আর এ লায়ন সরকার: গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বিএনপি দেশের অন্যতম শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আরও বেশি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। কিন্তু সেই সাথে দলটির ভেতরে অন্তর্কোন্দলও ক্রমেই তীব্র আকার ধারণ করছে। গত আট মাসে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী, যা তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ, বৈরিতা ও অনাস্থা সৃষ্টি করছে।
বিএনপির শীর্ষ নেতারাও স্বীকার করেছেন সহিংসতার বিষয়টি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সংঘাত-সহিংসতা হচ্ছে না, সেটা আমরা বলবো না। কিন্তু এটিকে কোনোভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে না। জড়িতদের শাস্তি হিসেবে বহিষ্কার, পদ স্থগিত ও শোকজ করা হচ্ছে, জাতীয় থেকে তৃণমূল—কেউ ছাড় পাচ্ছে না।”
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বলছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই তিন মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ৩৬ জন, যার মধ্যে কেবল বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষেই মারা গেছেন ২৬ জন। আগস্ট থেকে মার্চ পর্যন্ত আট মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ৭৬ জন নিহত হয়েছেন, এর মধ্যে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বেই প্রাণ গেছে ৫৮ জনের।
অর্থনৈতিক স্বার্থ ও আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির অন্তঃকলহের পেছনে মূল কারণ অর্থনৈতিক স্বার্থ, ক্ষমতা ও স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। তাঁরা মনে করছেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, এসব সংঘর্ষের প্রবণতা আরও বাড়তে পারে।
দুই মর্মান্তিক ঘটনার প্রেক্ষাপট গত ৫ এপ্রিল রংপুরের বদরগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন দলীয় কর্মী লাভলু মিয়া। উপজেলার ব্যবসায়ীকে মারধরের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে, সেখানেই প্রাণ হারান তিনি। নিহতের ছেলে মো. রায়হান কবির বলেন, “আমার বাবা দলের জন্য জেলে গেছেন, গুলিও খেয়েছেন। অথচ আজ নেতারা নীরব। এই যদি হয় রাজনীতি, তাহলে দেশের জনগণের কাছে অনুরোধ—কেউ যেন রাজনীতি না করে।”
এর এক সপ্তাহ পর, ১১ এপ্রিল গাজীপুরের ধীরাশ্রম এলাকায় কৃষকদল নেতা রাকিব মোল্লাকে নিজ বাড়ির কাছেই কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরিবারের দাবি, ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বেই রাকিবের মৃত্যু হয়েছে, আর খুনের পেছনে বিএনপিরই একাংশ জড়িত। নিহতের মা রুবিনা আক্তার সীমা বলেন, “রাকিব যে জায়গায় পৌঁছাতে পারতো, অন্যরা তা পারবে না বলেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। বিএনপির কিছু লোক চায় না মামলাটা হোক। তাহলে কি বিএনপির লোক অপরাধ করলে মাফ?”
এই সব ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কাঠামো এবং শৃঙ্খলাবোধের দুর্বলতা ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। দলটির জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সতর্ক বার্তা হতে পারে।
Leave a Reply