-বিধ্বস্ত রাখাইন অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর ত্রাণ ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। নিতান্তই মানবিক একটি প্রচেষ্টা। তবে বাস্তবতা অনেক জটিল। মিয়ানমারে দীর্ঘদিনের গৃহযুদ্ধ, জাতিগোষ্ঠীগত বিভাজন, আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি এবং সর্বোপরি জান্তা সরকারের ক্ষমতার বিপরীতে রাখাইনের প্রায় নব্বই শতাংশ অঞ্চলে সশস্ত্র বিদ্রোহী জনগোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে।
সব মিলিয়ে এই করিডোর কেবল ত্রাণ বিতরণের বিষয় নয়, এটি একটি কৌশলগত রণক্ষেত্র হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। যে প্রশ্নটি বিশ্লেষক বিশেষজ্ঞরা তুলছেন, তা হলো এই মানবিক উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশ অন্য কোনো সমীকরণের অংশ হওয়ার শঙ্কায় পড়ছে কিনা? কেউ কেউতো ‘প্রক্সি ওয়ার’ শব্দদ্বয়ের ব্যবহার করতেও পিছপা হচ্ছেন না।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের পর, রাখাইনে আলোচিত করিডোর নিয়ে বাংলাদেশও নীতিগত অবস্থান স্পষ্ট করেছে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা একাধিকবার বলেছেন সরকার এই করিডোরের জন্য নীতিগতভাবে রাজি। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব অবশ্য বললেন, “সরকার জাতিসংঘ বা অন্য কোনো এনটিটির সাথে এই তথাকথিত করিডোর নিয়ে আলোচনা করেনি এখনও। তবে নীতিগতভাবে রাজি। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে আলোচনা করা হবে।” তার এই বক্তব্য ভিন্ন সমীকরণের শঙ্কাগুলো উড়িয়ে দেয় বটে।
তবে যে প্রশ্নটি কেউ তুলছে না তা হলো, এই করিডোরের আলোচনা, গঠন বা বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকার তথা ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের ভূমিকা কি হবে? মানবিক করিডোরের মূল ভাবনাই হলো সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের সব অংশের সাথে আলোচনার মাধ্যমে মানবিক সহায়তার উদ্যোগ। তাহলে এই করিডোরে নন স্টেট অ্যাক্টর হিসাবে আরাকান আর্মি যেমন পার্টি, মিয়ানমারের ক্ষমতাসীনরাও পার্টি। জান্তার সাথে আলোচনা না করে এই করিডোর বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। এতে আরাকান আর্মির ডি-ফ্যাক্টো শাসনকে স্বীকৃতি দেওয়ার মতো হতে পারে। মিয়ানমার সরকার এই উদ্যোগকে নিজের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখতে পারে। মনে রাখা প্রয়োজন, সিরিয়া, গাজা, কিংবা ইথিওপিয়ার টাইগ্রে অঞ্চলে যেভাবে মানবিক করিডোরকে রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলের অংশ বানানো হয়েছে, রাখাইনের ক্ষেত্রেও সেই ঝুঁকি অস্বীকার করা যায় না।
বাংলাদেশ বারবারই বলছে, জাতিসংঘের উদ্যোগে সহযোগিতামূলক প্রতিবেশীর দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু বাংলাদেশের জাতিসংঘ কার্যালয় বলছে, এখানে তাদের কাজ করার সুযোগ সীমিত। এক্ষেত্রে দুই সরকারকেই আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে রাখাইনে কোনো সহায়তা সরবরাহ বা পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুই সরকারকেই একমত হতে হবে।
