নিজস্ব প্রতিবেদক: সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব-২০২৫ স্থগিত হয়ে যাওয়ার ঘটনা শুনে খোঁজ খবর নিয়েছেন জেনে ঢাকা মহানগর নাট্য পর্ষদের পক্ষ থেকে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানানো হয়। ঢাকা মহানগর নাট্য পর্ষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে– “মাননীয় উপদেষ্টা ঠিকই বলেছেন, কোনো রকম বাধা বা হুমকি ছাড়া, শিল্পকলার উদ্যোগে সারা দেশে নাট্য প্রযোজনার কাজ হচ্ছে এবং জেলা পর্যায়ে প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। উৎসব বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে উপদেষ্টা ভুল বলেছেন তা বলবো না। তবে আমরা মনে করি প্রকৃত তথ্য উপদেষ্টাকে দেওয়া হয়নি। মাননীয় উপদেষ্টা নিশ্চয় জানেন যে, করোনা অতিমারীর কারণে থমকে গিয়েছিল সারা পৃথিবী। তার প্রভাব পড়েছিল সর্বত্র, শিল্প-সংস্কৃতি চর্চাও বাদ পড়েনি সেই ভয়াল অতিমারীর ছোবল থেকে।
সব কিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলেও মঞ্চনাটকের প্রদর্শনী এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। বিগত দুই বছরে বেশ কিছু নতুন নাটক মঞ্চে এলেও দর্শকসংখ্যা তেমন বাড়েনি। বরং ক্রমেই থিয়েটারে দর্শক সংকট বেড়ে চলেছে।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গন শিল্পী, দর্শক ও শিল্পানুরাগীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান, মিলন কেন্দ্র। নিয়মিত হল বরাদ্দ না পাওয়ায়, ঢাকা শহরের অনেক নাট্যদল তাদের নিয়মিত মহড়া ও কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। এই বাস্তব অবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে- নতুন দর্শক সৃষ্টি, থিয়েটার দলগুলোর মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি এবং শিল্পকলা একাডেমিতে থিয়েটারের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর নাট্য পর্ষদের উদ্যোগে ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪টি নাটক নিয়ে মহিলা সমিতি মিলনায়তনে প্রথম পর্যায়ে “ঢাকা মহানগর নাট্যোৎসব ২০২৫” আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়। হল বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে দ্বিতীয় পর্যায়ের নাট্য উৎসব বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
“প্রথম পর্যায়ের এই উৎসব আমরা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজন করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু হল বরাদ্দ না পাওয়ায় আমরা মহিলা সমিতি মিলনায়তনে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিই। ঢাকার ৮৫টি নাট্যদলের পক্ষ থেকে হল বরাদ্দের জন্য আবেদন করার পরও কেন উৎসবের জন্য হল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি তা আমাদের জানা নেই।”
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যেভাবেই হোক মাননীয় উপদেষ্টা জানতে পেরেছেন যে, পুলিশ উৎসব বন্ধ করেনি বরং আয়োজকরাই স্থগিত করেছে। প্রকৃত ঘটনা যা আমাদের সাথে ঘটেছে বা দেখেছি তা নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলো:
“১৪ই ফেব্রুয়ারি দুপুর একটার সময় বাংলাদেশ মহিলা সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর নাট্য পর্ষদের একজন সদস্য আকতারুজামানকে জানান যে, রমনা থানা থেকে ফোনে নাট্যোৎসব বন্ধ করতে বলা হয়েছে। আমরা উৎসব কমিটির পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম ফারুক সাহেবের সাথে তার অফিসে সাক্ষাত করে উৎসবের বিস্তারিত তথ্য অবহিত করি। যদিও এ ধরনের আয়োজনের জন্য পুলিশ বা সরকারের কোনো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। আলোচনার পর ওসি সাহেব সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেন এবং উৎসবের প্রথম দিনে “পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়” নাটকটি বাদ দিতে বলেন। এরপর আমরা নিরাপত্তা সহযোগিতা চেয়ে একটি আবেদনপত্র জমা দিয়ে চলে আসছিলাম। ঠিক তখন ৫/৬ জনের একটি দল থানার মধ্যে ঢুকে, এক রকম হুমকির স্বরে গালাগালসহ মহিলা সমিতির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ফারুক সাহেবকে উৎসব বন্ধ করার জন্য চাপ দেয়। এমন পরিস্থিতিতে মহিলা সমিতির কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে রাতেই মৌখিকভাবে আমাদের হল বরাদ্দ বাতিল করে।”
বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, “যারা থানায় এসে উৎসব বন্ধ করার জন্য ফারুক সাহেবকে চাপ দেয় তাদের পরিচয় আমরা জানতে পারিনি। কারণ তাদের সাথে আমাদের সরাসরি কোনো কথা হয়নি। মাননীয় উপদেষ্টা যেহেতু দ্রুত অনুসন্ধান করে জানতে পেরেছেন যে নাট্যকর্মীদের একাংশ এই উৎসবের বিরোধিতা করে মহিলা সমিতি কর্তৃপক্ষের কাছে হল বরাদ্দ বাতিলের জন্য বেশ কিছুদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। সেহেতু মাননীয় উপদেষ্টা নিশ্চয় সেই সব দল ও ব্যক্তিদের নামও জেনেছেন। তাই দয়া করে থিয়েটারের স্বার্থে উপদেষ্টা যদি তাদের নাম প্রকাশ করেন তাহলে আমরা তাদের সাথে বসে আলোচনা করতে পারতাম।
মাননীয় উপদেষ্টার কাছ থেকে এই তথ্যটি পেয়ে আমরা অবাক হয়েছি, বিশ্বাস করতে পারছি না যে একজন প্রকৃত থিয়েটারকর্মী কি আসলেই একটা নাট্যোৎসব বন্ধ করার জন্য এমন জঘন্য কাজ করতে পারে?”
তারা আরও বলেন, মাননীয় উপদেষ্টাকে আরো জানাতে চাই, যে সব নাট্যদলের এই উৎসবে অংশগ্রহণ করার কথা, তাদের এই নাটকগুলি অতীতে মহিলা সমিতির মঞ্চে অভিনীত হয়েছে।
নাট্য উৎসব প্রসঙ্গে মাননীয় উপদেষ্টার কাছে ঢাকা মহানগর নাট্য পর্ষদের চাওয়া : “নাট্য উৎসব পুনরায় উদযাপনের জন্য বাংলাদেশ মহিলা সমিতিকে উপদেষ্টার পক্ষ থেকে বলে মিলনায়তন পুনঃবরাদ্দের ব্যবস্থা করা। রমনা থানাকে বলে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।”
Leave a Reply