মো: ফরহাদ হোসেন, সারিয়াকান্দি, বগুড়া প্রতিনিধিঃ যমুনার চরাঞ্চলের রোগী সাধারণের পারাপারে কর্ণিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে যমুনা নদীতে নৌ-এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই স্পিডবোটে অক্সিজেন সরবরাহ সহ সকল ধরনের প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে। উপজেলার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়ন চরাঞ্চলের যেকোনো মানুষ অসুস্থতায় বা যে কোন বিপদে পড়লে এই জরুরি সেবাটি পাবেন। সরকারি প্রশাসন ও দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সাংবাদিক বৃন্দরাও জরুরি প্রয়োজনে সেবা পাবেন। এটির উদ্বোধনে চরাঞ্চলের রোগী পারাপারে দুঃখ অনেকটা লাঘব হলো। ১২ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১ঘটিকায় মথুরাপাড়া ঘাটে সার্ভিসটির উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার রহমান। জানাগেছে, বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমে চরাঞ্চলের রোগী সাধারণ কাঠের তক্তায়, ঘোড়ার গাড়ী, আবার কখনো নৌকাযোগে জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আসতে অনেক কষ্ট হতো। সমস্যাটির স্থায়ী সমাধানের লক্ষে কর্ণিবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন দিপন প্রামাণিক এর নিজস্ব অর্থায়ন ও উন্নয়ন তহবিলের সহায়তায় সার্ভিসটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে স্বল্প খরচে ও অল্প সময়ে রোগী সাধারণ উপজেলা ও জেলা শহরে চিকিৎসা নিতে পারবেন। তাছাড়াও অসহায় ও দরিদ্রদের জন্য বিনা মূল্যে সেবা প্রদান করা হবে। এখানে স্থানীয় ও গণমাধ্যমকর্মী জাফরুল সাদিক জানান, সার্ভিসটি রোগী পারাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। চর এলাকার রোগীরা চিকিৎসা উপজেলা সদরে আসতে আড়াই থেকে তিন ঘন্টা সময় লাগত। এ নৌ-এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মাধম্যে পনের – বিশ মিনিটে নদী পথ পারি দিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবে। চেয়ারম্যান দিপন জানান, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার প্রায় তিন বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেক নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি শুনতে পেয়েছি অনেক আত্ম চিৎকার, অনেক হাহাকার। রাতের সময়টুকু তে কোনো ফোনকল আসলে একটুও দেরি হয় নাহ সেই ফোনকল রিসিভ করতে। কারণ, বিশেষ কোনো বিপদ ছাড়া এতো রাতে কেউ ফোনকল করে নাহ। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ, গর্ভবতী মায়ের হঠাৎ সমস্যা হওয়ায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতেই পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে। আবার দেখা গেছে বুকে ব্যাথা, পেটে ব্যথা এরকম অনেকেই অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে যেতেই তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পরে। যেহেতু তাদের নদী পার হয়ে আসতে হবে, চিকিৎসার জন্য। দেখা গেছে রাতের সময় নৌকার সংকট, আবার নৌকায় আসতে আসতেই পেরিয়ে যায় অনেক সময়। নিজের কাছে এতো খারাপ লাগতো বলে বুঝাতে পারবো না। তাদের এই পথটুকু কীভাবে দ্রুততার সাথে শেষ করে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে নিয়ে আসা যায়? অনেক চেষ্টার পরে সরকারি এবং ব্যক্তিগত অর্থের সমন্বয়ে সেই কাঙ্ক্ষিত উপহারটুকু(স্পিডবোট) তাদের কাছে পৌঁছাতে পেরে একটু শান্তি হচ্ছে। আমার চরাঞ্চলের মানুষ আর চিকিৎসার অভাবে কষ্ট পাবে নাহ। কোনো মায়ের কোল আর খালি হবে নাহ চিকিৎসার অভাবে। এভাবেই এগিয়ে যাবে তার নির্বাচিত ইউনিয়ন আপনাদের হাত ধরেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরিয়ার রহমান বলেন, প্রত্যেক বছর ইউনিয়ন উন্নয়ন সহায়তায় জনসেবার বরাদ্দ নেওয়া হয়। এবার কর্ণিবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নৌযানের প্রজেক্ট বরাদ্দের জন্য আবেদন পাওয়া যায়। আমাদের কাছে এই আবেদনটি সময় উপযোগী মনে হয়ছে। কর্ণিবাড়ী ইউনিয়ন অধিকাংশ জনসাধারণ চরাঞ্চলে বসবাস করে। তাদেরকে নদী পেরিয়ে যেতে। তাদের জন্য চিকিৎসা সেবা সহ ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা শহরের সাধারণ সেবা পেতে হিমসিম খেতে হয়। এই নৌযান বা স্পিড বোট চালু হওয়াতে সকলের দূর্দশা কমে যাবে। এসময় সকল ইউপি সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply