মো: রবিউল হোসেন খান,খুলনা ব্যুরো : ৫ আগষ্টের পরবর্তী সময়ে পুর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি নেতা শাহীন ওরফে বড় শাহীনের নেতৃত্বে ভাংচুর করা হয় শাহনেওয়াজ পারভেজ রনির বাড়ি। এঘটনার পর মারধর করা হয় রনির মা এবং বাবাকে। এ ঘটনাটি যেন শাহীনের জীবনের কাল হয়ে দাড়ায়। বাড়ি ভাংচুর এবং মা ওবাবার অপমানের প্রতিশোধ নিতে শাহীনকে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করে রনি। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ফাদ হিসেবে ব্যবহার করা হয় দ্ধিতীয় স্ত্রী হীরা ঢালীকে। হীরার মাধ্যমে সেদিন রাতে দৌলতপুর থেকে বাগমারা এলাকায় ডেকে আনা হয় শাহীনকে। আর সেখানে শাহীনকে হত্যা করা হয়। ১১ এপ্রিল আদালতে দেওয়া সীকারোক্তি মুলক জবানবন্দিতে এ তথ্য সীকার করেছেন শাহনেওয়াজ পারভেজ রনি ও হীরা ঢালী। গত৭ এপ্রিল তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ জবানবন্দি গ্রহনের পর আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গত ১৫ মার্চ রাতে খুলনা নগরীর বাগমারা খালপাড় রোডের ফাকা রাস্তার উপর দুর্বৃত্তরা গুলি করে বড় শাহীনকে হত্যা করে। শাহীনের বিরুদ্ধে খুলনা নগরীর দৌলতপুরে আলোচিত শহীদ ওরফে হুজি শহীদ হত্যাসহ একাধিক মামলা ছিল। হত্যার ঘটনায় শাহীনের মা রহিমা বেগম বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে খুলনা সদর থানায় মামলা করেন।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা সদর থানার এস আই মনির হোসেন বলেন, ১৫ বছর পুর্বে শাহনেওয়াজ পারভেজ রনি পুর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি নেতা শাহীনকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। দীর্ঘ দিন কারাগারে থাকার পর প্রতিশোধের সুযোগ খুজতে থাকেন শাহীন। গত বছর ৫ আগষ্ট অভ্যুত্থানের পর এলাকায় ফিরে শাহীন লোকজন নিয়ে মহেশ্বরপাশা রনির বাড়িতে হামলা চালায়। ঔই দিন রনির বাবা এবং মাকে মারধর করেন তারা। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী রনি তার দ্ধিতীয় স্ত্রী হীরাকে ব্যাবহার করেন। তিনি জানান, গত ডিসেম্বর থেকে শাহীনের গতিবিধি লক্ষ্য করতে থাকে রনি। জানুয়ারি মাসে শাহীনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ শুরু করেন হীরা। এক সময়ে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরী হয়। বাগমারা এলাকার একটি বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন হীরা। সেখানেও যাতায়ত ছিল শাহীনের। শাহীনের যাবতীয় খবরাখবর রনির কাছে আদান প্রদান করতে থাকে হীরা। বিষয়টি টের পাননি শাহীন। ১৫ মার্চ দৌলতপুর ছিলেন শাহীন। রাতে হীরা ঢালীর ভাড়া বাড়িতে ডেকে আনা হয় শাহীনকে। রাত সোয়া ১১ টার দিকে সুযোগে বুঝে হীরা ঢালী এবং তার সামী রনির উপস্থিতিতে আরো কয়েকজন সন্ত্রাসী খুব কাছ থেকে শাহীনের মাথায় দুটি গুলি করেন। ঘটনাস্থলে শাহীনের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে রনি মোবাইল ফোন বন্ধ করে খালিশপুর চলে যান এবং স্ত্রী হীরা ঢালী ঘরেই অবস্থান করেন। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশেরর সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষন করে ঘটনাস্থলে হীরা ঢালী ও রনির উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ হত্যাকান্ডের জন্য হীরাকে কেউ যাতে সন্দেহ না করে সেজন্য বাগমারার ভাড়া বাসাটি ছাড়েননি হীরা। এছাড়া হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করার জন্য পুলিশ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে। খুলনা সদর থানার ওসি হাওলাদার সানোয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, ৭ এপ্রিল নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে রনিকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তার সীকারোক্তি অনুযায়ী আমিনুর এবং হীরা ঢালীকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আদালতে সেচ্ছায় ১৬৪ ধারায় সীকারোক্তী প্রদান করতে চান রনি এবং হীরা ঢালী। শুক্রবার বিকেলে খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের খাস কামরায় হত্যাকান্ডের বিবরন তুলে ধরে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন তারা দুজন। জবানবন্দি পরবর্তী আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন। বড় শাহীন হত্যাকান্ডে এ পর্যন্ত ৬ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
Leave a Reply