মো: নূরুল আমিন, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি: নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভার নাগরিক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। নিয়মিত ড্রেন পরিস্কার না করা, ময়লা আবর্জনা অপসরনে বিলম্ভ, পানির বিল ও হোল্ডিং ট্যাক্স বাকী, যত্র তত্র ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ, রাস্তায় পর্যাপ্ত বাতি না থাকা, ভাঙ্গাচোড়া সড়ক, খেলা-ধুলা ও বিনোদনের অপ্রতুলতাসহ নানা সমস্যায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে পৌরসভার সেবা কার্য্যক্রম। কাংখিত সেবা না পেয়ে পৌরবাসীরা হতাশ। তারা অনতি বিলম্ভে সকল সমস্যা সমাধানের দাবী জানিয়েছেন। ভূক্ত ভোগীরা জানান, কলাপাড়া পৌরসভার মাঝখান দিয়ে বয়ে চলা রহমতপুর খালটির হয়েছে বেহাল দশা। বিগত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে খালটি পরিস্কার না করার কারণে বিপুল পরিমান ময়লার স্তুপ জমে আছে খালটিতে।ফলে পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। অথচ শহরের বেশিরভাগ ভিআইপিদের বাসা বাড়ি ওই খালটির দু’পাশে অবস্থিত।কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পৌরশহরে অসংক্ষ ড্রেন তৈরি করা হলেও এ সকল ড্রেন নিয়মিত পরিস্কার করা হয় না।ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।ময়লা আর্বরজনা ফেলার নির্দিষ্ট যায়গা এবং ময়লা অপসারনের জন্য কর্মী থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে প্রায়শই যত্র তত্র ময়লা আর্বজনা পরে থাকতে দেখা যায়। এথেকে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বাড়ছে মশার উপদ্রেপ।মাঝে মধ্যে মশানাশক স্প্রে করা হয়। যা পর্যাপ্ত নয়।সড়ক গুলোতে বৈদ্যূতিক বাতি থাকলেও তার অধিকাংশই নষ্ট। সন্ধ্যা হতেই অধিকাংশ গলি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। এ সুযোগে বাসা বাড়িতে চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।বছরের পর বছর ধরে পৌর শহরের বেশিরভাগ রাস্তার বেহাল অবস্থা থাকলেও বিগত সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগ মূহুর্তে তড়িগড়ি করে কিছু রাস্তা মেরামতের কাজ করা হয়। পৌরবাসীর অবসর বিনোদন বিশেষ করে শিশু কিশোরদের খেলা ধুলার পর্যাপ্ত কোন ব্যবস্থা নেই কলাপাড়া পৌরসভায়। আন্ধার মানিক নদীর তীরে সরকারি হেলী প্যাডের চার পাশে পাকা রাস্তা এবং কিছু বেঞ্চের ব্যবস্থা থাকলেও রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য নেই কোন ছায়ার ব্যবস্থা। পৌর কর্তৃপক্ষ জানান, পৌর সভার প্রায় কোটি টাকার পানির বিল বাকি পড়েছে কিছু প্রভাবশালী মানুষের কাছে। হোল্ডিং ট্যাক্সও বাকী পড়েছে পড়েছে ৩১ লাখ ৪০ হাজার । বকেয়া এ বিলের তালিকায় নাম রয়েছে আওয়ামীলীগ নেতা, সাবেক কাউন্সিলর সহ একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির। পৌরসভা থেকে বারংবার নোটিশ প্রদান সহ মাইকিং করার পরও বকেয়া টাকা আদায় না হওয়ায় শীঘ্রই সংযোগ বিচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করাসহ আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে পৌর প্রশাসন।
পৌরসভার পানি শাখার বিল ক্লার্ক মো. আলমগীর হোসেন জানান, ১ম শ্রেনীর এ পৌরসভার পানি শাখার গ্রাহক সংখ্যা ৪ হাজার ৭ শ’ ২৫। এর মধ্যে ৩০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার জনপ্রতি ১০ ইউনিট পানি বিল মওকুফ। এছাড়া সংযোগ বন্ধ করা আছে ১৫২টি।
আলমগীর হোসেন আরও জানান, পানি শাখার ৭৪ লাখ ১৪ হাজার ৪’শ ৩১ টাকার বকেয়া বিল আদায়ে আমরা গ্রাহকদের নোটিশ প্রদান সহ শহরে মাইকিং করেছি। দীর্ঘ বছর বকেয়া পরিশোধ না করায় ৯টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পরও গায়ের জোরে অবৈধভাবে পানি ব্যবহার করছে কয়েকজন প্রভাবশালী। এদের মধ্যে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুব উদ্দিন ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মনির বেপারীর দাপটের কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।
পৌরসভার পানি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. অলিউল্লাহ জানান, পৌরসভার ৬০০ গ্রাহকের কাছে পানি শাখার বকেয়া বিল পাওনা রয়েছে। এদের মধ্যে ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সহোদর দুই কাউন্সিলরদের বাসভবনে তাদের মার নামে বকেয়া ৭৮ হাজার ৮শ’ ১৬ টাকা। উপজেলা আওয়ামীলীগের এক যুগ্ম সম্পাদক এর কাছে ৪৩ হাজার ১’শ ৮৮ টাকা। সাবেক এক মহিলা কাউন্সিলর এর স্বামীর কাছে ২০ হাজার ৩১ টাকা। এক শিক্ষক নেতার কাছে ৩৭ হাজার ৬’শ ৪০ টাকা। মো. সিরাজুল হক মুন্সী’র কাছে ৪৩ হাজার ১’শ ৪ টাকা পানি বিল পাওনা রয়েছে।
এদিকে খোদ পৌরসভা সভার পানি বিল বকেয়া রয়েছে ১৯ হাজার ৬’শ ৫০ টাকা। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত মুনসুর আহমেদের কাছে বকেয়া ৩৮ হাজার ৩শ’ ৮৬ টাকা। সাবেক প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নে মৃত রুহুল আমিনের কাছে বকেয়া ৫৫ হাজার ৬২ টাকা।
এ বিষয়ে কলাপাড়া পৌরসভার প্রশাসক ও ইউএনও মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ’প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে কাজ শুরু করেছি। বকেয়া পানি বিল ও পৌর কর আদায়ে নোটিশ প্রদান ও মাইকিং কার্যক্রম শেষ। এখন আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মো. রবিউল ইসলাম আরও বলেন, ’শহর পরিচ্ছন্ন রাখতে গরু-ছাগলের উপদ্রব রোধে খোয়াড় স্থাপনের উদ্দোগ নেয়া হয়েছে।’
Leave a Reply