শাহাদাৎ হোসেন সরকারঃ গত ৫ আগস্ট ২০২৪-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা চরম অবনতির শিকার হয়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শাসনব্যবস্থার অভাব, এবং ছাত্র সমাজের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত হওয়ায় দেশজুড়ে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতা—ছিনতাই, ধর্ষণ, খুনের মতো ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক।
নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অভিভাবকরা, আর অকালে ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য নিরীহ জীবন । সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটেছে। রাজনৈতিক প্রভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অযোগ্য শিক্ষকরা প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে ছাত্রদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন, আবার ছাত্ররাও ক্ষমতার দম্ভে শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করছে।
সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন স্কুল কলেজ গুলোতে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো হচ্ছে শিক্ষকদের এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও উদ্বেগজনক ।
ছাত্র রাজনীতি এখন আর জাতি গঠনের হাতিয়ার নয়, বরং এটি অপরাধ ও সহিংসতার মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনগুলো ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, এবং ভিন্নমত দমনে সহিংসতা চালাচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তার অভাব এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির কারণে অভিভাবকরা আতঙ্কিত।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ছাত্রদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ।
অন্যদিকে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পরিচালিত ছাত্র সংগঠনগুলোর হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন:
রাজনৈতিক বিবেচনা বাদ দিয়ে যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ করা । ক্যাম্পাসে সহিংসতা ও চাঁদাবাজি বন্ধ করে শিক্ষামুখী কার্যক্রম জোরদার করাসহ সরকার পরিবর্তন হলেও যেন শিক্ষানীতি বারবার পরিবর্তন না হয়, সে ব্যাপারে সর্বদলীয় সমঝোতা গড়ে তোলা । শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত কমিশন গঠন করে শিক্ষার মানোন্নয়ন করা ।
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই মেরুদণ্ডই ভেঙে পড়ার উপক্রম। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা এবং অপরাধপ্রবণতা রোধে রাষ্ট্র ও সমাজকে এখনই জাগ্রত হতে হবে। অন্যথায়, একটি অন্ধকার বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছে ।
Leave a Reply