লেখকঃ মুহাঃ মোশাররফ হোসেন
কবি, সাংবাদিক ও প্রাণের মেলা জাতীয় কবি পরিষদের সভাপতি
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। শান্তি, কল্যাণ ও সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে আসে এই পবিত্র মাসটি। মুসলিম উম্মাহ শান্তিতে রোজা পালন ও অন্যান্য আমল নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করবে এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে এমনই প্রত্যাশা সবার। অথচ এহেন পবিত্র রমজানের শান্তির আবহেও কিছু বিপথগামী মানুষ মেতে উঠেছে খুন, ধর্ষণসহ নানা অপকর্মের ঘেরাটোপে। রমজানের শুরু থেকেই সৃষ্টি হয়েছে শান্তির বিপরীতধর্মী অশান্তির এক রাজত্ব। বলা বাহুল্য দেশের মানুষ যেন মহাসংকটকাল অতিক্রম করছে। এই সংকট মোকাবিলা করতে গিয়ে বেশ কিছুটা চাপে আছে বাংলাদেশ, এ কথা আজ অস্বীকার করার সুযোগ নেই। দেশে বর্তমান বিদেশিদের ব্যাবসায়িক ভালো সু-ব্যাবস্থা নেই। ব্যাংক খাতে ব্যাপক ঘাটতি। দেশের জনগণের বেকারত্ব বেড়েই চলেছে। এদিকে আবার ক্ষুদ্র শিল্প ইট ভাটা বন্ধের পায়তারা চলছে। যেখানে ২৫০ থেকে ৩০০ শ্রমিক কাজ করে তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করে তথা সেখান থেকে একটা অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হয়। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের গড়া আইনের আওতায় এনে সেটাও বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। এই ইট ভাটা বন্ধ হলে এদেশে ভাটা মালিকরা পথে বসে যাবে, শ্রমিকরা বেকার হবে। বেড়ে যাবে দেশে চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, তাছাড়া সরকারি একটা আয়ের উৎসহ ও বন্ধ হবে।
চব্বিশের ৫ই আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশনায় চলছে এ দেশ। অত্যান্ত দুঃখের সহিত বলতে হচ্ছে যে, বাংলাদেশ বারো আওলিয়ার দেশ, এদেশের আইন ব্যাবস্থা সেই হিসাবে ইসলামী দিক নির্দেশনা, রাসুলের সুন্নাহ ও আল্লাহর দেওয়া আইনে হওয়া উচিত। কিন্তু এদেশে যখন যে সরকার আসে সেই সরকার নিজের মত করে আইন তৈরী করে চিরদিন ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে। বিগত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকার ঠিক সেটাই করেছিল, এমনকি মানুষের ভোটের অধিকার পর্যন্ত হরন করে নিয়ে রাতের অন্ধকারে ভোট করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পায়তারা করেছিল।
চব্বিশের ৫ই আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সেই আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরে দেশবাসি মনে করেছিল হয়ত এবার দেশে শান্তি ফিরবে এবং ইসলামের আদর্শে দেশ কিছুটা হলেও চলবে। কিন্তু সেটা হলোনা, বরং ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। আগে ১৬ বছরে এক দল লুটে-পুটে খেয়েছে এখন সেই যায়গাই আরেকটি দল খাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস হলো রমজান। শান্তি, কল্যাণ ও সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে আসে এই পবিত্র মাসটি। আলেম উলামাদের মুখে শুনে থাকি এ মাসে শয়তান নাকি বাঁঁধা থাকে, কিন্তু একি দেখছি? এই রমজান মাসেও চুরি, ডাকাতি, খুন, চাদাবাজি, ধর্ষণ নিয়মিত হয়েই চলেছে। আইনশৃঙ্ক্ষলার তেমন ভুমিকা নাই। সবচেয়ে বড় দুঃখের বিষয় হলো ধর্ষণের মাত্রা বেড়ে গেছে, আসলে মানুষ শয়তানই বড় শয়তান, যার বাস্তব নমুনা দেখতে পেতেছি। অত্যান্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে মাগুরারা আছিয়া নামের ৬বছরের শিশুটিও রেহায় পাইনি এই ধর্ষণ থেকে এবং অকালে ঝরে গেছে আছিয়ার জীবন। যদি এদেশে ইসলামী শ্বাসন ব্যাবস্থা চালু থাকতো তাহলে হয়ত এত অন্যায় অত্যাচার দেখতে হতো না।
সব মিলিয়ে এদেশের জনগণ আসলে ভালো নেই! এদেশের জনগণ মনে প্রাণে বিশ্বাস করেছিল আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বিতাড়িত হয়ছে মনে হয় জনগণ শান্তিতে থাকবে, কিন্তু আসলে কি শান্তিতে থাকতে পেরেছে? দেশে বর্তমান চুরি, ডাকাতি, চাদাবাজি, ধর্ষণ বেড়েই চলেছে, আইনশৃঙ্খলার কোনো উন্নতি নেই। একটা দল খেয়ে চলে গেছে দেশ থেকে, একটা দল নির্বাচন নিয়ে ব্যাস্ত, আরেকটা দল দেশে বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিদেশি তথা জনগণের কাছে বুঝাতে চাচ্ছে যে আগেই ভালো ছিল। সবাই যার যার মত করে আধিপত্য আর ক্ষমতা পাওয়ার নেশায় ব্যাস্ত আছে। এদেশের জনগণ শান্তি আর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, সেটা কারোর তোয়াক্কা নেই। তাহলে কি দেশের জনগণ নিরাপত্তা আর শান্তিতে আছে? নাই! ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পরে এমন দৃশ্য দেখতে হবে এমনটা আশা করেনি এদেশের জনগণ!
অন্তর্বত্নীকালীন সরকারের উচিত এদেশের আইন ব্যাবস্থা পুনর্গঠন ও সাংবিধান সংস্কার করে, জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের কাছে দেশকে হস্তান্তর করা।
Leave a Reply