1. masudkhan89@yahoo.com : Ghoshana Desk :
  2. zunayedafif18@gmail.com : Mahir Al Mahbub : Mahir Al Mahbub
  3. masudkhan89@gmail.com : Masud Khan : Masud Khan
হাওরে ধান কাটার যন্ত্র বিতরণ নিয়ে প্রতারণা - দৈনিক ঘোষণা
ব্রেকিং নিউজ :

হাওরে ধান কাটার যন্ত্র বিতরণ নিয়ে প্রতারণা

  • আপডেট সময় : রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৯ দেখেছেন

ভর্তুকির অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাত করে এক যন্ত্র বিতরণ করা হলো দুইজনের নামে!

সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জে সরবরাহকারী কম্পানি হাওরে ধান কাটার একটি হার্ভেস্টার যন্ত্র দুই কৃষককে বরাদ্দ দিয়ে সরকারের অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি র্দূনীতিবাজ চক্র। এ ঘটনায় জড়িত যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এসকিউ ট্রেডিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির স্থানীয় কর্মকর্তা ও কৃষি বিভাগের লোকজন। এ ঘটনায় জেলায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগ গত বুধবার যন্ত্রটি উদ্ধার করার পর প্রতিবাদী কৃষকের উপর চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের । জানা গেছে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে এসকিউ ড্রেডিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি প্রদত্ত ১৩ ও ১৬ ডিএসিডিওএনজি (ইঞ্জিন ও চেসিজ নম্বর) কম্বাইন হার্ভেস্টার মেশিন ২০২২ সালের ১৬ জুন অর্থ বছরের ১৪ দিন আগে হস্তান্তর করে কৃষি বিভাগ। একটি যন্ত্র সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোলেরগাও গ্রামের কৃষক আব্দাই মিয়ার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কৃষকের সঙ্গে চুক্তি করে বিতরণ করার কথা থাকলেও কোম্পানির লোকজন কোনও লিখিত চুক্তিই করেনি। শুধু লোক দেখানো হস্তান্তর করলেও যন্ত্রটি পরে দিবে বলে কৃষককে হয়রানি করতে থাকে। যন্ত্র কৃষককে না দিয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলার কাইক্যারপাড় গ্রামের আরেকজন কৃষককে যন্ত্রটি দিয়ে দেয় কোম্পানির সেলস ম্যানেজার মিনহাজ আহমদ ও রিকভারি অফিসার আতিকুর রহমান আতিক তাদেরকে সহযোগিতা করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান।

২০২২ সালের বন্যার ভয়াবহতা দেখিয়ে এসকিউ কম্পানির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা যন্ত্রটি হস্তান্তর না করে তাদের হাতে রেখে দেন। সরকারের কাছ থেকে দুই কৃষককে দুটি যন্ত্র দেওয়ার কথা বলে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ভর্তুকি হাতিয়ে নেয় কোম্পানিটি। বরাদ্দ পাওয়া কৃষক যন্ত্র ফেরত চাইলে সময় কালক্ষেপন করতে থাকে কোম্পানির লোকজন। এক পর্যায়ে কৃষক হাল ছেড়ে দেন। এ ঘটনায় ওই কৃষক উপজেলা কৃষি অফিসকে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন গত বছর। কৃষি বিভাগ শুনানী করলেও বিষয়টি সমাধান হয়নি। তাই সরকারি ভর্তুকির ২২ লক্ষ কৃষককে ফেরত দিতে তারা একাধিক চিঠি দেয়। এতে ওই কৃষক বারবার কম্পানির লোকদের যোগাযোগ করলে তারা বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যায়। সম্প্রতি সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগ বরাদ্দকৃত যন্ত্রের আপডেট তথ্য করার সময় কৃষককে যন্ত্রটি এনে দিতে নির্দেশনা দেয়। এতে হন্য হয়ে ওই কৃষকের ভাই শাহ আলম দিলোয়ার জেলা ব্যাপী যন্ত্রটি খুজতে থাকেন। শান্তিগঞ্জ উপজেলার কাইক্যারপাড় গ্রামের মসদ্দর আলীর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারেন আব্দাই মিয়ার যন্ত্রটি তাকে দিয়েছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলার কোম্পানির মিনহাজ ও আতিক। ওই কৃষকের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে কম্পানি ও কৃষি বিভাগ। তাকে যথাসময়ে যন্ত্রটি না দিয়ে গত বছর পুরনো এই যন্ত্রটি দেয় বলে অভিযোগ করেন কৃষকের ছেলে আব্দুল হামিদ। বুধবার বিকেলে যন্ত্রটি সদর উপজেলার সাক্তারপাড়া গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়।

