সাভার উপজেলা প্রতিনিধি: আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় (হলুদ চিহ্ন) ও কনস্টেবল মুকুল (লাল চিহ্ন)। আশুলিয়া থানার পাশে একটি ভ্যানে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ, এমন একটি ভিডিও গেল কয়েক দিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে সবার নজরে আসে । ভিডিওতে থাকা দেয়াল, পোস্টার ও ঘটনাস্থল দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি আশুলিয়া থানার পাশের ঘটনা।
সেদিন ঘটনার সময় লাশের স্তূপ করা ভ্যানের আশপাশে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায় ভিডিওতে। তাদের মধ্যে আরও দুই পুলিশ সদস্য শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আশুলিয়া থানা ফটকে খোঁজ নিয়ে ও বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে ওই দুজনকে চিহ্নিত করা হয়।
তারা হলেন- আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুল। তবে কনস্টেবল মুকুলের ছবিতে এসআই আবুল হাসানের নাম ব্যবহার করে সামাজিকমাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। এর আগে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত হোসেন ও ডিবির কনস্টেবল রেজাউল করিমকে শনাক্ত করা হয়।
ভিডিওফুটেজ ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পুড়ে যাওয়া ছয়টি লাশের মধ্যে পাঁচটির পরিচয় শনাক্ত হয়। তারা হলেন, কালো ফুল শার্ট পরিহিত শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন সজল, নীল রঙের টিশার্ট আস সাবুর, ক্রিম রঙের টিশার্ট বায়েজিদ, তানজিল আহমেদ সুজয় ও দিনমজুর জার্সি পরিহিত আবুল হোসেন। তবে এখনও একজনের পরিচয় শনাক্ত হয়নি।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, দুজন পুলিশ সদস্যের একজন হাত ও একজন পা চেংদোলা করে ভ্যানে নিক্ষেপ করছেন। এর আগেই ভ্যানে লাশের স্তূপ করে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় তারা। সর্বশেষ লাশটি তুলে একটি ব্যানার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। শেষে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আরাফাত, আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুলকে দেখা যায়।
তারা লাশটি সামনে রেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কনস্টেবলকে নির্দেশনা দিতে দেখা যায় সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায়কে। এ ছাড়া ভিডিওটিতে কনস্টেবল মুকুল তার রাইফেলে গুলি লোড করার দৃশ্যও ধরা পড়ে। সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় ও কনস্টেবল মুকুলের খোঁজ নিতে আশুলিয়ায় থানায় গেলে তাদের পাওয়া যায়নি। তবে সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায়কে ১০ আগস্ট থেকে থানা এলাকায় দেখা গেছে।
থানার কার্যক্রমে তার উপস্থিতি ছিল বলে জানায় অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা। কনস্টেবল মুকুলের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায় বলে প্রাথমিক ভাবে জানা যায়। এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘আমার কোনো অস্ত্র নাই। ভিডিওতে থাকা ওই ব্যক্তি আমি না। এটা অন্য কেউ হবে।’
কনস্টেবল মুকুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এসআই আবুল হাসান বলেন, ‘আমি ৪ আগস্ট রাতে ডিউটি করে সকালে বাসায় চলে যাই। ৫ তারিখে আমি ডিউটিতে ছিলাম না।’
গত রবিবার আশুলিয়া থানা পরিদর্শনে এসে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমি দেখেছি। এটি এনালাইসিস করা হচ্ছে একই সঙ্গে ৪ সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্তও করা হয়েছে। আমরা তা অল্প সময়ের মধ্যে সবার সামনে তুলে ধরব।
বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকারীরা গত ৫ আগস্ট নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল এলাকায় জমায়েত হতে থাকেন। পরে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আন্দোলনকারীরা আশুলিয়া থানার দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে পুলিশ।
এ ঘটনায় ৫ আগস্ট ও চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ আগস্ট পর্যন্ত আশুলিয়ায় ২৮ জনের মৃত্যু হয় (ভ্যানে তোলা লাশের হিসাব বাদে)। এলাকাবাসী সহ সাধারণ মানুষ বলছেন অপরাধী যেই হোক তার কঠোর শাস্তি আমরা কামনা করছি।
কিন্তু উক্ত ঘটনায় কারো প্ররোচনায় উদ্দেশ্য প্রণীত নির্দোষ ব্যক্তিরা যেন মিথ্যা মামলায় ফেঁসে হয়রানির শিকার না হয়। সেই দিকে খেয়াল রেখে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক বলে দাবীও জানিয়েছেন তারা ।
সুত্রঃ প্রতিদিনের বাংলাদেশ।
Leave a Reply