মল্লিক জামাল :- সরকারি বিধি অনুযায়ী উপজেলা প্রকৌশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলী তাদের অফিস কক্ষে কোনো ধরনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ব্যবহার করতে পারবেন না। তবে বরগুনার তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন ও উপ-সহকারী গালিফ ছত্তার এর ব্যতিক্রম। তারা সরকারী নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের বিলাসিতার জন্য ইচ্ছামতো অফিস সংস্কার ও সাজসজ্জা করে অফিস কক্ষে এসি লাগিয়েছেন। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ ভবনের অন্য রুমের ডিজাইন পরিবর্তন করে নিজেদের ইচ্ছামত রুম সংস্কার করেছেন।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরে উপজেলা পরিষদের ভবন ও ডরমেটরি ভবনের সংস্কারের জন্য ১৮ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৭ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মহিউদ্দিন আহম্মেদ। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকেন উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বিধি অমান্য করে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে প্রাক্কলন ব্যতীত ঠিকাদার কর্তৃক নিজ দপ্তরের দুই জন উপ-সহকারী প্রকৌশলীর রুমের ডিজাইন পরিবর্তন করে থাই-গ্লাস দিয়ে ওয়াল পাটিশন দিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) স্থাপন করেন। এই দপ্তরের হিসাবরক্ষন কর্মকতার জন্য আলাদা পাটিশন করে রুম ও টয়লেট স্থাপন করে দেওয়া হয়। এতে তৎকালীন সময়ে অন্য দপ্তরের কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পরে এসি’র বিল ঐ প্রকল্পের টাকা দিয়ে পরিশোধ করতে পারেনি। উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেনের ভাষ্য মতে, দুই উপসহকারী প্রকৌশলী’র এসি বিলাসের জন্য নিজ দপ্তরের বিভিন্ন খাতের খরচ দেখিয়ে এসি স্থাপন করেন। কিন্তু অদ্যবধি প্রাক্কলন অনুযায়ী ঐ প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় এখনো ঠিকাদারকে বিল পরিশোধ পারেনি। এদিকে উপজেলা পরিষদের ভবন ও ডরমেটরি ভবনের সংস্কারের বেশির ভাগ কাজ উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর এবং নিজ ডরমেটরির রুমে করান হয়। যা প্রাক্কলনে ছিল না বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী নিজেও এসি ব্যবহার করতে না পারলেও তার রুমে একটি এসি স্থাপন করা রয়েছে। এছাড়াও ঐ দপ্তরের দুইটি এসিসহ সকল বিদুৎ বিলও পরিশোধ করেন সরকারী টাকায়। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘১০ম গ্রেডের কর্মকর্তা হয়ে ইচ্ছমতো এসি ব্যবহার করে যাচ্ছেন । যা সরকারী বিধি বর্হিভূত। এই দপ্তরের লোকজন ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই প্রকল্পের টাকা দিয়ে নিজেদের বিলাসিতার জন্য তাদের রুম ইচ্ছামতো সংস্কার করেছেন। দ্রুত তদন্ত করে ব্যববস্থা নেওয়ার দাবি করছি।’
তালতলী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মু. আ. মোতালিব বলেন, ‘কিভাবে সরকারী টাকায় নিজেদের বিলাসিতার জন্য এসি স্থাপন করেন। সেই এসির বিদুৎ বিল আবার সরকারী টাকায় পরিশোধ করেন। তিনি আরও বলেন, সরকারী টাকা অপচয় করে একই দপ্তরের দুইটা এসি ব্যবহার করছেন কোন বিধিতে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করছি।’
এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এক রুমে তিন জন উপসহকারী প্রকৌশলী বসেন। তাই তাদের টিএ বিল ও সরকারী ভাবে অফিস খরচের বিল দিয়ে এসি স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রথমে উপজেলা পরিষদের ভবন ও ডরমেটরি ভবনের সংস্কারের টাকা দিয়ে এসি দেওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের থেকে প্রশ্ন ওঠার কারণে এই ভাবে এসি স্থাপন করা হয়েছে।’ উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। ঐ দপ্তরের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানাতে পারবো।’
বরগুনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মেহেদী হাসান খান বলেন, ‘প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীরার এসি ব্যবহার করতে পারবে না। তারা যেহেতু উপজেলা পরিষদ ভবনে থাকেন সেখানের কর্তৃপক্ষ দেখবেন।’
Leave a Reply