সুমন উদ্দীন, দিঘিনালা খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: আসুন উৎসবে ঐক্যবদ্ধ হই, ঐতিহ্য আর অস্তিত্ব রক্ষার্থে সুদৃঢ় করি ভাতৃত্বের বন্ধন। এই আহ্বান জানিয়ে পাহাড়ে বসবাস রত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রধান সামাজিক উৎসব বৈ-সা-বি (বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহুকে) ঘিরে নতুন বছরকে বরণ ও পুরোনোকে বিদায় জানাতে নিজস্ব সংস্কৃতির উৎসবে মেতেছে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা। নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশে নানাভাবে বৈসাবি উৎসব পালন করছে তারা। পাহাড়ের এই প্রধান উৎসবকে কেন্দ্র করে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির দীঘিনালাতে শুরু হয় ছয়দিনের বিজু মেলা।
রবিবার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় উপজেলার বাবুছড়া ইউনিয়নের কেয়াংঘাট সহদেব কার্বারী পাড়া এলাকায় সার্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত বিজু মেলার উদ্বোধন করেন চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়।
উদ্ভোধনী আলোচনা সভায় উপজেলার ৫নং বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গগন বিকাশ চাকমার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নব কমল চাকমা, ধর্মজ্যোতি চাকমা, ইউপিডিএফ উপজেলা সংগঠক মিল্টন চাকমা, দীঘিনালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চন্দ্র রঞ্জন চাকমা বাবুছড়া ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান সন্তোষ জীবন চাকমা, হেডম্যান এসোসিয়েশন সভাপতি দীপুলাক্ষ চাকমা, চাঙমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী পরিচালক আনন্দ মোহন চাকমা, জুম্ম ফ্লিম এসোসিয়েশন (জুফা) জ্ঞানকীতি চাকমাসহ আরও অনেক।
এসময় বক্তরা বলেন, এটি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর প্রাণের উৎসব। এই উৎসবের মাধ্যমে পাহাড়ের সকল সংঘাত ভুলে ঐক্যের, সাম্যের এবং সমঝোতা মাধ্যমে জুম্ম জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ উৎসবের মাধ্যমে পুরনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে আমাদের সবার সুখ-শান্তি ও মঙ্গল কামনা করি।
চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় বৈসাবি মেলা উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, বিজু উৎসবের মাধ্যমে এদেশে বহু জাতি বহু সংস্কৃতিতে আমরা দেশ ও সারা বিশ্বের কাছের তুলে ধরতে পারবো। সকলের সহযোগিতায় উৎসব মুখর পরিবেশে সকলে এই উৎসব পালন করবো। এই উৎসবের মাধ্যমে আমাদের জুম্ম জাতির ঐতিহ্য কৃষ্টি সংস্কৃতি বিকশিত হবে। আমরা দ্বন্দ্ব সংঘাত ভুলে ঐক্যে এবং শান্তির সমাজ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কৃষ্টি কালচার ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে বৈসাবির আয়োজনে স্বকীয়তা বজায় রাখতে হবে। ফুল বিজু থেকে শুরু করে প্রতিটি আয়োজনে যেন পাহাড়ি সংস্কৃতি ফুটে উঠে। আমরা যেনো আমাদের ঐতিহ্য থেকে বিচ্যুত না হই।
মেলা উদ্বোধনের শুরুতে রাজার প্রতি সম্মান জানিয়ে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, বাংলা ভাষার গানের সাথে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শিল্পীদের নিয়ে ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশ করা হয়। এতে পৃথিবীর সকল জাতি গোষ্ঠীর সমতা ও ন্যায্যতার আহ্বান জানান।
মেলাটি ৬ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এবারে মেলায় পাহাড়িদের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পোশাক, খাবার ও অলংকার নিয়ে প্রায় ১৫০ টি স্টলে বাহারী খাবার ও পাহাড়ি পন্যের পরসা সাজানো হয়েছে। উৎসব উপলক্ষে পাহাড়িদের ঐতিবাহী বিভিন্ন খেলাধুলার অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
Leave a Reply