মোঃ বেলায়েত হোসেন, পলাশ, নরসিংদী: নরসিংদীর পলাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ব্যাটারী কারখানা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়। আজ সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল ১১টা থেকে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তরের (ঢাকা) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন এর নেতৃত্বে অভিযানকালে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের নরসিংদী কার্যালয়ের উপপরিচালক মো: কামরুজ্জামান, পলাশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ. এইচ. এম. ফখরুল হোসাইন ও পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মনির হোসেন।
অভিযানকালে ব্যাটারী কারখানার কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় বিদ্যুৎ ও জেনারেটর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। পলাশ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ. এইচ. এম. ফখরুল হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
স্থানীয়রা জানান, পলাশের চরসিন্দুর ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়ার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে পরিত্যাক্ত আশরাফ টেক্সটাইল ভাড়া নিয়ে ঢাকার মিরাজ নামে এক ব্যক্তি কয়েকজন ভীনদেশীকে সাথে নিয়ে একটি ব্যাটারী কারখানা তৈরী করেন। ব্যাটারী কারখানা থেকে নির্গত দ্রবনীয়পদার্থ জমির পানিতে মিশে আশপাশের হাঁস-মুরগি মারা যাচ্ছে, পানিতে থাকা ব্যাঙ মরে ভেসে উঠছে, মাছের শুন্যতা দেখা দিয়েছে, জমিতে নামলে খাঁজলি পাঁচড়া দেখা দিচ্ছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সুরাহার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে সহযোগিতা কামনা করেন কৃষকরা। এপ্রেক্ষিতি স্থানীয় প্রশাসন একাধিকবার কারখানাটি পরিদর্শন করে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় উৎপাদন বন্ধ করে সীলগালা করে দেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ কোন এক অদৃশ্য প্রভাবশালীর ইঙ্গিতে রাতের আধারে তালা ভেঙ্গে পুনরায় কারখানা চালু করে উৎপাদন শুরু করেন। যেসকল ব্যাটারী বিভিন্ন বাস, ট্রাক সহ যানবাহনে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এরপরও এটি বন্ধ না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে হাই কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। এমনকি জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, বিক্ষোভ মিছিল, সভা সমাবেশ করেও তা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যাচ্ছিলনা।
এই কারখানা বন্ধের বিষয়ে স্থানীয়দের যারাই প্রতিবাদ করতে আসেন তাদের নামে মিথ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে কারখানা কর্তৃপক্ষ পোষ্টার সাটিয়ে দেন এবং রাতের আধারে বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়ে হয়রানী করেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় যুবক রাকিব জানায়, এই ব্যাটারী কারখানার ফলে এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, ফলফলাদি নস্ট হয়ে যাচ্ছে, ধানের জমিতে ধানের পরিবর্তে চিটা হচ্ছে, পানিতে মাছতো দুরের কথা কোন কীট-পতঙ্গও বেঁচে নেই। এছাড়া এলাকার টিউবয়েল দিয়ে গন্ধযুক্ত পানি বের হচ্ছে। সবমিলিয়ে এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে আসছে। যার জন্য স্থানীয়রা এই কারখানা উচ্ছিদে স্থানীয়রা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
পলাশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার জানান, স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সত্যতা পাওয়া গেছে। এপ্রেক্ষিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এখন তারা যতি এর ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। এই কারখানা থাকলে কৃষি জমিতে হুমকি হয়ে ধারাবে বলে তিনি জানান।
স্থানীয় পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসফিকা হোসেন জানান, বিষয়টি জানার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করে অসঙ্গতি পাওয়ায় উৎপাদন বন্ধ করা সহ কারখানা সীলগালা করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তারা আবার হাই কোর্ট থেকে কাগজপত্র এনে চালু করেন। এরপর স্থানীয়রা উচ্চ আদালতের স্বরনাপন্ন হলে তাদের কাগজপত্র দেখা হয়। এই প্রেক্ষিতে ব্যাটারী কারখানা কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। তারা রাতের আধারে তালা ভেঙ্গে পুনরায় কিভাবে আবার শুরু করে ভেবে পাচ্ছিনা।
এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ কামরুজ্জামান সরকার জানান, পলাশে অবস্থিত ব্যাটারী কারখানার কোন পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এছাড়া তাদের কোন প্রকার ইটিপিও নেই। তারা পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করলে কারখনা পরিদর্শন করে ইটিপি না পাওয়ায় ইটিপি স্থাপন করে পুনরায় আবেদন করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। যার জন্য ইটিপি ছাড়া কারখানা চালাতে নিষেধ করা হয়েছে। সর্বশেষ পরিবশে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আজ তা বিচ্ছিন্ন করে দেন।
Leave a Reply