মোঃ ফরহাদ হোসেন, সারিয়াকান্দি, বগুড়া প্রতিনিধি: ইউটিউব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা কুতুবপুর ইউনিয়ন কাজলা চরে ৬ বিঘা জমিতে ফিলিপাইন জাতের কালো আখ চাষ করে সাফল্যের দুয়ারে পাঁচ যুবক। পাঁচ যুবক হলেন- খোকন মাষ্টার, সুলতান মাহমুদ, মামুনুর রশিদ, শামিম হোসেন বাপ্পি ও কবির হোসেন। ৬ বিঘা জমিতে এই আখ চাষ করে শ্রমিক খরচ সহ মোট ব্যয় হয়েছে ছয় লাখ টাকা। প্রায় ১৮ লাখ টাকার বিক্রয় হবে বলে জানা গেছে। এই আখ ১৪ থেকে ১৫ ফিট লম্বা হয়ে থাকে। এটি নরম মিষ্টি ও রসালো। তাই দুই বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে সবাই খেতে পারে। প্রতিটি আখ বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। দুর দুরান্তের ব্যবসায়ীরা এই আখ কেনার জন্য আসেন। এছাড়াও কেউ কেউ ঘুরতে এবং ছবি তুলতেও আসেন। বগুড়া সদর থেকে আখ ক্রয় করতে আসা কাউছার রহমান বলেন, শাজাহানপুর খরনা মেলায় এই জাতের আখ বিক্রয় করতে দেখি। ঐ ভাইয়ের কাছ থেকে তথ্য ও মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে যোগাযোগ করি। এখান থেকে প্রায় ১ লাখ টাকার আখ ক্রয় করেছি আরও ক্রয় করছি। একটি আখে প্রচুর রস হয়। এই আখের বৈশিষ্ট্য খুব ভালো বিধায় চাহিদা অনেক। উদ্যোক্তা মামুনুর রশিদ বলেন, এই আখ সম্পর্কে নেটে সার্চ দেই। দেখি এর বৈশিষ্ট্য অনেক ভালো। প্রায় ১৩ থেকে ১৪ ফিট লম্বা হয় এবং মিষ্টি ও রসালো। প্রতিটি আখে প্রায় আড়াই থেকে তিন লিটার পরিমাণ রস হয়। নেটে সার্চ দিয়ে ইউটিউব দেখে তখন থেকেই এই আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হই। কাটিং সংগ্রহ করে এই বার প্রথম চাষ করেছি, খুব ভালো ফলন হয়েছে। কুতুবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খোকন মিয়া বলেন, শিক্ষকতার পাশাপাশি আমার আশা ছিলো কৃষির উপর একটি প্রজেক্ট করা। সেই আশা থেকে আমরা পাঁচ জন মিলে আমার বন্ধু মমিনুলের কাছ থেকে কাটিং নিয়ে চাষ শুরু করেছি। ৬ বিঘা জমিতে প্রায় ৪০ হাজার আখ রয়েছে। সম্পুর্ন শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো বিধায় বিঘা প্রতি ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। একটি আখ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি। এখানে বিভিন্ন উপজেলা থেকে ক্রেতারা আসছে। উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, এই ফিলিপাইন কালো জাতের আখ চাষ অধিক লাভজনক। এখানে টিএসপি-১০০কেজি, মপ-১০০কেজি, জিপ সার-১০০কেজি, দস্তা সার-১০ কেজি, বোরন-৩ কেজি ও ৬০ কেজি হিসেবে ৪ বার উপরিভাগে ইউরিয়া সার প্রয়োগ সহ বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক নাশক ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও ৫ থেকে ৬ বার সেচ দিতে হয়। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার ও কীটনাশক সহ সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, সারিয়াকান্দি উপজেলায় আখের চাহিদা ছিলো ১০ হেক্টর। চাহিদা মোতাবেক কৃষক ১০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করেছেন। কুতুবপুর ইউনিয়ন কাজলা চরে ৫ যুবকের ফিলিপাইন কালো জাতের আখ চাষ খুব সুন্দর হয়েছে। গুণগত মান ভালো। আখ শরীরের জন্য খুব উপকারী। গুড় ও চিনি তৈরি করার জন্য খুব প্রয়োজনীয় ফসল। তাছাড়াও কৃষি অফিস থেকে বালাইনাশক ও কীটনাশক ব্যবহারে উপসহকারী কর্মকর্তা পরামর্শ ও সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিয়ে থাকেন। তিনি আরও বলেন, আমার কৃষি অফিসে যদি আখ চাষের কোনো প্রকল্প আসে তাহলে তাদেরকে সহযোগিতা দিবো। তাছাড়াও বেকারত্ব দূর করতে আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।
Leave a Reply