জাতিসংঘের এই অবস্থানে পরিষ্কার যে জান্তা সরকারকে অন্ধকারে রেখে করিডোর সম্ভব নয়। বরং তা করা হলে হিতে বিপরীত হওয়ার শঙ্কা থাকে। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের সাথে আলোচনা করবে কে? ঢাকা নাকি জাতিসংঘ। নাকি যুদ্ধে লিপ্ত অংশগুলো সিদ্ধান্ত নিয়ে একমত হয়ে বাংলাদেশ যেন সহযোগিতা করতে পারে সেই পথ প্রশস্ত করবে? মনে রাখতে হবে আনুষ্ঠানিক কূটনীতিক যোগাযোগের স্বীকৃত চ্যানেল ঢাকা-নেপিদো। তাই নেপিদোর সম্মতি ও অংশগ্রহণ ছাড়া করিডোরকে মিয়ানমার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন হিসেবে তুলে ধরতে পারে, তাতে চীন-রাশিয়ার মতো মিত্র রাষ্ট্রগুলো আন্তর্জাতিক সহায়তাকে বিদেশি হস্তক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে। এছাড়া, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকারের সহযোগিতা অপরিহার্য। তাই বাংলাদেশ বা জাতিসংঘ যদি মায়ানমারের জান্তা সরকারের সাথে কোন রকম আলোচনা না করে সরাসরি করিডোর দিয়ে দেয় তাহলে একদিন আঞ্চলিক দ্বন্দ্বে রূপ নিবে। জান্তা সরকারের প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আরও রোহিঙ্গা এ দেশে ঢুকে পড়বে। হয়তো এ অঞ্চলে নতুন করে যুদ্ধও লেগে যেতে পারে। কারণ জাতিসংঘ তথা আমেরিকা কর্তৃক বিভিন্ন দেশে করিডোর প্রদানের ফলে অনেক রাষ্ট্র আজ যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও ভঙ্গুর রাষ্ট্রে রূপলাভ করেছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট সাধারণ ও ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামীগ সরকারের পতন হয়। ফলে দীর্ঘ ১৬/১৭ বছরের একদলীয় শাসনের অবসান হয়। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবিকে প্রধান্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্যান্য উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটা অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। সরকার গঠনের পর থেকে গত ৮/৯ মাসে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে চোখে পড়ার মতো তমন কোন সফলতা চোখে পড়ছে না। দেশের সাধারণ মানুষ একরকম দ্বিধা, দ্বন্ধ ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সকলের মধ্যে একধরনের শঙ্কা কাজ করছে। এসবের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশবাসীর অনুমতি ছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলার সাথে আলোচনা না কইরা, ইন্টেরিম UN হিউম্যানিটারিয়ান করিডোর খুলে দিছে চট্টগ্রাম-আরাকান রুটে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলসহ সাধারণ জনগণ সরকারের সমালোচনা করে চলছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার কোন সমালোচনা ও প্রতিবাদকে তেমন কোন গুরুত্বই দিচ্ছে না
ইতোপূর্বে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রদত্ত করিডোরের কবলে পড়ে বহু দেশ ধ্বংস হয়েছে।
“Humanitarian Corridor” আসলে কি? এটা UN এটাকে বলে সাহায্য পাঠানোর পথ। কিন্তু এর বাস্তবতা ভিন্ন। অতীতে বিভিন্ন রাষ্ট্রকে প্রদত্ত করিডোর বিশ্লেষণ করলে ভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসবে। এর ফলে এনজিও টাইপ তাঁবু বসে, ইনটেলিজেন্স অফিসার ঢুকে,“মানবিক সহায়তা”র নামে মিলিটারি ম্যাপিং হয়,বিদেশি অস্ত্র, ড্রোন, ডেটা আস্তে আস্তে ঢুকে, কিছুদিন পর সেই অঞ্চল আর নিজের থাকে না।
কিছু দেশের বাস্তব উদাহরণ দেখি — করিডর কিভাবে দেশ ধ্বংস করে:
বসনিয়ার তুজলা এলাকায় স্থাপিত ক্যাম্প ইগল ঘাটিটি প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের কোন সামরিক ঘাটি ছিলো না। প্রথমে এটা জাতিসংঘের একটি মানবিক করিডোর কিংবা সেইফ জোন এরিয়া ছিলো। পরে সেটা আমেরিকার সামরিক ঘাটিতে পরিনত হয়। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ এখানে প্রথম মানবিক করিডোর তৈরি করে। পরে ১৯৯৫ সালে সার্ব বাহিনী এটি দখল করে নেয়। অতপর ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট সার্ব জনগনকে রক্ষার নাম করে এটি পুনরায় দখল করে স্থায়ীভাবে একটি সামরিক ঘাটি বানিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তারা সারাজিভো এলাকায় ক্যাম্প বাটমির নামে আরও একটা ঘাটি স্থাপন করে।
১৯৯১ সালে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর ইরাকে কুর্দি জনগোষ্ঠীকে সাদ্দাম হোসেনের হাত থেকে রক্ষার জন্য একটি মানবিক করিডোর ও নো ফ্লাই জোন তৈরি করে যা আজও আমেরিকার সামরিক ঘাটি হিসেবে নিয়োজিত আছে। অতপর সেই আমেরিকাই কুর্দি জনগোষ্ঠীকে অস্র দিয়ে সহায়তা করে সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করার জন্য। আজ ইরাকে আমেরিকার ১৪টি ঘাটি বলবত আছে।
সিরিয়াতে মানবিক সাহায্য”র নামে তাবু বসানো হয়েছিলো। এরপর সেই রাস্তাতেই অস্ত্র ঢুকছে, বিদ্রোহী ট্রেনিং ক্যাম্প বসছে, ISIS আর আল-নুসরা এই করিডরের মাধ্যমেই তৈরি হইছে। লিবিয়ায় “Protection corridor” দেয়া হইছিলো গাদ্দাফির বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের জন্য। এক মাসের মধ্যে NATO ওই করিডর দিয়া ঢুইকা পুরা দেশ বোমায় উড়িয়ে দিলো। যুক্তরাষ্ট্রের যে ৩টি ঘাটি আছে তাও একই ঘটনা। সিরিয়ায় যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হয় তখন কুর্দিদের নিরাপত্তা দেবার নাম করে প্রথমে তারা ৩টি মানবিক করিডোর স্থাপন করে যা এখন পাকাপোক্ত ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাটি।
ইউক্রেনে যখন রাশিয়া আক্রমণ করে তখন পোল্যান্ড সীমান্তে জাতিসংঘ একটি মানবিক করিডোর স্থাপন করে, যাতে ইউক্রেনের জনগন নিরাপত্তা পায়, যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ঘাটি।
গাজায় “মানবিক সাহায্য” পাঠানোর জন্য Rafah গেটে করিডোর খুলছিলো।এখন সেই রাস্তাই মোসাদ-এর লোকজন ঢুকতে ব্যবহার করে। গোপন ইন্টেল, হামাস সদস্যদের লোকেশন, সব কিছু ওই গেট দিয়ে বের হয়।
আজ ইসরাইলী বর্বরতায় গাজ আজ ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে। সাজানো গাজা আজ বিরান ভূমিতে পরিনত হয়েছে। গাজার ক্ষুধার্ত ও বোমার আঘাতে আঘাতে শিশুর আর্তচিৎকারে কারো হৃদয় গলে না। গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বায়তুল মোকাদ্দস হিসেবে খ্যাত মুসলমানদের পুরাতন কাবার সেই মসজিদটিকেও।
আফগানিস্তানে”সাহায্য দিতে CIA করিডোর বানিয়েছিলো এই ছুঁতোয় দিয়া বেস তৈরি করে, সেখান থেকেই চালানো হইছে ড্রোন হামলা, খুন, আর গোয়েন্দা অপারেশন।
এইগুলো আজ প্রকাশ্য দিবালোকের মতো প্রমাণিত সত্য।
এখানে প্রশ্ন হলো;বাংলাদেশ যদি আজকে করিডোর খুলে দেয় পরে “এই মানবতার” আড়ালে ৬ মাস পরে যদি সেখানে NGO দিয়ে মিলিটারি ম্যাপিং হয়,কোন এক রাতে surveillance drone নামে, কোন এক সকালে UN interfaith cleric গিয়ে মুসলিম ক্যাম্পে বক্তৃতা দেয়,
আর ২ বছর পরে সেই এলাকাই “safe zone” ঘোষণার নামে দখল হয়। তখন কারো কিছু বলার থাকবে না। সময়ের পথপরিক্রমায় করিডোরের নামে শুধু রং বদলায় নামের শুধু পরিবর্তন হয় ভিতরের বক্তব্য ও গল্প একই থাকে।
অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ আজ দক্ষিণ এশিয়ার একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। একটি অপার সম্ভাবনাময় একটি রাষ্ট্র। সেই পর্তুগিজ আমল থেকে এদেশের উপর সকলের চোখের দৃষ্টি ছিলো যা আজও আছে। আসলে গরীবের সুন্দরী বউ সকলের ভাবি। ইতিহাস থেকে জানাযায় ১৯৭১ সালে ২৩ মার্চ তৎকালীন আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফার্লান্ড্য বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন, আপনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা নেন, কিন্তু আমাদেরকে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘাঁটি বা জাহাজ রাখার স্থান দিন। জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন না হলেও একটুকরো মাটিতে কাউকে স্থান দেবোনা। এমনকি কথিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকেও সেন্টমার্টিনে নৌঘাঁটি তৈরীর জন্য আমেরিকা বহুবার প্রস্তাব দিয়েছিলো। এমন কথা শেখ হাসিনা গলা ফাটিয়ে বহুবার বলেছেন, কিন্তু কোন ভাবে বাংলাদেশের ভূমি কাউকে দিতে রাজি হননি। আজ আওমীলীগ সরকার ক্ষমতায় নেই সীমাহীন দুরনীতির বোঝা মাথায় নিয়ে জনতার আন্দোলনের মুখে বিমানযোগে ভারতে পালিয়ে গিয়ে সেখানে অবস্থান করছে। অনেকের মনে আজ একটাই প্রশ্ন অন্তবর্তীকালীন সরকার কেনো করিডেরের মতো এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। পৃথিবীর শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর চোখ সব সময় থাকে অপার সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রগুলোর দিকে কিভাবে প্রভাববিস্তারের মাধ্যমে নিজেদের ঘাঁটি স্থাপন করা যায়।
এদিক থেকে সবার আগে রয়েছে বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্র আমেরিকা। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য চীনের ইন্ডিয়ান ওশান অ্যাক্সেস ব্লক করা, সাহায্যের নামে মিলিটারি লজিস্টিক ঢুকানো, মানবাধিকার” দিয়া স্পাই হাইওয়ে বানানো।
এ দৌড়ে বসে নেই ইসরায়েল, আরাকানকে সাউথ ইস্ট এশিয়ার স্পিরিচুয়াল গেট,মুসলিম জাগরণ শুরু হওয়ার আগেই এখান দিয়ে থামাতে চায়, থার্ড টেম্পলের প্রফেসাইজড জায়গাগুলার একটার ভিতরে চট্টগ্রাম–আরাকান করিডোর পড়ে।
এরপর তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত, কালাদান মাল্টি-মোডাল প্রজেক্টের ফাইনাল সিল এখানে, উত্তর-পূর্ব বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশের জমি ব্যবহার করতে চায়, গাজওয়াতুল হিন্দ আসার আগেই পূর্বদিক সীল করে দিতে চায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, চীন আর রাশিয়া কি চুপ থাকবে?
আরাকানে রয়েছে চিনের বিলিয়ন ডলারের করিডোর যা Kyaukphyu Port নামে খ্যাত। UN করিডোর মানে ওদের চোখে NATO presence,পাল্টা জবাব দিতে পারে স্পাই অপস বা বিরোধী গোষ্ঠী গুলারে ফান্ডিং দেয়। যাতে এসব এলাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান থাকে।
অন্যদিকে মিয়ানমারকে নিয়মিত অস্ত্র দেয় রাশিয়া। পশ্চিমাদের ঢুকতে দেখলে স্বাভাবিকভাবে খুশি হবে না, ডিপ্লোম্যাটিক চাপে ফেলবে, সরাসরি সংঘর্ষে যাবে না, কিন্তু চুপও থাকবে না। সবকিছু মিলিয়ে একটা নতুন কোল্ড ওয়ারের রেখা এখন আঁকা হচ্ছে আরাকানে।
আরাকান কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
কারণ এই জায়গাটা: চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোডের গেইটওয়ে, বঙোপসাগরের প্রবেশপথ, বৌদ্ধ-হিন্দু-মুসলিম জোনের প্রাকৃতিক বাফার, সাউথ ইস্ট এশিয়ার মুসলিম পরিচয়ের স্পিরিচুয়াল ফ্ল্যাঙ্ক, ভবিষ্যতের গাজওয়াতুল হিন্দের মজবুত র্যালি-পয়েন্ট।
আরাকান হারানো মানে পূর্ব দিকের ফটক বন্ধ করে ফেলা।
এবার আসি UN এর “মানবিক সাহায্য”র লোগোর আড়ালে আসলে কারা আছে? এর আড়ালে আছপ
→ WFP, WHO, UNHCR = পশ্চিমা গোয়েন্দাদের লেজার স্ক্যানার,MSF, Save the Children, ফিল্ড ম্যাপিং,লোকাল মনিটরিং,UN Troops, NATO ছায়া বাহিনী। মোটকথা এই করিডেরের আড়ালে এখানে আলাদা একটি নতুন খ্রিস্টান রাষ্ট্র গড়ার মহা পরিকল্পনা।
প্রশ্ন হলো এই করিডোর দিয়া বাংলাদেশ কী পাবে?
