মো : ওয়াহিদ খান, কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি: দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মোবাইল রিচার্জ কার্ডের সূত্র ধরে আলোচিত তিন খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে মূল ঘাতক মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুল (৩১)কে রাজধানীর জুরাইন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন বিথী আক্তার (২৪), তার পুত্র রাফসান (৪) এবং একই বাসার ভাড়াটিয়া নুপুর (২৫)।
২৮ এপ্রিল বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) জাহাঙ্গীর আলম এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, গত ২৫ এপ্রিল রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের পূর্ব আগানগরে মাকসুদা গার্ডেন সিটির সামনে থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় নুপুরের মস্তক ও হাত-পা বিহীন খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর ২৭ এপ্রিল হাসনাবাদ নৌ পুলিশ ফাঁড়ির আওতাধীন পোস্তগোলা ব্রিজের পূর্ব পাশে বুড়িগঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীর থেকে উদ্ধার করা হয় আরও তিনটি খণ্ডিত অংশ, যার মধ্যে ছিল একটি পা এবং দুটি উরু।
পরে ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত করে পুলিশ মহিউদ্দিন হাওলাদার ওরফে শিমুলকে শনাক্ত করে এবং তাকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার বিষয়ে বিস্তারিত স্বীকারোক্তি দেয়।
পুলিশ জানায়, নিহত বিথী আক্তার শিমুলের কারখানায় চাকরি করতেন। চাকরির সুবাদে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ২০১৭ সালে তারা বিয়ে করেন। তবে প্রথম স্ত্রী রুমার জানার পর তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর বিথী রুবেল নামের আরেক যুবককে বিয়ে করে এবং তাদের ঘরে রাফসান জন্মগ্রহণ করে। কিছুদিন পর শিমুল আবার বিথীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে মীরেরবাগ এলাকায় একসঙ্গে বসবাস শুরু করে।
শিমুলের প্রথম স্ত্রী রুমা আবারও এ সম্পর্কে জানতে পেরে তাদের মধ্যে কলহ শুরু হয়। অন্যদিকে বিথী শিমুলকে পুনরায় বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ২৫ এপ্রিল সকালে শিমুল বিথীর বাসায় গেলে দুজনের মধ্যে তীব্র ঝগড়া হয়। এ সময় শিমুল গামছা দিয়ে বিথীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ঘটনা দেখে ফেলায় বিথীর চার বছরের সন্তান রাফসানকেও একইভাবে হত্যা করে সে। পরে প্রতিবেশী নুপুর চিৎকার করলে তাকেও হত্যা করা হয়।
ঘটনার পর তিনজনের মরদেহ টুকরো টুকরো করে প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেয় ঘাতক শিমুল। রাফসানের ছয় টুকরা লাশ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বেয়ারা এলাকায় ফেলে দেয়া হয়। নুপুরের খণ্ডিত লাশ মাকসুদা গার্ডেন সিটির সামনে ফেলে রাখা হয় এবং বিথীর লাশ বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলে দেয়া হয়।
গ্রেপ্তারের পর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাতেই বেয়ারা পূর্বপাড়া মিন্টু মিয়ার জমির ঝোপ থেকে শিশুপুত্র রাফসানের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে। তবে এখনো বিথী ও নুপুরের মস্তক উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাজহারুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply