মো. সাহিদুল ইসলাম
আমার পুরনো দিনের স্মৃতি গুলো বার বার মনে পড়ছে। বৈশাখ এলেই মনে পড়ে বৈশাখ মাসের গোড়ার দিকে পুকুরে পানি বেশী না থাকার কারণে আমি এবং আমার চাচাতো বোন রাবু পারভীন সহ পাড়ার আরও অন্যান্য ছেলে মেয়েরা পুকুরে মাছ ধরতে যাই। গ্রামের মেয়েরা ছোট বেলা থেকেই ওড়না ব্যবহার করে কিন্তু ঢাকায় বর্তমানে ওড়নার ব্যবহার নাই বললেও চলে। যাক এইসব কথা আমার চাচাতো বোন রাবু পারভীন এর ওড়নাটি ছিল বেশ লম্বা সাদা রং এর এবং মুশারির মত পাতলা। ওড়নার দুটি কোন আমি ধরলাম এবং আমার চাচাতো বোন রাবু পারভীন দুটি কোন ধরলো। হাটু পরিমান পানির মধ্য দিয়ে মাছ ধরার জন্য রওয়ানা দিলাম দু’জনে। আমার বাম পায়ের নিচে কি যেন নড়াচড়া শুরু করলো। আমি ভাবলাম বাইম মাছ হবে। পায়ের নিচে দু’হাত দিয়ে কাদাসহ উপরে তুলে দেখি সাপ। কি এক ভয়ানক দৃশ্য। সে কথা আমি আজও ভুলতে পারি না। সে কথা মনে পড়লে আমার শরীরের পশম আজও দাড়িয়ে যায়। আমার বৈশাখী অনেক স্মৃতি কথা আছে। তবে আর দু’ই একটি স্মৃতিকথা বলে এক্ষুনি ইতি টানছি। মাসটি ছিল বৈশাখ। আকাশের পশ্চিম কোনে কালো মেঘ। চারিদিকে একেবারে অন্ধকার। দিনের বেলায় অনেকেই বাড়িতে হারিকেন জ্বালিয়েছে। মাঝে মাঝে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু করলো। যেমন ছোট বাচ্চারা টর্চ লাইট নিয়ে খেলা করে। আর হাড়াম হাড়াম শব্দ শোনা যাচ্ছিল। তখন মনে হচ্ছিল কানের পর্দা যেন ফেটে যাচ্ছে। শো-শো বেগে বাতাস শুরু হয়ে গেল। তখন আমি এবং আমার চাচাতো বোন রাবু পারভীন, আমার ফুপাতো ভাই মোস্তফা শত বাধা অতিক্রম করে, আম কুড়াতে বের হলাম আরও অন্যান্য জন। বাতাসে দু’একটি করে আম পড়তে লাগল কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি এবং আমার দলের অর্থাৎ আমার ফুপাতো ভাই মোস্তফা এবং আমার চাচাতো বোন রাবু পারভীন কেউ আমরা আম পেলাম না। তখন আমার চাচাতো বোন রাবু পারভীন একটি বুদ্ধি বের করল। সে আমার চেয়ে বয়সে একদিন ছোট হলেও সে আমার নাম ধরে ডাকে না। রাবু পারভীন ষাড়ের মত চিৎকার দিয়ে ডাকতে শুরু করলো। সাহিদুল ভাইয়া সাহিদুল ভাইয়া এদিকে আস। যখন আমি মোস্তফা সহ একত্রিত হলাম তখন রাবু পারভীন এক নিঃশ্বাসে বলল মোড়ফা ভাই তুমি তোমার লুঙ্গিটা খোল, আমাদের চেয়ে কেউ বেশী আম কুড়াতে পারবে না। মোস্তাফা ছিল সহজ সরল মুখের কথা বলা শেষ না হতেই মোস্তফা লুঙ্গিটা খুলে ফেলল। তখন আমি এবং মোস্তফা লুঙ্গি উপরে দুজন দু’দিকে টেনে ধরে রাখলাম। অল্প সময়ের মধ্যে অনেক আম পেলাম। তখন আম গুলো রাখার জন্য আমার গায়ের সাদা জামাটি খুলে রাবু পারভীনকে দিলাম। ঐ সময় এক পাড়ার সম্পর্কে ভাবী হবে মোস্তাফাকে উলঙ্গ দেখে বললো বিনা পয়সায় ডিমেন্ট দেখাচ্ছে। লা লা…। বলাটা ঠিক নয় তবুও সত্য কথা বলতে ভয় কিসের। মোস্তফার কালো মুখের চেহারা লজ্জায় আরও কালো হয়ে গেল। পাড়ার সম্পর্কে ভাই হবে ১৬-১৮ বৎসর বয়স। শরীরের গঠন লম্বা চওড়ায় দেখলে মনে হয় ফারুক ভাইয়ের বয়স এক কুড়ি পার হয়ে গেছে। সে মোস্তফাকে আরও বিরক্ত করার জন্য (লজ্জা দেয়ার জন্য) ফারুক ভাই তার নিজের লুঙ্গি নিজের নাকে মুখে চেপে ধরে মোস্তফার দিকে তাকাচ্ছে। কাটা ঘায়ে লবণ দিলে যে অবস্থা হয় তাই হয়ে গেল মোস্তফার। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন গ্রামের ছেলেরা ফুলপেন্টের চেয়ে লুঙ্গি পরে বেশীর ভাগ। তাছাড়া জাঙ্গিয়া বা আন্ডার প্যান্ট পরে মুষ্টিমেয় কয়েকজন। ফারুক ভাইয়ের অবস্থাটা তখন কি হয়েছিল আপনাদের বুঝার আর বাকী নেই। কথায় আছে পরের জন্য খাল খুড়লে নিজের পা খালে পড়ে। তখন রাবু পারভীন বলল হায় হায় ফারুক ভাইয়ের টিভি দেখা যায়। তখন আমি ফুলো মালার সুরে বললাম তালি হবে। আমার কথাতে তখন বাঁশ ফাটার শব্দ হয়ে গেল অর্থাৎ তালি হয়ে গেল। লোকজন ছিলাম প্রায় হাফ ডজন বা এক ডজনের কাছাকাছি। হাজী সাহেবের বাড়িতে কাজ করতো রংপুরের জিয়াউর। একেবারে সহজ সরল ছেলে। জিয়াউর আমাকে বললো তুই এ্যাংক্যা ক্যাংকা ছোড়ারে তকতো মুই চিনিবারে পাওনি এলাও। তখন আমি আমার উপরের এবং নিচের মাড়ির দাঁতে দাঁত মিলাইয়া বললাম চুপ শালা রংপুরিয়া। তখন জিয়াউর বলল ক্যায় কয় মুই অমপুরিয়া বারে হে। তখন হাজি সাহেবের মা আমাদের দাদী বললো আরে শালা তোর কথায় কয় তুই অমপুরিয়া। লেখক: প্রতিবাদী কবি, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠক।
Leave a Reply