নিউজ ডেক্স: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘ বিরতির পর ৮ মার্চ রাজধানীর গুলশানস্থ হোটেল ওয়েস্টিনে এক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে, যেখানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কূটনীতিকরা অংশ নেন। দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারমিস. সারাহ কুক, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মিসেস মেরি মাসদুপি, চীনের রাষ্ট্রদূত মি. ইয়ো ওয়েন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার গিরি গোরিওভিস কোজিন, অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনার মিস. সুসান রেলি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মিকায়েল মিলার, ইরানের রাষ্ট্রদূত মি. মানসুর চাভোশি, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মি. রমিস সেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পলিটিক্যাল এ্যাফেয়ার্স জেমস এ. স্টুয়ার্ট, জাপানের ডেপুটি চিফ অব মিশন তাকাহাসি নাওকি ও ফার্স্ট সেক্রেটারি মিনামি তোমো, পাকিস্তানের হাইকমিশনার কামরান ধাংগল, দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত, মরক্কো, নেদারল্যা-স, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, ভারত, ভুটান, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, ডেনমার্ক, মালয়েশিয়া, ইরাক, ভ্যাটিকান সিটি, কানাডা, ব্রাজিল, আলজেরিয়া, কসোভো, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রতিনিধি, আইআরআই এবং এনডিপি’র আবাসিক প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকবৃন্দ।
এছাড়া ইফতারে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন, যার মধ্যে নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এবং ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ উল্লেখযোগ্য।
ইফতারের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “দীর্ঘ ১১ বছর পর আমরা আবারও বিদেশি বন্ধুদের নিয়ে ইফতার আয়োজন করতে পেরে আনন্দিত। রমজান আত্মশুদ্ধি ও সহমর্মিতার মাস। আমরা বিশ্বাস করি, শান্তি, ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, “জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে সরকার আমাদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছে। আমাদের নেতাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে, অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু আমরা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যেতে চাই।”
জামায়াতের এই ইফতার আয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে দলটি প্রকাশ্যে বড় কোনো আয়োজন করতে পারেনি, বিশেষত বিদেশি কূটনীতিকদের উপস্থিতিতে এমন অনুষ্ঠান ছিল বিরল। এই আয়োজনকে অনেকে জামায়াতের কূটনৈতিক পুনঃসংযোগের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন।
এদিকে, ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপির কোনো শীর্ষ নেতা উপস্থিত ছিলেন না, তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে কয়েকজন অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার কৌশলগত সম্পর্কের পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করতে পারে।
জামায়াতের এই আয়োজন কেবল ইফতার মাহফিলেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি ভবিষ্যতের রাজনৈতিক চালচিত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। অনেকেই মনে করছেন, আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির জন্য দলটি নতুন করে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সরকারের অবস্থান কী হবে এবং কূটনীতিকদের উপস্থিতি ভবিষ্যতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখনো দেখার বিষয়।
Leave a Reply