আহাদুজ্জামান আকাশ – কালিয়াকৈর(গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ২শ বছরের ঐতিহ্যবাহী কেশা পাগলের মেলা জমে উঠলেও অবশেষে উচ্ছেদ করা হলো মাসব্যাপী মাদকের বাজার। স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মেলার আড়ালে প্রকাশ্যে এ মাদকের বাজার উচ্ছেদ করেছে পুলিশ। এতে স্বস্তি বোধ করছেন এ মেলায় আগত হাজার হাজার দর্শনার্থী ও স্থানীয় লোকজন।
এলাকাবাসী, দর্শনার্থী ও মেলা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার ঢালজোড়া ইউনিয়নের চিনাইল এলাকায় বসে ঐতিহ্যবাহী কেশা পাগলের মেলা। শুনতে অবাক লাগলেও এ মেলা প্রায় ২শ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে। প্রতিবছর কেশব পাগলার আশ্রমে মাসব্যাপী এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় রয়েছে প্রতিটি শিশুদের জন্য নাগর দোলা, নৌকা দোলনা, মিষ্টির দোকান, খেলা, কসমেটিক্স, মাটির পুতুল, কাসা পিতল, খাট পালঙ্কসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে রাখা বাহারি সামগ্রি প্রসড়া। প্রতিদিন সকাল থেকে থাকে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড়। তবে মেলার মুল আকর্ষণ নানা সাজে বসে থাকা ভবের পাগলারা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে এই মেলায় জড়ো’ হন কেশা বক্ত ও সাথীরা। এসব পাগলারা এক মেলায় থেকে আরেক মেলায় চলে যায়। তারা তাদের তরিকার ভাইদের সঙ্গে দেখা করে এবং পাগলের নামে মানত করেন তারা। আর এ সুযোগে বিশাল এ মেলার আড়ালে বসে মাদকের বাজার। স্থানীয়দের জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের ম্যানেজ করেই প্রকাশ্যে বিক্রি ও সেবন হয় গাজা, হেরোইন, ইয়াবার মতো প্রাণঘাতী মাদক। এটা যেন মেলা নয়, যেন মাদকের বাজার! এই মেলাকে কেন্দ্র করেই প্রতিদিন মাদক বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিতো মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদকের সহজলভ্যতা থাকায় ওই মেলায় গিয়ে মাদকাশক্ত হয়ে আসছিল স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, উঠতি বয়সের যুবক ও বৃদ্ধরাও। এদিকে মাদকের এমন চাহিদা থাকায় এ মেলার আড়ালে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা সরব হয়ে উঠেছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও গত ১৫ জানুয়ারি থেকে এ মেলা শুরু হলে মেলা প্রঙ্গণে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এ মেলার পশ্চিম প্রান্তে খোলা জমিতে তাঁবু টানিয়ে শতাধিক স্টলে বসায় মাদক ব্যবসায়ীরা। সেখানে প্রকাশ্যে গাঁজা, হেরোইন ও ইয়াবাসহ প্রাণঘাতী মাদকদ্রব্য বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ উঠে। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ জানালেও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষুব্দ হয়ে উঠেন মেলায় আসা দর্শনার্থী ও স্থানীয় লোকজন। গত সোমবার সকালে মেলায় মাদকের বাজার বন্ধের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করে স্থানীয় লোকজন। খবর পেয়ে পুলিশ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ও মেলা কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এসময় তারা ওই মাদকের বাজার বন্ধ করতে এক দিনের আলটিমেটাম দিয়েছেন। ওই আলটিমেটামের পর আস্তানা উঠিয়ে না নিলে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মেলায় মাদকের বাজার উচ্ছেদ করেছে পুলিশ। এতে স্বস্তি বোধ করছেন এ মেলায় আগত হাজার হাজার দর্শনার্থী ও স্থানীয় লোকজন। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদকের সহজলভ্যতার কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাদকসেবীরা এসে জমায়েত হচ্ছেন। উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী, এমনকি বৃদ্ধরাও মাদক সেবনে লিপ্ত। প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের ম্যানেজ করেই প্রতিবছর এখানে মাদকের বাজার বসতো। এখন মাদকের বাজার উঠিয়ে দেওয়ায়ও সবাই স্বস্তিতে আছে। তবে ঐতিহ্যবাহী বিশাল এ মেলাটা সুন্দরভাবে পরিচালনা করার দাবী জানিয়েছেন দর্শনার্থীসহ স্থানীয় লোকজন।
এব্যাপারে ঢালজোড়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন জানান, মাদক ব্যবসার বিষয়ে ইউএনওকে অবহিত করেছিলাম। তবে লোকজনের বিক্ষোভের পর আলটিমেটাম দিয়ে মাদক আখড়া সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে মাদক বাণিজ্যে তার বা পরিষদের সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কালিয়াকৈর থানার সেকেন্ড অফিসার আতিকুর রহমান রাসেল জানান, খবর পেয়ে মেলার মাদক আখড়া উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী এ মেলা চলবে।