আশিকুর রহমান রানা (সিলেট জেলা প্রতিনিধি): সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সিলেট জেলা সভাপতি এম ইলিয়াস আলীর সন্ধান চেয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে বিএনপি।
১৭ এপ্রিল দুপুরে সিলেট বিএনপির পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন নেতৃবৃন্দ। এসময় জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে ইলিয়াস আলীকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত পাওয়ার জোর দাবি জানানো হয়েছে।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে বলা হয়, ‘‘সিলেট জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে গভীর উদ্বেগ ও বেদনাভরে জানাচ্ছি যে, দেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব এম ইলিয়াস আলীকে তাঁর বাসার নিকটস্থ এলাকা, বনানী, ঢাকা থেকে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল দিবাগত রাতে তাঁর ব্যক্তিগত গাড়ি চালক আনছার আলীসহ গুম করা হয়। আজ তার ১৩ বছর পূর্ণ হলো, কিন্তু আজও তাঁদের কোনো সন্ধান মেলেনি ।
ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর তৎকালীন সরকার প্রধানসহ সরকারের একাধিক উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তি এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও আজ অবধি তা বাস্তবায়ন হয়নি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেবল ইলিয়াস আলীই নয়, বরং সিলেটের সাবেক ছাত্রনেতা ইফতেখার আহমদ দিনার ও জুনেদ আহমদসহ আরও অনেক বিএনপি নেতাকর্মী গুমের শিকার হয়েছেন, যাদের এখনো কোনো হদিস মেলেনি।
সম্প্রতি ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর, বিভিন্ন কথিত ‘বন্দিশালা’ বা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্ত হয়েছেন একাধিক গুম হওয়া ব্যক্তি। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের সন্তানদের মুক্তির পাশাপাশি নতুন করে আলোচনায় এসেছে এম ইলিয়াস আলীর নাম। আমাদের বিশ্বাস, ইলিয়াস আলীসহ অনেক নেতাকর্মী এখনো জীবিত এবং কারও না কারও হেফাজতে রয়েছেন। আমরা নিশ্চিত যে, তৎকালীন শাসনামলের কিছু ক্ষমতাসীন ব্যক্তি তাঁর অবস্থান সম্পর্কে অবগত।
এই প্রেক্ষাপটে আমরা সিলেট জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট দৃঢ়ভাবে দাবি জানাচ্ছি-
১. এম ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালক আনছার আলীকে অবিলম্বে অক্ষত অবস্থায় খুঁজে বের করে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
২. গুম হওয়া ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার ও জুনেদ আহমদসহ সকল নিখোঁজ বিএনপি নেতাকর্মীর সন্ধান প্রদান ও তাঁদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৩. গুমের শিকার সকল রাজনৈতিক কর্মীর মানবাধিকার রক্ষা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতে একটি নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- কোনো সভ্য রাষ্ট্রে নাগরিকদের এই ধরনের গুম মানবাধিকার পরিপন্থী এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের জনগণ এই অবস্থা থেকে মুক্তি চায় এবং সিলেটবাসী তাঁদের হারানো প্রিয় নেতার ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন।
আমরা আশাবাদী, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এ সময়ের উপযোগী অন্তর্র্বতীকালীন সরকার মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমাদের এই ন্যায়সঙ্গত দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।’’
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকার নিজ বাসায় ফেরার পথে রাজধানীর মহাখালী থেকে গাড়ী চালক আনছার আলীসহ নিখোঁজ হন সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সিলেট জেলা সভাপতি এম ইলিয়াস আলী এবং তার গাড়িচালক। ওইদিন মধ্যরাতে মহাখালী এলাকা থেকে ইলিয়াস আলীর ব্যবহৃত গাড়িটি উদ্ধার হলেও আজও সন্ধান মেলেনি তাদের দুজনের।
Leave a Reply