কিছু ডলার, নিজের মাটির ভেতরে surveillance বেস, টেকনাফ আর নাফ নদীর পাশে ড্রোন রুট,
যুদ্ধ হলে পূর্ব ফ্রন্ট কাদের হাতে থাকবে, আপনিই বলেন
→ ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে একটা UN ম্যানেজড মুসলিম “থিম পার্ক”। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এক বক্তব্যে বলেছেন রোহিঙ্গারা আমাদের মেহমান, তাইবলে মেহমানের জন্য কেউ বাসা বিক্রি করে না। কিন্তু বাংলাদেশ এখন মিলিটারি এলাকা ভাড়া দিচ্ছে প্যাকেজশুদ্ধ। মানবিক করিডোর হতে নাহতেই গত কয়েকদিন আগে দেখাগিয়েছে বাংলাদেশের ১০ কিলোমিটারে অধিক ভিতরে আরাকান আর্মি ঢুকে পাহাড়া দিচ্ছে। বাংলাদেশের আর্মি চুপচাপ। পাহাড়ি অঞ্চলে অনেক ক্যাম্প বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গত ডিসেম্বরের দিকে পরিবেশের দোহাই দিয়ে সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হলেও আজও চালু হয়নি। নতুন করে এই মানবিক করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত দেশের স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন। মূলতঃ এই করিডোর প্রদান করা হচ্ছে মায়নামার ভিত্তিক একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে। তাদের মূল উদ্দেশ্য এ অঞ্চলে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা। রাখাইন রাজ্য (আরাকান) ভিত্তিক একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। যা ১০ এপ্রিল ২০০৯ এ প্রতিষ্ঠিত, এএ হল ইউনাইটেড লীগ অফ আরাকান (ইউএলএ) এর সামরিক শাখা। আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবি তুলে প্রায় এক যুগ আগে এর সাংগঠনিক উদ্যোগ শুরু হয়। কেউ কেউ মন্তব্য করেন করিডোরের আড়ালে এ এলাকায় আরাকান, বাংলাদেশের চট্রগ্রাম, বান্দরবান, ভারতের মিজোরাম নিয়ে নতুন খৃষ্টান রাষ্ট্র গঠন করা। মূল কারণ এ এলাকায় আমেরিকার আধিপত্য বিস্তার করা। নতুন রাষ্ট্র গঠনের নীলনকশার কারণে আজ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে।
তাছাড়া মায়ানমার সরকারকে বাদ দিয়ে যদি করিডোর চালু হয়, তাহলে জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক দায়ভার থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে পারে। তাই মানবিকতা ও বাস্তবতার সন্ধি দরকার। সব পক্ষ রাজি হলেও, করিডোরের সাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি সংযুক্ত করতে হবে। শুধু ত্রাণ নয়, একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ও সামাজিক সমাধান দরকার। এক্ষেত্রে করিডোর ব্যবস্থাকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করে করিডোরের বিনিময়ে প্রত্যাবাসন ধাঁচে আলোচনার সুযোগ তৈরি করা উচিত। আবার বাংলাদেশকে স্বাধীন পর্যবেক্ষণ ও অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় এই করিডোর দেশের নিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি হবে না।
রাখাইনের প্রস্তাবিত মানবিক করিডোর আসলে একটি বহুমাত্রিক কৌশলগত ক্ষেত্র, যেখানে মানবতা, ভূরাজনীতি, নিরাপত্তা ও প্রত্যাবাসন, সব একসাথে জড়িত। তাই বাংলাদেশের কেবল মানবিকতার ভাষা নয়, কৌশলের ভাষা ব্যবহার করাটাও জরুরি। এই করিডোরের মাধ্যমে সহানুভূতির প্রবাহ যেমন তৈরি হতে পারে, তেমনি অসতর্ক হলে তা-ই হয়ে উঠতে পারে নতুন সংকট সূত্রপাতের কারণ। যা এই এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে যেতে পারে। এতেকরে কারো ক্ষতি না হলেও বাংলাদেশের বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই কারো প্রলোভনে পড়ে দেশের স্বার্থ বাদদিয়ে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত না নিয়ে করিডোরের মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির হাত থেকে রক্ষা করা হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ, অন্যথায় এটি হবে একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
Leave a Reply