এদিকে প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ পেলে কৃষকের প্রতিবাদী ভাই শাহ আলম দিলোয়ারকে ফাঁসাতে শান্তিগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে মারধর ও চাঁদাবাজির মামলা করেছেন কম্পানির রিকভারি অফিসার আতিক। এখন পুলিশ দিয়ে প্রতিদিন তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।

আব্দাই মিয়ার ছোট ভাই শাহ আলম দিলোয়ার বলেন, আমরা চার ভাই আলাদা পরিবারে বসবাস করছি গত ৪০ বছর ধরে। আমার ভাই আব্দাই মিয়া একটি যন্ত্র বরাদ্দ পান। কিন্তু বিতরণ দেখিয়ে যন্ত্র দেয়নি মিনহাজ ও আতিকসহ কম্পানির লোকজন। পরে এই যন্ত্র কাইক্যারপাড় গ্রামে আরেক উপজেলার কৃষককে দিয়ে দেয়। একটি যন্ত্র দিয়ে সরকারের কাছ থেকে দুটি যন্ত্রের অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। আমি আমাদের যন্ত্রটি উদ্ধার করায় তারা এখন আমার নামে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমার অন্য ভাইয়ের যন্ত্রগুলোরও কোন ওয়ারেন্টি সেবা দেয়নি। যন্ত্রগুলো কাজে আসেনি। চারটি যন্ত্র দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কম্পানির লোকজন।

কাইক্যারপাড় গ্রামের কৃষক মসদ্দর আলীর ছেলে আব্দুল হামিদ বলেন, আমরা গরিব চাষী। ২২ সালের বন্যার আগের দিন আমার বাবার নামে যন্ত্রটি বিতরণ হলেও আমরা আনিনি। পরে কম্পানিও যোগাযোগ করেনি। বন্যার এক বছর পর যোগাযোগ করলে মিনহাজ ও আতিক আমাদেরকে পুরনো একটি নষ্ট যন্ত্র দেয়। আমরা নেইনি। পরে আমাদের ওই যন্ত্রটি দেয়। এটি গত বুধবার (২৩ এপিল) উদ্ধার করে কৃষি বিভাগ প্রকৃত মালিককে দিয়ে দিয়েছে। এই প্রতারণার সঙ্গে শান্তিগঞ্জের সাবেক কৃষি অফিসারও জড়িত। আমি যন্ত্র বাবত চার লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। এখন হাওরে ধান কাটার সময়ে ধান কাটতে পারছিনা।
এসকিউ ট্রেডিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানির সেলস ম্যানেজার মিনহাজ আহমদ এক উপজেলার কৃষকের যন্ত্র আরেক উপজেলার কৃষককে কিভাবে দেওয়া হলো এবং সরকারের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ভর্তুকি তুলে নেওয়া হলো এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে ওই যন্ত্র কিভাবে অন্য উপজেলার লোক পেলো তিনি জানেন না বলে জানান। যন্ত্র দেওয়া হলেও কেন চুক্তি করা হলোনা জানতে চাইলে তিনি কোন জবাব দিতে পারেননি।

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, এই যন্ত্রটি কোথায় আছে আমরা জানতাম না। দীর্ঘদিন ধরে ওই কৃষককে নোটিশ পাঠিয়ে সরকারি ভর্তুকি ফেরত দেওয়ার কথা বলেছি। অবশেষে কৃষককে নিয়ে সাক্তারপাড়া থেকে যন্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা আজাদ বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস আমাকে বিষয়টি অবগত করেছে। আমরা ওই কম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন মহলকে লিখবো।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

একই রকম সংবাদ
© সকল স্বত্ব দৈনিক ঘোষণা অনলাইন ভার্শন কর্তৃক সংরক্ষিত
Site Customized By NewsTech.Com