জামান ভূঁইয়া
সোনার বাংলার মেঠো পথ
গেছে হারিয়ে ,
গাড়ি চড়ে ঘুরে বেড়াই
পাকা রাস্তা পেরিয়ে ।
সোনার বাংলায় নৌকা চড়ে
কত বেড়াতাম ,
নৌকায় বসে দাদীর সাথে
পান্তা মরিচ খেতাম ।
কত রকম পিঠা ছিল
মা’ বানাতেন ,
ভাই বোন সবাই মিলে
দাদী খাওয়াতেন ।
দাদীর আঁচল ধরে আমি
ঘুরতাম মেঠো পথে ,
মেলায় গিয়ে চড়তাম আবার
সেই যে রঙিন রথে ।
নদীর তীরে ধরতাম মাছ
কাদা মাটি মেখে ,
হাসতেন দাদি মধু মুখে
আমাদের হাল দেখে ।
ছোট বেলা চাচার বৌ
আনলাম পালকি চড়ে ,
এখন বৌ আনতে লাগে
গাড়ি ভাড়া করে ।
শীতের সকাল রোদ পোহাতাম
ঘরের পিরায় বসে ,
মাটির ঘর নাই কোথাও আজ
দালানের অংক কষে ।
মাঠ ভরা থাকতো ধান
অগ্রহায়ণ মাসে ,
সেই না ধানের গন্ধ পেয়ে
দাদা দাদি হাসে ।
এখন ক্ষেতে ফলায় শুধু
ইরি বোরো মিলে ,
নাইতো আর এখন দেশে
পদ্ম ফুল ঝিলে ।
গরু দিয়ে ধান মারাতাম
অগ্রহায়ণ মাসে ,
দাদী আমাদের ঘুর্না দেখে
পান চিবিয়ে হাসে ।
জোৎস্না ভরা রাত কোথায়
পাইনা খুঁজে আর ,
অট্রালিকায় বসে এখন
রাত করে পার ।
জলে ভরা নদী আমার
গেল কোথা চলে ,
খুঁজে তারে পাইনাতো আজ
কালো জল বলে ।
নদীর জলে লাফ দিতাম
সবাই এক সাথে ,
গোসল করতাম ইচ্ছে মত
জ্বর আসতো রাতে ।
ভরা নদীর তীর দিয়ে
রশী টানতো মাল্লা ,
মাল ভরা পন্য নিয়ে
নৌকা চলতো ভালা ।
কেরোসিনের বাতী দিয়ে
করতাম পড়া লেখা ,
ভাই বোন এক সাথে
পড়া হতো শেখা ।
খালি পায়ে হাটতাম সবাই
গায়ের মেঠো পথে ,
কি মজা লাগতো তখন
দৌড়াদৌড়ি করতে ।
খেলতাম তখন দাড়িয়া বাদা
ছেলে মেয়ে মিলে ,
সবাই তখন মজা করতাম
জোরে কিল দিলে ।
হায়রে আমার সোনার বাংলা
একি হলো তোর ,
কখন রাত কখন দুপুর
কখন হয় ভোর ।
দালান কোঠার ভিরে আমি
হারিয়ে ফেললাম সব ,
কোথায় গেল হারিয়ে আমার
পাখির কলরব ।
দোয়েল পাখির সীষে তখন
ভাঙতো আমার ঘুম ,
পড়তে যেতাম মসজিদ ঘরে
কাঁচা একটা রুম ।
হোগলা পেতে হুজুর তখন
বসে পড়াতেন ,
মোটা একটা লাঠি দিয়ে
কখনো পিটাতেন ।
তবু আমরা পড়তাম সবাই
আলিফ- বা-তা-ছা ,
মিথ্যা কথা বলছি না কিন্তু
সব কথা হাছা ।
এখন আর নাই দেশে
আগের পরিবেশ ,
সব কিছু কোথায় গেল
শেষ হচ্ছে দেশ ।
Leave a Reply