মোঃ রেজাউল করিম: আমরা যারা প্রবাসী তারা কেউ টাকার জন্য কেউ উচ্চ শিক্ষার জন্য। সবার উদ্দেশ্য যেটাই হোক, কথা একটাই আমরা সবাই প্রবাসি।নিজের জন্মভূমি নিজের দেশের মাটি আর প্রবাস জীবন অনেক ভিন্ন রকম আকাশ পাতাল ব্যবধান। এই প্রবাস জীবনে আপনি রাস্তায় হাটেন বা কোথাও যান বা কাজের কারনে সব জায়গাতেই মনে করিয়ে দিবে আপনি প্রবাসি। আমি শতকরা ৯০ ভাগ প্রবাসী অর্থাৎ সাধারণ শ্রমিকদের কথা বলছি। প্রবাসীরা মাসিক যে বেতন পায় তার এক- তৃতীয়াংশ নিজের রুম ভাড়া,খাওয়া, মোবাইল ও অন্যান্য খরচে চলে যায়। বাকি দুই- তৃতীয়াংশ পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দেয় ; তাতে ঘর খরচ, ছেলে- মেয়ের স্কুলের খরচ, ভাই -বোনের বিবাহ, মা -বাবার চিকিৎসা খরচ ও সহধর্মিনীর হাত খরচ ইত্যাদি। সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। কিন্তু অনেকের ভাগ্যে ঠিকমতো বেতন জোটে না, (৪-৫) মাস পর্যন্ত বেতন বাকি থাকে।তখন ধার-কর্জ করে প্রিয়জনের সুখের জন্য টাকা পাঠিয়ে থাকে। কিন্তু সে দুঃখ কাউকে বুঝতে দেয় না। নিরাশার অতল গহবরে হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলো চোখের নোনাজল উপেক্ষা করে বুকের কষ্ট বুঝতে না দিয়ে বলে মা আমি ভালো আছি, বাবা আমি ভালো আছি। প্রতিটি টাকা খরচ করতে থাকে দুইবার ভাবতে হয়।
এবার আসি প্রবাসীদের জীবনযাত্রা। কর্ম ভেদে কাজ ভিন্ন হয় যেমন বড় কোম্পানিতে ভোর চারটায় উঠে দুপুরের খাবার নিয়ে (৩০-৪০) কিলোমিটার দূরে বিল্ডিং কন্সট্রাকশন এর কাজে যেতে হয়। দোকানের চাকরি সকাল পাঁচটা- ছয়টা থেকে রাত দশটা- এগারোটা পর্যন্ত। আর সবচেয়ে কষ্টের কাজ হচ্ছে বাগান ও ঘরের চাকরি। যেখানে শুধুমাত্র নিদ্রাটাই বিশ্রাম। একটু বিশ্রাম নেবে তার সুযোগ নেই ; শুধু কাজ করে যাও। শুধু তাই নয়, তার উপর আবার মানসিক নির্যাতনও চলে। বছরে রমজান ঈদ ও কোরবানি ঈদ দুই দিন করে মোট চার দিন বন্ধ পাওয়া যায়। জীবনের সোনালী দিন ও মধুময় যৌবন হাসিমুখে বিসর্জন দেয়। মা-বাবার স্নেহ , ছেলে মেয়ের আদর ,স্ত্রীর ভালোবাসা ,ভাই বোনের মমতা থেকে বঞ্চিত হয়। এমনকি পরিবার ও সমাজের সব অনুষ্ঠান থেকেও বঞ্চিত। বছরের পর বছর যাদের জন্য তাঁরা প্রবাসে; সেই পরিবারও অনেক সময় তাদের ভুল বুঝে, মনে কষ্ট দেয় । তাঁদের সব সময় এটা -ওটা পাঠাতে বলে। পরিবারের অন্য সদস্যদের দ্বারা তাঁরা অবহেলার শিকার হয়। পরিবার ও তাদের দুঃখ বুঝেনা, এ এক নির্মম পরিহাস। এই কষ্ট কাকে বলবে? কে শুনবে? কার জন্য করলাম ? এটা আমার কথা নয়, প্রতিটি প্রবাসীর আত্মকথা।
Leave a Reply