রফিকুল ইসলাম সিরাজী, কক্সবাজার প্রতিনিধি: মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে আকুতি —
সুপার ডাইকে বেড়িবাঁধ, ফেরী চালু ও উন্নতমানের হাসপাতালের দাবি দ্বীপবাসির কুতুবদিয়ার চতুর্পাশে সুপার ডাইকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ, পারাপারে ভাসমান সেতু – ফেরী চালু ও উন্নতমানের হাসপাতালের দাবি জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার নিকট দ্বীপবাসি। বর্ষার পুর্বেই ভঙ্গুর বেড়িবাঁধ মেরামতের দাবিও ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্বল ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে খেসারত দিতে হচ্ছে তাদের। যুগের পর যুগ ধরে এই নৌপথে ফেরি চালুর দাবি জানানো হলেও তাদের কথার কোনো মূল্যায়ন হয়নি।
কুতুবদিয়া দ্বীপটিতে দেড় লক্ষাধিক মানুষের বসতি। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তারা। বিপদসংকুল পরিস্থিতিতেও লক্কর ঝক্কর নৌকা, ট্রলারে করে নদী পার হতে হয় দ্বীপবাসীদের। স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও এই নৌপথে ফেরি সার্ভিস চালু না হওয়ায় আক্ষেপ রয়েছে তাদের। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ নৌকা, ট্রলার ও স্পিডবোটে করে কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ থেকে মগনামা ঘাট পারাপার করছেন। বিশেষ করে ৩ কিলোমিটারের এই নৌ পথটিতে মালামাল নিয়ে পারাপার হওয়া যেমন কষ্টের তেমনি বাড়ছে খরচও। এমনকি মুমূর্ষ রোগীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য নদী পার হতে গিয়ে মারাও যান। তাই এই ঘাটে ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মানসম্মত হাসপাতাল না থাকায় চিকিৎসার জন্য ১০০ কিমি দুরে ও ৮০ কিমি দুরে কক্সবাজার যেতে হয়।
এছাড়া ইজারাদারদের সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। মগনামা-কুতুবদিয়া ঘাট পারপারে টুলসহ নিয়ম মোতাবেক ২০ টাকা বোট ভাড়ার মধ্যে ইজারাদাররা নেয় ৪০ টাকা। স্পিডবোটে করে ৭০ টাকার জায়গায় তারা নিচ্ছে ১২০ টাকা।
ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় দ্বীপবাসিদের।
ইজারাদারদের বিরুদ্ধে জনভোগান্তি লাঘবে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসুচির কারণে ভাড়া কিছুটা কমাতে বাধ্য হয়েছে ইজারাদার গং।
চারদিকে সমুদ্রে ঘেরা এ উপজেলার উৎপাদিত পণ্য দ্রুত পরিবহনের অভাবে প্রতিবছর আর্থিকসহ বিবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কৃষকরা। চট্টগ্রাম, চকরিয়া ও কক্সবাজার থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য বড়ঘোপ-মগনামা নৌ রুটের নদীতে ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষের।
কুতুবদিয়া উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বিগত সময়ে শুরু হয়েছিল । বৃহৎ প্রকল্পটি অনুমোদনও হয়েছিল বলে সুত্র জানায়। কুতুবদিয়া উপজেলায় চতুর্পাশে ৪০.১৮ কিঃমিঃ সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মিত হবে। প্রথম পর্যায়ে বাঁধের উচ্চতা হবে ৮.৫ মিটার। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য পুকুর পুনর্বাসন ও বনায়ন করা। সুপার ডাইকের উপরে হবে আধুনিক সড়ক।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কুতুবদিয়াবাসির আরো একটি স্বপ্ন পুরণ হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কুতুবদিয়া হবে সুরক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ উপজেলা। আশাকরা যায় সরকার আন্তরিক হলে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণীঝড়ে এ উপজেলায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ও পশ্চিম-দক্ষিণাংশ সাগরে বিলীন হয়ে যায়। দীর্ঘ ৩৪ বছর যাবত ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন দ্বীপবাসী। কুতুবদিয়া সমিতি ও কুতুবদিয়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক হুমায়ুন সিকদার বলেন, দ্বীপের দেড় লক্ষ জনগণের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় বর্ষা আসলেই নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত থাকেন তারা। সুপার ডাইকে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও পারাপারে ভোগান্তি লাঘবে ফেরি চালুর দাবিতে ঐক্যবদ্ধ দ্বীপবাসী। কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর প্রাকৃতিক দূর্যোগের জন্য ঝুকিপূর্ণ ৮ ইউনিয়নের জনগণকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে কাজ করছে সরকার। এলাকার উন্নয়ন ও মানুষকে শতভাগ সুরক্ষা দেওয়াই বর্তমান সরকারের কর্তব্য।
গতবছর কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড আয়োজিত কুতুবদিয় ও মাতারবাড়িতে সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন শীর্ষক কর্মশালায় বিষয়টি তখন নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চ পদস্থ কর্তাবৃন্দ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে মাতারবাড়ি ও ধলঘাটায় সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প এর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে উত্থাপন করা হলেও এখন ৭০ নং পোল্ডার বান্দরবান জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে হলেও কাজের সুবিধার্থে এখন কক্সবাজার জেলায় অধীনে নেওয়া হয়েছে।
সন্দ্বীপ ফেরী সুবিধা পেলেও কুতুবদিয়া কেনো এখনো ফেরী সুবিধা বঞ্চিত এ দাবী দ্বীপবাসির। পারাপারে দ্রুত ফেরী চালু ও সুপার ডাইক বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বর্তমান সরকারের নিকট জোর দাবী দ্বীপবাসির।
পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় ওই রুটের ২৯ টি ফেরি থেকে কুতুবদিয়া-মগনামা নৌ রুটে চলাচলের দাবি দেড় লক্ষ দ্বীপবাসীর। ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই প্রতিদিন নদী পর হচ্ছেন হাজার হাজার দ্বীপবাসী। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কুতুবদিয়া ঘাট পারাপারের কারণে ফেরি চালুর আকুতি অবহেলিত জনগোষ্ঠীর।
কুতুবদিয়ার বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমম নাসির উদ্দিনের প্রচেষ্টায় ২০০৮ সালে সী ট্রাক চালু হয়। কয়েকমাস পর তা অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এতে স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহল ও ঘাট ইজারাদারদের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করে অনেকে। যত দ্রুত সম্ভব ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি কুতুবদিয়া দ্বীপবাসীর।
Leave a Reply