নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের বিষয়ে আইনি কাঠামো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নারীদের সুরক্ষার উপর গুরুত্ব দেয়। ফলে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা অনেকাংশে উপেক্ষিত থেকে যায়। বাংলাদেশে কোনো পুরুষ ধর্ষণের শিকার হলে প্রচলিত আইনে তার জন্য সরাসরি কোনো বিধান নেই, বরং তাকে বিচার চাইতে হয় ভিন্ন আইনের আওতায়।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় সম্প্রতি একটি আলোচিত ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে ২০ বছর বয়সী এক তরুণকে তার প্রতিবেশী জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করে। ঘটনার তিন দিন পর মামলা রুজু করা হয়, তবে এটি দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় ‘বলাৎকার’ হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে, কারণ বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ১৬ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ ধর্ষণের শিকার হলে তার জন্য আলাদা কোনো আইনি বিধান নেই।
বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হলেও পুরুষদের ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের তথ্য তুলনামূলকভাবে কম পাওয়া যায়। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর তথ্য অনুযায়ী:
বিশ্বব্যাপী পুরুষদের ধর্ষণের ঘটনা প্রায় একই চিত্র তুলে ধরে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা RAINN-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে প্রতি ১০ জন ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির মধ্যে একজন পুরুষ।
ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, কেবলমাত্র একজন পুরুষের দ্বারা একজন নারী ধর্ষণের শিকার হতে পারে। অর্থাৎ, আইনে ধর্ষণের শিকার পুরুষদের জন্য কোনো স্পষ্ট বিধান নেই।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এ হাইকোর্টের একটি আদেশের পর ১৬ বছরের কম বয়সী ছেলে শিশুরাও এই আইনের আওতায় এসেছে। তবে ১৬ বছরের বেশি বয়সী কোনো পুরুষ ধর্ষণের শিকার হলে, তাকে দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারায় মামলা করতে হয়, যেখানে ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ যৌন সম্পর্ক’ উল্লেখ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তারিক রিজভী বলেন, “পেনাল কোড অনুযায়ী ধর্ষণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত না হওয়াই প্রথম সমস্যা। দ্বিতীয়ত, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনেও পুরুষদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই।”
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ধর্ষণের সংজ্ঞা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে হওয়া উচিত। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের চেয়ারপার্সন জহিরুল ইসলাম খান পান্না বলেন, “ছেলেদের সাথেও যদি জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক করা হয়, তাহলে তাদের জন্যও সমান শাস্তি প্রযোজ্য হওয়া উচিত।”
আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, “আইনের যৌক্তিক সংস্কার প্রয়োজন। ধর্ষণের ঘটনায় সঠিক বিচার নিশ্চিত করতে আলাদা ট্রাইব্যুনাল থাকা দরকার। একইসঙ্গে, মেডিক্যাল টেস্ট ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য প্রত্যেক বিভাগে ল্যাব স্থাপন করা প্রয়োজন।”
বাংলাদেশে ধর্ষণের মতো অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় লিঙ্গভিত্তিক বিভাজন থাকায় অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতিত পুরুষরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন। যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং আইনি কাঠামোর সংস্কার একান্ত প্রয়োজন, যাতে ধর্ষণের শিকার সব ব্যক্তি, নারী বা পুরুষ, সমান বিচার পেতে পারেন।
Leave a Reply