সিংগাইর, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কাইচ থোর ও আধা-পাকা বোরো ধানে ব্লাস্ট রোগ ও ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। জীবিকা নির্বাহের অন্যতম অবলম্বন ধানের ক্ষেতে দেখা দিয়েছে ‘নেক ব্লাস্ট’ ও ‘পাতা ব্লাস্ট’সহ নানা ধরনের ছত্রাকজনিত রোগ। ধানের চারা অবস্থা থেকে শুরু করে পাকার আগ পর্যন্ত যেকোনো সময়ে এসব রোগের আক্রমণ হতে পারে, যা ফসলের মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি করেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার সায়েস্তা ইউনিয়নের গোপালনগর, টান গোপালনগর এবং জামির্ত্তা ইউনিয়নের রামকান্তপুর, মধুরচর ও চন্দননগর চকের বিস্তীর্ণ ব্রি-২৯ জাতের ধানক্ষেতে গত কয়েকদিন ধরে এসব রোগের প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে প্রায় ৩ থেকে ৪ শত বিঘা জমির ধান আক্রান্ত হয়েছে, যা নিয়ে তারা চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
জানা গেছে, ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ধানে শীষ বের হওয়ার পর তা শুকিয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। সাধারণত যেসব জমিতে অতিরিক্ত ইউরিয়া সার ব্যবহার করা হয় এবং যেসব জমির মাটিতে পানি ধারণক্ষমতা কম—বিশেষ করে বেলে বা দু’আঁশ মাটিতে চাষ করা ধানক্ষেতে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া বীজ, বাতাস, কীটপতঙ্গ ও আবহাওয়ার মাধ্যমেও ছত্রাক ছড়িয়ে পড়ছে। রাতে ঠাণ্ডা, দিনে গরম ও সকালে পাতলা শিশির পড়ার কারণে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। এ রোগ তিনটি নামে পরিচিত—পাতা ব্লাস্ট, গিট ব্লাস্ট ও নেক/শীষ ব্লাস্ট। তবে এ অঞ্চলে বর্তমানে পাতা ব্লাস্ট ও গিট ব্লাস্টের প্রকোপ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, গোপালনগর গ্রামের কৃষক আঃ সালাম বলেন, “২ পাখি জমিতে ব্রি-২৯ জাতের ধান চাষ করেছি। কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে দেখি বৃষ্টির পর জমির ধানের সমস্ত পাতা যেন পুড়ে গেছে।”
জামির্ত্তা ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামের কৃষক চান মিয়া বলেন, “আমি ৪ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। এখন জমিতে গেলে চোখে পানি চলে আসে। কাইচ থোর অবস্থা হলেও ধান পাকা মনে হচ্ছে।”
টান গোপালনগর গ্রামের আরেক কৃষক জানান, “আমি ৩ বিঘা জমিতে ধান করেছি। এতদিন সব ঠিকঠাক ছিল। হঠাৎ দেখি ধানের পাতায় ডিম্বাকৃতির ছোট ছোট ধূসর ও সাদা দাগ পড়েছে। দাগগুলোর চারপাশ গাঢ় বাদামি রঙের এবং মাঝেমধ্যে পাতাগুলো যেন পুড়ে গেছে মনে হয়। পরে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার সরকারকে বিষয়টি জানাই। তিনি জমি দেখে জানান, ধান ব্লাস্ট ও পাতা মোড়ানো রোগে আক্রান্ত হয়েছে। পরে আমাকে ‘সাকসেস’ ও ‘ট্রুপার’ নামের দুটি ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেন।”
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, “চলতি বছর সিংগাইর উপজেলায় ৮ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বেলে-দু’আঁশ মাটির কিছু অংশে ব্লাস্ট ও ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যথাযথ ছত্রাকনাশক স্প্রে ও আক্রান্ত জমিতে পানি ধরে রাখার মাধ্যমে দ্রুত এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।”
Leave a Reply